পরিদর্শন: মুরগির নমুনা সংগ্রহ করছে পুরসভার দল। মঙ্গলবার, নিউ মার্কেটে। ছবি: সুদীপ ঘোষ
ভেড়িতে মাছের খাবারের জন্য যে মরা মুরগি ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ সেগুলিই কি এ বার উঠছে মানুষের পাতে। সাম্প্রতিক মুরগির মড়কের ঘটনায় এমন জল্পনাই শুরু হয়েছে মুরগি ব্যবসায়ীদের একাংশের মধ্যে। মঙ্গলবার অভিযানে বেরিয়ে নিউ মার্কেটের দোকান থেকেও মরা মুরগি উদ্ধার করেছে কলকাতা পুরসভা। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তা আরও বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, এখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু এখনই রাশ টানতে না পারলে পুরো পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
প্রসঙ্গত, কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন ব্লকে পোলট্রি ফার্মে হাজার হাজার মুরগি মারা গিয়েছে। গরম পড়ার মুহূর্তে মুরগির এই রোগকে ‘রানিখেত’ বলেই উল্লেখ করছেন পশু চিকিৎসকেরা। এতে রোগ প্রতিরোধ মাত্রা কমে গিয়ে মুরগি মারা যায়। একই সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ায় মরা মুরগি ফর্মালিনে ডুবিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে। শহরেও সেই ‘ব্যবসা’ চলছে কি না, তা জানতে এ দিন শহরের একাধিক দোকান, রেস্তোরাঁয় হানা দেয় কলকাতা পুরসভার দল।
যদিও রাজ্য পোলট্রি ফেডারেশনের সম্পাদক মদন মাইতি বলেন, ‘‘বছরের এই সময় এমনিতেই মুরগি মারা যায়। এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। কিন্তু একটা বিষয় এখানে বলার যে, মাছের ভেড়ির জন্য যে মরা মুরগি সংগ্রহ করেন ব্যবসায়ীরা, সেই মুরগিই কোনও কোনও জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। বিষয়টি নজরে এসেছে। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি।’’ যদিও মাছ ব্যবসায়ীদের অন্যতম এক সংগঠনের সম্পাদক শশীদুলাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘বিচ্ছিন্ন ভাবে এটা হতে পারে। কিন্তু মরা মুরগি ভেড়িতে খাওয়ানো হচ্ছে, এমন রিপোর্ট আমাদের কাছে নেই।’’
এ দিন নিউ মার্কেটে অভিযান চালাতে গিয়ে ওই মরা মুরগি বিক্রির ঘটনা নজরে পড়ে পুরসভার ভেজাল প্রতিরোধী টিমের। একটি দোকানে বিক্রির জন্য ডানা পালক-সহ একটি আস্ত মুরগি রাখা ছিল। ওই দোকান-সহ নিউ মার্কেটের একাধিক দোকান থেকে বেশ কয়েক কিলোগ্রাম মুরগির কাটা মাংস পেয়েছে পুরসভার টিম, প্রাথমিক ভাবে যা খাওয়ার অযোগ্য বলেই মনে করছেন পুরসভার টিমের সদস্যেরা। পাশাপাশি উল্টোডাঙায় কিছু রেস্তোরাঁ থেকে রান্না করা মুরগির মাংস তুলে আনা হয় পুরসভায়। যদিও যে দোকান থেকে ওই মরা মুরগি উদ্ধার করা হয়েছে, সেই দোকানদারের দাবি, মুরগিটি জ্যান্তই ছিল। মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ জানান, পুরসভার ল্যাবরেটরি ছাড়াও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। দু’এক দিনের মধ্যেই ওই সব মাংসে কিছু মেশানো রয়েছে কি না জানা যাবে।
তবে নিয়মিত প্রতিষেধক প্রয়োগে মুরগির মড়ক ঠেকানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু সেই প্রতিষেধক সম্পর্কে পোলট্রি চাষীরা সচেতন নন বলেই জানাচ্ছেন রাজ্যের প্রাণী সম্পদ দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘পোলট্রি মুরগি পালনে আরও বেশি করে সচেতনতা বাড়াতে এ বার বেলগাছিয়ার প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকদের রাজ্যের ব্লকে ব্লকে পাঠানো হবে।’’
বেলগাছিয়ার প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুনীত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পোলট্রি মুরগির জন্মের পাঁচ দিনের মধ্যে প্রথম প্রতিষেধক দিতে হয়। তার ছ’সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় বার প্রতিষেধক দেওয়া জরুরি। এই প্রতিষেধক ঠিকঠাক দেওয়া হলে মুরগির ভাইরাসঘটিত রোগ (রানিখেত) ঠেকানো সম্ভব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy