আপাতত যেন যুদ্ধ-বিরতি! মানস ভুঁইয়ার খাস তালুক সবংয়ে দাঁড়িয়েই তাঁর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের চর্চায় জল ঢালার চেষ্টা করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র, নিহত ছাত্রপরিষদ কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ জানার পরিবারের সঙ্গে শুক্রবার দেখা করতে এসেছিলেন অধীরবাবু। স্থানীয় বিধায়ক মানসবাবু তাঁর সঙ্গী না হওয়ায় জল্পনা চলছিলই। কিন্তু, এ দিন কৃষ্ণপ্রসাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে অধীরবাবু বলেন, ‘‘সবং কংগ্রেসের সূত্রেই খ্যাত। মানস ভুঁইয়াকে বার বার বিধায়ক করে পাঠান এই এলাকার মানুষ। কংগ্রেসের শক্তি, সংগঠন রয়েছে বলেই বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করতে চাইছে। এলাকার বিধায়ক আইনি ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে এই খুনের সঠিক তদন্তের জন্য লড়াই করছেন। আমরা এই লড়াইয়ের অংশীদার।”
কিন্তু, মানসবাবু কেন এলেন না? এ বার অধীরবাবুর জবাব, “উনি তো এই মামলা নিয়েই কলকাতা হাইকোর্টে গিয়েছেন বলে সকলে জানেন। তা-ও এই প্রশ্ন কেন? আপনারা কি এটা নিয়েও বড় করে অধীর-মানসের দূরত্ব লিখবেন?” এ বার পাশে থাকা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেসের সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া চেঁচিয়ে বলে ওঠেন, “আমাদের দলে কোনও বিভেদ নেই! প্রদেশ সভাপতি এসেছেন। সব কর্মীই দলের কাজে রয়েছেন।” বিধানসভায় আশ্বাসন কমিটির বৈঠকের ফাঁকে মানসবাবুও এ দিন প্রদেশ সভাপতির সফরের খবর রেখেছেন। তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে অধীরবাবুর বার্তা শুনে সবংয়ের বিধায়কও বলেছেন, ‘‘প্রদেশ সভাপতি নিহত ছাত্রের বাড়িতে গিয়েছেন, ঠিকই আছে। এর পরে ২৪ অগস্ট সবংয়ে স্মরণসভায় আমরা তাঁকে আমন্ত্রণ করেছি। সে দিনও তাঁকে চায় সবংয়ের মানুষ।’’
কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা এ দিন বিশাল বাইক মিছিল করে অধীরবাবুকে দাঁতরদা-বাটিটাকি গ্রামে নিয়ে যায়। কলকাতা থেকে যাওয়ার পথে কংগ্রেসের কে কোথায় প্রদেশ সভাপতিকে স্বাগত জানাতে থাকবে, সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন মানসবাবুই। দিনভর দফায় দফায় অধীর-মানসের বার্তা বিনিময়ও হয়েছে। দু’জনেই দু’জনকে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, কে কাকে ভুল বুঝছেন! এ সব পর্ব পেরিয়ে সবংয়ের গ্রামে পৌঁছে নিহত কৃষ্ণপ্রসাদের বাবা ভানুভূষণ জানা ও মা যমুনাদেবীর সঙ্গে কথা বলেন অধীরবাবু। নিহতের পরিজনেরা খুনের ঘটনার প্রকৃত তদন্তের জন্য অধীরবাবুর সাহায্য চান। অধীরবাবুও তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
পরে তেমাথানি মোড়ে পিক-আপ ভ্যানের উপরে হাত-মাইক নিয়ে পথসভা করেন অধীরবাবু। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ছাত্র মৃত্যুর ঘটনাকে ভুল পথে পরিচালনা করছেন। নানা অছিলায় ছাত্র খুনের ঘটনায় খুনিদের আড়ালের চেষ্টায় ময়দানে নেমেছেন।” জেলার পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষকে ‘ভারতী বন্দ্যোপাধ্যায়’ বলে সম্বোধন করে তাঁর কটাক্ষ, “উনি তো পুলিশ সুপার নন, যেন মমতার সহোদর বোন! পুলিশ সুপার কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের দালালি করলে ভারতশ্রী পাবেন?”
সবংয়ের ওই কলেজের আরও তিন শিক্ষাকর্মী সুকুমার পাত্র, চিত্তরঞ্জন ভুঁইয়া, অঞ্জন রাউতকে এ দিন আবার ডেকে পাঠায় পুলিশ। এর আগে স্বপন ভৌমিক ও ইন্দ্রজিৎ ঘোড়ইকে ডেকে পাঠিয়ে আদালতে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ। এ প্রসঙ্গে অধীরবাবুর অভিযোগ, “কলেজের সাধারণ কর্মীদের কোর্টে নিয়ে গিয়ে পুলিশ সুপার জোর করে স্বীকারোক্তি দেওয়াচ্ছেন।” মানসবাবুরও বক্তব্য, ‘‘১৬৪ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কেউ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জবানবন্দি দিতেই পারেন। কিন্তু, কলেজের দুই কর্মী ৩৬ ও ৫০ ঘণ্টা বেপাত্তা ছিলেন। তার পরে জবানবন্দি এবং তখন থেকে তাঁদের মুখ বন্ধ! বোঝাই যাচ্ছে, জোর খাটানো হয়েছে!’’
অধীরবাবুর সঙ্গেই এ দিন সবংয়ে এসেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণা দেবনাথ, প্রদেশ নেতা পার্থ বটব্যাল, খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে প্রমুখ। আপাতত মানসবাবুর সঙ্গে সন্ধির বার্তা দেওয়ার পরে এখন প্রশ্ন, কংগ্রেসের বাংলা বন্ধের পরের দিন মানসবাবুর পৌরোহিত্যে দলের সংখ্যালঘু সম্মেলনে কি দেখা যাবে প্রদেশ সভাপতিকে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy