তৃণমূলে থাকা অধিকারী পরিবারের তিন রাজনীতিক। গ্রাফিক- তিয়াসা দাস।
বুধবার কাঁথির সভায় যাননি। কিন্তু নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় কী করবেন? যাবেন নাকি যাবেন না! কাঁথির ‘শান্তিকুঞ্জ’ বাড়ির তিন অধিকারীর মনে বুধবার থেকেই অশান্তি। এক অধিকারী বিজেপি-তে গিয়েছেন। বাকি তিন অধিকারী এখনও তৃণমূলে। সবচেয়ে সিনিয়র অধিকারী তো জেলা সভাপতি। বুধবার শারীরিক অসুস্থতার কারণে দলের সভা এড়িয়ে গিয়েছেন বটে। কিন্তু ৭ জানুয়ারি খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সভা! জেলা সভাপতি কী করে এড়িয়ে যাবেন! কিন্তু গেলেও বিড়ম্বনা। ছেলের বিরুদ্ধে বাছা-বাছা বিশেষণ শুনতে হবে।
বৃহস্পতিবার কাঁথিতে মহামিছিল করবেন শুভেন্দু অধিকারী। মিছিলের পর সভাও হওয়ার কথা। তার আগেই কাঁথি শহরে মিছিল এবং সভা করে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব। সহকর্মী তথা দলের সাংসদ সৌগত রায় যখন তাঁর পুত্রকে বলছেন ‘বিশ্বাসঘাতক’, বলছেন ‘কাঁথি কোনও পরিবারের জমিদারি নয়’, তখন বাড়িতে বসে তা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছেন প্রবীণ সাংসদ শিশির অধিকারী। যখন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলছেন, ‘‘শুভেন্দু এতদিন আমার সহকর্মী ছিল ভাবতেও লজ্জা হয়!’’ তখন তা শুনতে পেয়েছেন তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী এবং কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান সৌম্যেন্দু অধিকারী। বলা বাহুল্য, তাঁদের ভাল লাগেনি। প্রবীণ শিশির ঘনিষ্ঠমহলে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। যুবক দিব্যেন্দু ক্ষুণ্ণ। সম্ভবত ক্ষুব্ধও। তার পরেই রাতে ঘোষিত হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতার কর্মসূচি— নন্দীগ্রামে ৭ জানুয়ারি জনসভা। তার পর থেকেই দোলাচল বাড়ছে শান্তিকুঞ্জে।
আতান্তরে পড়েছেন তিন অধিকারী।
শুভেন্দুর দলত্যাগের পর অধিকারীদের দুর্গ কাঁথিতেই কামান দাগা শুরু করেছে তৃণমূল। বুধবারের সভা ছিল তার প্রথম পদক্ষেপ। এমনিতেই পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে শিশিরদের বরাবরের বিরোধী রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলের কাছে তিনি বেশি গুরুত্ব পেতে শুরু করেছেন। পক্ষান্তরে, শিশির-দিব্যেন্দু-সৌম্যেন্দুর সঙ্গে ক্রমশ দূরত্ব বাড়ছে দলের। বুধবারের সভার পোস্টার-ফেস্টুনে কোথাও তাঁদের নাম দেওয়া হয়নি। অখিল জানিয়েছেন, দলের প্যাডে তিনি আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিলেন শিশিরকে। কিন্তু তিনি আসেননি। শিশির জানিয়েছেন, অসুস্থতার কারণে তিনি বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না। দিব্যেন্দু অন্তত প্রকাশ্যে কোনও কারণ দেখাননি। কিন্তু তিনিও সৌগতদের সভায় গরহাজির থেকেছেন।
আরও পড়ুন: ‘জল্পনা’র কিছু নেই, দাবি মন্ত্রী রাজীবের
কাঁথির পর এ বার সরাসরি শুভেন্দুর রাজনৈতিক ধাত্রীগৃহ নন্দীগ্রামে তোপ দাগতে চলেছেন মমতা। ঘটনাচক্রে, ওই একইদিনে শুভেন্দুরও সভা করার কথা রয়েছে নন্দীগ্রামেই। অতএব, মমতা-শুভেন্দু সেদিন ‘সম্মুখসমরে’ অবতীর্ণ হবেন। সেই যুদ্ধক্ষেত্রে কোনদিকে দাঁড়াবেন তিন অধিকারী? দোলাচল তা নিয়েই। শিশিরের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বক্তব্য, তিন অধিকারী আপাতত মমতার সভা এড়িয়ে যাওয়ার কথাই ভাবছেন। কিন্তু একইসঙ্গে তাঁদের ভাবাচ্ছে সভা এড়িয়ে যাওয়ার পরবর্তী অভিঘাত। দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর সভা এড়িয়ে গেলে সরাসরি ‘বিচ্ছেদ’-এর বার্তা দেওয়া হয়। শাসকদলের সাংসদ (শিশির-দিব্যেন্দু দু’জনেরই সাংসদপদের মেয়াদ ২০২৪ পর্যন্ত) হয়ে সেই দলেরই বৃহত্তম সভায় গরহাজির থাকা নিঃসন্দেহে স্পষ্ট সঙ্কেত দেবে। আবার মমতার সভায় তিনি নিজে-সহ একের পর এক বক্তা শুভেন্দুকে লক্ষ্য করে যে বাছা বাছা বিশেষণ প্রয়োগ করবেন, সেটা মুখ বুজে মেনে নেওয়াও তাঁদের পক্ষে বিড়ম্বনার।
এর সঙ্গেই রয়েছে বৃহস্পতিবার শুভেন্দুর মিছিল ও সভা। সেখানে আবার শুভেন্দু তৃণমূলকে আক্রমণ করবেন কোনও রাখঢাক না করেই। যে তৃণমূলের টিকিটে শিশির-দিব্যেন্দু সাংসদ। যে তৃণমূলের টিকিটে জিতে সৌম্যেন্দু কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান। ফলে শুভেন্দুর আক্রমণও তাঁদের পক্ষে বিড়ম্বনার বৈকি!
নন্দীগ্রামে মমতার সভার অবশ্য এখনও দু’সপ্তাহ দেরি। তার মধ্যেই মনস্থির করতে হবে তিন অধিকারীকে। এখন দেখার, আগামী দু’সপ্তাহে পূর্ব মেদিনীপুরে অধিকারী পরিবারের রাজনীতি কোনদিকে গড়ায়। দেখার, শান্তিকুঞ্জের তিন অধিকারী শ্যাম রাখেন না কুল।
আরও পড়ুন: শুধু আবেদনপত্র নয়, ছবি তুলে আঙুলের ছাপ দিলে তবেই স্বাস্থ্যসাথী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy