Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Aindrila Sharma

কোমায় চোখ মেলেছে ও, এখনও কত কাজ বাকি! আনন্দবাজার অনলাইনে লিখলেন ঐন্দ্রিলার মা

হাসপাতালে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষছেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। তিনি এখন কোমায়। এই আবহে আনন্দবাজার অনলাইনে নিজের মনের কথা লিখলেন ঐন্দ্রিলার মা শিখা শর্মা।

মা শিখা শর্মার সঙ্গে অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা।

মা শিখা শর্মার সঙ্গে অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। ছবি সংগৃহীত।

শিখা শর্মা, অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার মা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২২ ১২:২২
Share: Save:

ঐন্দ্রিলা হাসপাতালে আছে। ও এখন কোমায়। বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থে আমাদের বাড়িটা এখন ফাঁকা। আমি এখন টালিগঞ্জে আছি। এই বাড়িতে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। এখন সকলে রয়েছে হাসপাতালে। আমিই একা বাড়িতে। আমার মনে পড়ছে, ছোটবেলায় কত ছটফটে ছিল ঐন্দ্রিলা। কিন্তু, এখন মেয়েটার উপর এত ঝড়ঝাপটা যাচ্ছে যে, মা হিসাবে আমি আর মেনে নিতে পারছি না। আমার মন ভেঙে গিয়েছে। ওর মা হিসাবে এত ঝঞ্ঝা আর আমি সহ্য করতে পারছি না। এ বার চিকিৎসকরা ওকে দেখে জানিয়েছেন, ওর দেহে কোথাও চোট লেগেছে। তার ফলে এমনটা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি জানি ওর কোথাও চোট লাগেনি। আর চোট লাগলে ও ঠিক বলত। ও সব কথা আমাকে বলে, কিছুই লুকোয় না। কিন্তু কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল তা আমি জানি না! আমার এখন ঈশ্বরকে ডাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই।

নানা দুর্ভাবনার মধ্যেই আজ সকালে একটা ভাল খবর পেয়েছি। ওকে দেখছেন চিকিৎসক নিলয় বিশ্বাস। আজ চিকিৎসকরা ফোন করে আমাদের জানিয়েছেন, গত কাল রাত ১১টা ৫৫ নাগাদ ও চোখ খুলেছিল। শুনলাম হাতও নাড়িয়েছে। তবে পা নাড়িয়েছে কি না জানি না। এটুকুই আমি হাসপাতাল থেকে জানতে পেরেছি। এটাই আমার কাছে সান্ত্বনার। এটা হয়ে থাকলে খুব ভাল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওর জ্ঞান ফিরেছে এটা চিকিৎসকরাও বিশ্বাস করতে পারছেন না। একটা ছটফটে মেয়ের যে কী হয়ে গেল! আমার কিছু বলার নেই।

ও খালি বলত, ‘‘মা আমাকে অনেক কাজ করতে হবে।’’ ও সবসময় বলত, ‘‘আমাকে অনেক বড় হতে হবে।’’ ও সমাজসেবা করতে চাইত। আমার মেয়ে বহরমপুরে অনাথ আশ্রম করবে বলে স্থির করেছিল। কিন্তু, আচমকা সব যেন থমকে গেল। অথচ ওর কোনও শরীর খারাপ ছিল না। একটি ছায়াছবির জন্য ওর আজ গোয়া যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আচমকা কী যে ঘটে গেল জানি না। যে দিন মেয়েটা অসুস্থ হয়ে পড়ল, সে দিন ও প্রথমে আমাকে বলল, ‘‘মা, আমার ডান হাত উঠছে না।’’ তার পর দেখলাম, ওর ডান পাটা নড়ছে না। বলতে বলতে ৫-৭ মিনিটের মধ্যে ওর গোটা দেহে পক্ষাঘাত হল। ও বমি করতে শুরু করল। তখন আমি দারুণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। সব্যসাচীকে ফোন করে বললাম, ‘‘গাড়িটা নিয়ে এসো।’’ ও গাড়ি নিয়ে এল। তার পর ওকে সকলে মিলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। হাসপাতালে ভর্তি করার সঙ্গে সঙ্গে ওকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানো হল। চিকিৎসকরা আমাদের বললেন, ‘‘ওর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গিয়েছে। তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচার করতে হবে’’ অস্ত্রোপচারের পর ওকে আইসিইউ-তে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের তরফে আমাদের বলা হয়েছে ৪৮-৭২ ঘণ্টা না গেলে কিছু বলা যাবে না। এর মধ্যেই আমরা খবর পেয়েছি, ও চোখ খুলেছে। এটাই আমাদের কাছে বিরাট খবর। এটাই আমাদের কাছে আশার আলো।

ঐন্দ্রিলার কথা শুনে আমার বড় মেয়ে ঐশ্বর্যা দিল্লি থেকে রাত ৩টে নাগাদ চলে এসেছে এখানে। এখন আমার স্বামী, মেয়ে এবং সব্যসাচী সকলেই হাসপাতালে আছে। সব্যসাচী ঐন্দ্রিলাকে কত ভালবাসে। গত তিন দিন ধরে হাসপাতালেই পড়ে আছে ছেলেটা। ও এখন পাগলের মতো হয়ে গিয়েছে। জানি না ও কী খাচ্ছে বা স্নান করছে কি না। আমার স্বামী বললেন, ও হাসপাতাল চত্বরে একটা জায়গায় পড়ে আছে। কেউ ওকে কিছু বললে, সব্যসাচী বলছে, ‘‘আমাকে নিয়ে অত চিন্তা করতে হবে না।’’ আমাদের মতো ওর উপর দিয়েও বিরাট ঝড় যাচ্ছে এখন।

অন্য বিষয়গুলি:

Aindrila Sharma Actress Coma
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy