—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কয়েকশো শয্যা রয়েছে হাসপাতালে। সূত্রের খবর, তার মধ্যে মাসে মাসে ১০-১৫টি খাট নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে রিপোর্ট তৈরি করে থাকেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর বদলে নতুন খাটও কেনা হয় বলে তদন্তকারীদের হাতে নথি এসেছে। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, হাসপাতালের বিভিন্ন ধরনের শয্যার জন্য আলাদা ধাঁচের খাটই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেনেন বলে নথি মিলেছে। কিন্তু নানা কিসিমের খাটের এই ‘রসিদ’ আদতে ভুয়ো বলে সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ এসেছে। সব মিলিয়ে বেড, ওষুধ, অস্ত্রোপচার এবং চিকিৎসার সরঞ্জাম খাতেই আর জি করে মাসে অন্তত ৭-৮ কোটি টাকার দুর্নীতির কারবার চলত বলে তদন্তকারীদের প্রাথমিক হিসেব।
দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালে তিন ধরনের খাট কাজে লাগে। সাধারণ রোগীদের যে ধরনের শয্যায় ভর্তি রাখা হয়, তার এক-একটি ‘বেডের’ দাম ৩০-৪০ হাজার টাকা। কিছু বিশেষ চিকিৎসার জন্য ভর্তি রোগীর ‘বেডের’ দাম ৭০-৮০ হাজার টাকা। আবার অস্ত্রোপচার কক্ষে ব্যবহৃত বিশেষ প্রযুক্তি বিশিষ্ট খাটের দাম প্রায় আড়াই-তিন লক্ষ টাকা। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, মাসে মাসে এমন ১৫-২০টি বিভিন্ন ধরনের বেড কেনা হয়েছে বলে ভুয়ো নথি তৈরি করে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ধারাবাহিক ভাবে দুর্নীতি করা হয়েছে।
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, প্রযুক্তি বিশিষ্ট মহার্ঘ খাট পুরনো বা বিকল হলে তা কর্তাদের বিশ্বস্ত সংস্থাকে দিয়ে মেরামত করিয়ে ফের ব্যবহার করা হত। দেখানো হত, নতুন খাট কেনা হয়েছে। কসবার একটি সংস্থা এই দুর্নীতির দোসর বলে তদন্তে জানা গিয়েছে বলে সূত্রের দাবি। এক সিবিআই কর্তা বলেন, “এই ভাবে তিলে তিলে কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। অস্ত্রোপচারের নানা সরঞ্জাম কেনার ভুয়ো নথি তৈরি করেও ধাপে ধাপে প্রায় কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে আর জি করে।” তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বা স্যালাইন ব্যবহার করেও বিপুল খরচ দেখানোর অভিযোগ মিলছে।
সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “আর জি করের দুর্নীতিতে ধৃত প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী বিপ্লব সিংহ, সুমন হাজরা মিলে এই ওষুধ দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন। সুমনের ‘হাজরা মেডিক্যাল’ সংস্থা মারফত ওষুধ কেনার নথি রয়েছে। যার বেশির ভাগটাই আসলে কেনা হত না। কিন্তু কাগজে-কলমে কেনা হয়েছে দেখানো হত।” তদন্তকারীদের একাংশ দেখেছেন, মেয়াদ-উত্তীর্ণ ওষুধের তারিখ বদলে ব্যবহার করা হত। তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, ‘‘মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে ওষুধের কার্যকারিতা কমতে থাকে। কিন্তু কয়েক মাস পর্যন্ত তা ব্যবহার করা যায়। আকছার এমন ওষুধ কাজে লাগানো হত।”
তবে সিবিআই সূত্রে দাবি, একা সন্দীপকে অভিযোগে বিদ্ধ করা যায় না। হাসপাতালের নানা বিভাগের প্রধানদের কী ভূমিকা, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরই বা আর জি করের নথি যাচাইয়ে কী করত, তা খতিয়ে দেখছে সিবিআই। তবে কি একটা ‘চেন সিস্টেম’-এ আর জি করে দুর্নীতি চক্র চলত? তদন্তকারীদের কথায়, আফসার আলিকে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সন্দীপের দেহরক্ষী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। তিনি সন্দীপের সঙ্গে-সঙ্গে থাকতেন। আবার স্বাস্থ্য দফতরের উঁচুতলাতেও তাঁর চলাফেরা ছিল। আর জি করের সার্বিক অনিয়মে আফসারের কী ভূমিকা, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা তা-ও দেখছেন।
সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, ‘‘সন্দীপ-সহ চার জনকে ধরলেও বড় সিন্ডিকেটের হদিস মিলেছে। রুইকাতলা থেকে চুনোপুঁটির তালিকা তৈরি হচ্ছে। হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, স্বাস্থ্যকর্তা বা প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা— নানা জনের ভূমিকা নিয়েও বহু প্রশ্ন রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy