Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Water Crisis in Sandeshkhali

‘ভোটের কল’ শুকিয়ে আছে, জল নেই এক ফোঁটা! জমি ‘ডাকাতি’র সঙ্গে আর এক নির্জলা সত্যি সন্দেশখালির

বেড়মজুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে পানীয় জলের সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা। সারা বছর খাওয়ার জন্য বাজার থেকে কেনা জলের উপর নির্ভর করে থাকতে হয় তাঁদের।

গর্ত খোঁড়াই সার হয়েছে, টিউবওয়েল বসেনি বেড়মজুরের বারিকপাড়ায়।

গর্ত খোঁড়াই সার হয়েছে, টিউবওয়েল বসেনি বেড়মজুরের বারিকপাড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

সারমিন বেগম
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৫৩
Share: Save:

কল আছে, জল নেই। কোথাও কোথাও আবার নেই কলও। মরচে পড়েছে সরকারের বসানো টাইমকলে। বিভিন্ন জায়গায় টিউবওয়েলের জন্য গর্ত খোঁড়া হলেও তা বসানো হয়নি। এমন দৃশ্যই নজরে পড়বে সন্দেশখালির বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে। আশপাশে চার-চারটি নদী থাকা সত্ত্বেও জলসঙ্কটে ভুগছে সন্দেশখালির বহু এলাকা। শুক্রবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠা বেড়মজুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকারও একই অবস্থা।

গত কয়েক দিন ধরে বার বার অশান্ত হয়ে উঠেছে সন্দেশখালি। স্থানীয় তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ এবং তাঁর ভাই সিরাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর। কারও অভিযোগ, জোর করে জমি কেড়ে নেওয়ার। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, শারীরিক নির্যাতন বা মারধরের। তবে এলাকায় জলসঙ্কট সংক্রান্ত সমস্যার অভিযোগ করেছেন প্রায় সকলেই।

সাইকেল নিয়ে জল আনতে যাচ্ছে বেড়মজুরের এক কিশোর।

সাইকেল নিয়ে জল আনতে যাচ্ছে বেড়মজুরের এক কিশোর। ছবি: সারমিন বেগম।

বেড়মজুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই দাবি, দীর্ঘ দিন ধরেই জলের সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা। সারা বছর খাওয়ার জন্য প্রাকৃতিক জলের বদলে কেনা পানীয় জলের উপর নির্ভর করে থাকতে হয়। যাঁদের জল কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই, তাঁরা জল আনেন অনেকটা দূর থেকে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই জল ভরে আনার বড় বড় পাত্র রয়েছে। সকাল হলেই সেই পাত্র সাইকেলে চাপিয়ে জল আনতে যান বাড়ির পুরুষ সদস্যেরা।

বেড়মজুরের কাঠপোল থেকে বাঁ দিক বরাবর কাঁচা-পাকা রাস্তা ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলেই বারিকপাড়া। স্থানীয়দের দাবি, এই পাড়ায় জলের সমস্যা সব থেকে বেশি। স্থানীয়দের অধিকাংশই জল কিনে খান। ভ্যানে করে বাড়ি বাড়ি এসে জল দিয়ে যান ব্যবসায়ী। কুড়ি লিটার জল কিনতে লাগে ১৫ টাকা!

কিন্তু কেন জল নিয়ে এত সমস্যা এলাকায়? বারিকপাড়া এলাকার মানুষদের কথায়, ওই এলাকায় টিউবওয়েল বসানো হয়েছিল বছর পঞ্চাশেক আগে। বহু বছর আগে থেকেই তাতে জল আসা বন্ধ হয়েছে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের সময় সরকারের তরফে ‘টাইমকল’ বসানো হয়েছিল। স্থানীয়দের দাবি, ভোটের কয়েক দিন জল এলেও এখন আর সেই কলে আসে না। দীর্ঘ দিন অব্যবহারের কারণে সেই কলের মুখে মরচে পড়েছে। এক জায়গায় আবার রাস্তার ধারে জলের কলের পাইপ বসানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা না হওয়ার কারণে স্থানীয়রা বিরক্ত হয়ে সেই পাইপ তুলে নিয়েছেন। কয়েকটি জায়গায় টিউবওয়েলের জন্য গর্তও খোঁড়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে, গোটা অঞ্চলে হাতেগোনা এক-দু’টি বাড়িতে টিউবওয়েল রয়েছে। তবে সেগুলিও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বসানো হয়েছে।

এই জায়গাতে বসানো হয়েছিল জলের পাইপ। পরে তা খুলে নেন গ্রামবাসীরা।

এই জায়গাতে বসানো হয়েছিল জলের পাইপ। পরে তা খুলে নেন গ্রামবাসীরা। ছবি: সারমিন বেগম।

স্থানীয় বাসিন্দা রাহুল বিশ্বাস বলেন, ‘‘টিউবওয়েল ছিল প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের সময় টাইমকল বসে। কিন্তু বেশি দিন জল পাইনি। খাবার জল আমাদের কিনে খেতে হয়। বাকি সব কাজের জন্য পুকুরের জল ব্যবহার করতে হয়।’’

বারিকপাড়ার স্থানীয়দের অভিযোগ, পানীয় জল, রাস্তা-সহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বার বার গ্রাম পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। দ্বারস্থ হয়েছেন স্থানীয় নেতাদেরও। কিন্তু তাঁদের বলা হয়েছে, বিজেপি করার ‘দোষে’ সমস্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে তাঁদের। অভিযোগ, নির্বাচনের সময় শাসকদলকে ভোট দিলে এবং ভোট দেওয়ার সময় পাশে দাঁড়াতে দিলে সমস্যা দূর হয়ে যাবে বলেও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

স্থানীয়দের একাংশের দাবি, গ্রামের মধ্যে টিউবওয়েল বসালেও বিশেষ লাভ হবে না। কারণ, ভূগর্ভস্থ জলস্তর কমে যাওয়ার কারণেই নাকি গ্রামের এই দুর্দশা। সন্দেশখালির চারপাশে রায়মঙ্গল, কালিন্দী, ছোট কলাগাছি এবং ডাঁসা— এই চার নদী বয়ে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু কাছেই সমুদ্র হওয়ায় জোয়ারের সময় সমুদ্রের জল নদীগুলিতে প্রবেশ করে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সেই নদীগুলির জল নোনতা। কোনও ভাবেই পানযোগ্য নয়। গ্রামের মধ্যে যে কয়েকটি পুকুর রয়েছে, তার মধ্যে বেশির ভাগই কেটে মাছের ভেড়ি তৈরি করা হয়েছে। ফলে সেই জলও ব্যবহার করা যায় না। জামাকাপড় কাচা,বাসন মাজাও চলে পুকুরের জলে।

(বাঁ দিকে) বহু বছর আগে বসানো টিউবওয়েল। (ডান দিকে) গ্রামের মরচে পড়ে যাওয়া টাইম কল।

(বাঁ দিকে) বহু বছর আগে বসানো টিউবওয়েল। (ডান দিকে) গ্রামের মরচে পড়ে যাওয়া টাইম কল। ছবি: সারমিন বেগম।

স্থানীয় এক বৃদ্ধার কথায়, ‘‘এ গ্রামে টিউবওয়েলের জন্য অনেক গর্ত খোঁড়া হয়েছিল। লাভ হয়নি। আমার বাড়িতে টিউবওয়েল রয়েছে তবুও জল ওঠে না। জলস্তর কমে যাওয়ার কারণেও আমাদের এত জল সমস্যা।’’

স্থানীয় অনেকের মতে, সন্দেশখালিতে শুরু হওয়া তাপ-উত্তাপ হয়তো এক দিন কমে যাবে। এলাকাও শান্ত হবে। কিন্তু জলের সমস্যা থেকেই যাবে। ১৫ টাকা করে ২০ লিটার জলই কিনে খেতে হবে তাঁদের।

অন্য বিষয়গুলি:

sandeshkhali Sandeshkhali Violence Sandeshkhali Incident Water crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy