দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এর ছাত্রসংসদ ভোটে সাম্প্রতিক সময়ে রেকর্ড গড়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর ছাত্রশাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। রবিবার ছাত্র সংসদের পদাধিকার প্যানেলের মূল তিনটি পদে বাম ছাত্রদের একাংশের জোট জিতলেও যুগ্ম সম্পাদক পদে জিতেছেন এবিভিপি-র বৈভব মীনা। শুধু তা-ই নয়, ৪২টি কাউন্সিলর পদের ২৩টিতে জিতেছে বিদ্যার্থী পরিষদ। যাকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে পরবর্তী লক্ষ্যও ঠিক করে ফেলেছে তারা। এবিভিপি-র দক্ষিণবঙ্গের রাজ্য সম্পাদক অনিরুদ্ধ সরকার স্পষ্টই বলছেন, ‘‘জেএনইউ হয়েছে। এ বার যাদবপুরও হবে।’’ অর্থাৎ পরবর্তী লক্ষ্য যাদবপুর। যাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা বলে থাকেন ‘যদুবংশ’।
সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সহ-সভাপতি পদে জিতেছে বামেদের ছাত্র জোট। যে জোটে ছিল আইসা এবং ডিএসএফ। কিন্তু এই জোটে যোগ দেয়নি সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই। ভোটের হিসাব বলছে, যে তিনটি পদে বামেরা জিতেছেন, সেখানেও ব্যবধান অল্পই। আবার এসএফআই যে ভোট পেয়েছে, তা যদি জোটের সঙ্গে যোগ হত, তা হলে বিদ্যার্থী পরিষদ এতটা ‘দাগ’ কাটতে পারত না। এবিভিপি-র অনিরুদ্ধ অবশ্য বলছেন, ‘‘ওদের তো জোট ছিল। ভাঙতে কে বলেছিল? ওরা ওদেরটা বলতে পারবে। তবে জেএনইউয়ে যেমন হয়েছে, বামেদের ঘর আমরা সে ভাবে যাদবপুরেও ভাঙব।’’ জেএনইউয়ের প্রাক্তন নেত্রী তথা এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক দীপ্সিতা ধরের বক্তব্য, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক রায় এবিভিপি-র বিরুদ্ধেই। তবে সার্বিক ঐক্যই পারে আরএসএস-বিজেপিকে রুখে দিতে।’’
আরও পড়ুন:
দীপ্সিতা এর বেশি কিছু বলতে চাননি। তবে তাঁর কথায় স্পষ্ট যে, ‘সার্বিক ঐক্য’ গড়ে তোলা যায়নি। এসএফআইয়ের অন্য এক সর্বভারতীয় নেতার বক্তব্য, ‘‘নিজেদের গোঁয়ার্তুমির জন্যই এই ফল হল জেএনইউয়ে।’’ ঘনিষ্ঠবৃত্তের আলোচনায় তাঁর ব্যাখ্যা, একটা সভাপতি পদ পাওয়ার জন্য ইগোর লড়াইয়ে এই ফলাফল হয়েছে। এ জন্য দায়ী এসএফআইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব এবং তাঁদের কিছু পরামর্শদাতা। তিনি এ-ও বলেন যে, ‘‘বিভিন্ন বিভাগে এসএফআই প্রার্থী ১৮-১৯ নম্বরে রয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট, বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠন, সমর্থনের শক্তি এবং বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে কারও কোনও ধারণা নেই। হাওয়ায় ভেসে ভোট লড়েছে এসএফআই। তার ফলে যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে।’’
গত কয়েক বছর ধরেই যাদবপুরে জমি তৈরির চেষ্টা করছে এবিভিপি। কিন্তু পারছে না। তবে এ বার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি না-থাকা সত্ত্বেও রামনবমীতে পুজো করেছে তারা। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সদর দরজার মুখেই হয়েছিল রামের পুজো। স্প্রে রং দিয়ে দেওয়ালে আঁকা কার্ল মার্ক্স, ভ্লাদিমির লেনিন, মাও জে দেঙের ছবির পাশেই ঝুলেছিল হনুমানের ছবি। অতীতে এবিভিপির কর্মসূচি হলে বাধা দিতে বামেদের যে ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যেত, গত ৬ এপ্রিল তেমন কিছু হয়নি যাদবপুর ক্যাম্পাসে। যদিও রবিবার থাকায় ক্যাম্পাস ফাঁকা ছিল। তবে রামনবমী যে যাদবপুর ক্যাম্পাসে এবিভিপি-কে বাড়তি অক্সিজেন দিয়েছে, এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। জেএনইউয়ে বৃদ্ধি, অর্ধেকের বেশি কাউন্সিলর আসনে জয় এবং যুগ্ম সম্পাদক পদে নিজেদের প্রতিনিধি পাওয়ায় এবিভিপি আরও ‘উজ্জীবিত’।
যাদবপুরের প্রাক্তনী তথা এসএফআইয়ের আর এক সর্বভারতীয় নেতা সৃজন ভট্টাচার্য অবশ্য বলছেন, ‘‘জেএনইউ আর যাদবপুর এক নয়। এখানে বাম বাস্তুতন্ত্র রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অ-বাংলাভাষী কিছু ছাত্রকে জুটিয়ে ওরা বিশ্ববিদ্যালয় দখল করতে পারবে না। এখানে ওদের প্রান্তিক হয়েই থাকতে হবে।’’ পাল্টা এবিভিপির বক্তব্য, ‘‘এত দিন ওরা রামনবমী করতে দিত না। এ বার পেরেছি। বাকিটাও পারব। যাদবপুরে বামেদের দুর্গে আমরা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করবই।’’
গত বছর দোলের আগের দিন ছিল জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এর ছাত্রসংসদ ভোট। সন্ধ্যার পরে যখন ভোটগণনা চলছে, তখন সর্বভারতীয় স্তরের কোনও কোনও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল, বাম ছাত্র জোটকে গোহারা হারিয়ে আরএসএসের ছাত্রশাখা এবিভিপি জয় পেতে চলেছে। সেই সময়ে আনন্দবাজার ডট কমের তরফে যোগাযোগ করা হলে খানিকটা গলা চড়িয়েই এসএফআই নেত্রী তথা ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতি বঙ্গতনয়া ঐশী ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘ও সব গদি মিডিয়ার খবর। সব আসনে বাম ছাত্রজোট এগিয়ে। সবেতেই জিতব।’’ সত্যিই এক বছর আগে জিতেওছিলেন ঐশীরা। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই সেই জোট ভেঙে বিপর্যয়ের মুখে তাঁরা। উত্থান হল এবিভিপির। যে ‘অভিঘাত’ দিল্লি থেকে ৮বি বাসস্ট্যান্ডের উল্টো দিকের পাঁচিল ঘেরা জমিতে এনে ফেলতে চায় সঙ্ঘের ছাত্রশাখা।