ধারাভাষ্য। ক্রিকেটের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলায় অজয় বসু বা ইংরেজিতে রিচি বেনোদের কণ্ঠ, বিশ্লেষণ ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় ছিল। রেডিয়োর যুগে তাঁদের ধারাভাষ্য শোনার জন্য কান পেতে থাকতেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। তাঁদের কথায় তৈরি হত উত্তেজনা, শিহরন। খেলার মাঠের বিভিন্ন ঘটনা নিখুঁত ভাবে তুলে ধরতেন তাঁরা।
সময় বদলেছে। এখন রেডিয়ো ধারাভাষ্যের জনপ্রিয়তা আগের মতো নেই। টেলিভিশন, ইন্টারনেটের যুগে সরাসরি খেলা দেখা যায়। মাঠের সব ঘটনা ঘরে বসেই চাক্ষুষ করা যায়। টেলিভিশনের ধারাভাষ্যকারেরা এখন আর খেলার বর্ণনা করেন না তেমন। খেলার বিশ্লেষণ করেন। খেলা শোনা থেকে দেখায় উত্তরণ বদলে দিয়েছে ধারাভাষ্যকারদের কাজ। কঠিনও করেছে। দক্ষ ধারাভাষ্যকারের অভাব নেই। এখন মূলত প্রাক্তন ক্রিকেটারেরাই এই কাজ করেন। তাঁদের বিশ্লেষণ হয় ক্রিকেটীয়। টেকনিক্যাল। ট্যাকটিক্যাল। বিরাট কোহলি, স্টিভ স্মিথ, জসপ্রীত বুমরাহদের লড়াইয়ে আরও উত্তেজনা যোগ করেন ধারাভাষ্যকারেরা।
শুধু খেলার সময় নয়, ধারাভাষ্যকারদের কাজ শুরু হয়ে যায় টসের সময় থেকেই। রবি শাস্ত্রী, ড্যানি মরিসনের মতো ধারাভাষ্যকারেরা টসকেও আকর্ষণীয় করে তোলেন নিজস্ব দক্ষতায়। সম্প্রচারকারী চ্যানেলও টসের সময় বাছাই করা বিশেষজ্ঞদের পাঠায়। সব ধারাভাষ্যকার এই সুযোগ পান না। বিশেষ করে আইপিএলে। মাঠের লড়াই শুরু হওয়ার আগে থেকেই ক্রিকেটপ্রেমীদের তাতিয়ে দেন তাঁরা। তৈরি করে দেন আবহ। মাঠের বা টেলিভিশনের দর্শকেরাও তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেন তাঁদের উপস্থাপনা। দক্ষতা, জনপ্রিয়তার নিরিখে সেই ধারাভাষ্যকারদের নম্বর দিল আনন্দবাজার ডট কম।
আইপিএলে টসকে অন্যতম আকর্ষণ করে তুলেছেন ধারাভাষ্যকারদের একাংশ। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই এগিয়ে রবি শাস্ত্রী। ভারতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং কোচ ধারাভাষ্যকার হিসাবেও জনপ্রিয়। দক্ষতার সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। সব দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যেও তিনি বেশ জনপ্রিয়। টসের সময় শাস্ত্রী থাকা মানেই বাড়তি উন্মাদনা। দু’দল এবং অধিনায়কদের নিয়ে তাঁর বিশেষণ পরিপূর্ণ মন্তব্য এবং রসিক বাচনভঙ্গি উন্মাদনা তৈরির পাশাপাশি আনন্দও দেয়। ম্যাচ রেফারির প্রশংসা করতে বা তাঁর সম্পর্কে দু’-চার কথা বলতেও ভোলেন না শাস্ত্রী। তাঁর কথা শুনে হেসে ফেলেন চাপে থাকা অধিনায়কও। কখনও কখনও অবশ্য ভুলও করেন। বাড়তি উত্তেজনায় কথা গুলিয়ে ফেলেন। তা নিয়েও হাসাহাসি কম হয় না। শাস্ত্রী অবশ্য পেশাদারি দক্ষতায় পরিস্থিতি সামলে নেন। নিজেও যেন টগবগ করে ফোটেন। উপস্থাপনা শুরু করেন স্থানীয় ভাষায়। দর্শকদের অন্যতম পছন্দের তিনি। সব মিলিয়ে আনন্দবাজার ডট কমের বিচারে ১০-এর মধ্যে ৯ পাবেন ভারতের প্রাক্তন অলরাউন্ডারকে।
দ্বিতীয় স্থানে আসবেন মরিসন। নিউ জ়িল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটারও কম যান না। নাটকীয় কণ্ঠস্বরে রহস্যের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করেন। থাকে রসিকতাও। দু’দলের অধিনায়ককে পরিচয় করিয়ে দেন নিজস্ব কায়দায়। আলাদা পরিচিতি তৈরি করতে পেরেছেন মরিসন। আইপিএলের দর্শকদের মধ্যে তিনি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। শাস্ত্রীর মতো মরিসনও টসের সময় মনোরঞ্জনের দিকটিকে গুরুত্ব দেন। আনন্দবাজার ডট কমের বিচারে মরিসন পাবেন ১০-এর মধ্যে ৮।
টসকে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রয়েছে ইয়ান বিশপেরও। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের প্রাক্তন জোরে বোলার পরিমিত কথা বলেন। কখনও কখনও রসিকতাও করেন। টসের উপস্থাপনার মধ্যে ক্রিকেটীয় গাম্ভীর্য ধরে রাখার চেষ্টা করেন। তার মধ্যেও আইপিএলের উন্মাদনা মিশিয়ে দেন। বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে নিখুঁত থাকার চেষ্টা করেন। অধিনায়ক এবং ম্যাচ রেফারিদের পরিচয় করিয়ে দেন কম সময়ের মধ্যে। আনন্দবাজার ডট কমের বিচারে বিশপ পাবেন ১০-এর মধ্যে ৭.৫।
আইপিএলে টসের সময় দেখা যাচ্ছে আরও কয়েক জনকে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হর্ষ ভোগলে। অভিজ্ঞ ধারাভাষ্যকার। প্রাক্তন ক্রিকেটার নন, এমন ধারাভাষ্যকারদের মধ্যে নিঃসন্দেহে ভোগলে এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা। অভিজ্ঞ ধারাভাষ্যকার ক্রিকেটারদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন। মুখে সব সময় হাসি ঝুলিয়ে রাখেন। ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সব তথ্যে সমৃদ্ধ হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। দর্শকদের মধ্যে জনপ্রিয়। টসের সময় নানা প্রশ্নে অধিনায়কদের পরিকল্পনা জানার চেষ্টা করেন। উত্তেজনা তৈরির চেষ্টাও থাকে যথেষ্ট। কখনও কখনও একটু বেশি কথা বলে দীর্ঘায়িত করে ফেলেন। তবু ভোগলের স্বচ্ছন্দ উপস্থাপনা বেশ উপভোগ্য। আনন্দবাজার ডট কমের বিচারে ভোগলেও পাবেন ১০ এর মধ্যে ৭.৫।
ভারতের প্রাক্তন মহিলা ক্রিকেটার অঞ্জুম চোপড়ার কথাও বলতে হবে। অঞ্জুমের উপস্থাপনায় অতিরঞ্জিত কিছু থাকে না। বেশ পরিপাটি, সাবলীল। সংশ্লিষ্টদের সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখেন। হালকা রসিকতা মেশানো থাকে অঞ্জুমের টস সঞ্চালনায়। দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করেন পরিমিতিবোধ রেখে। ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন তিনি। আনন্দবাজার ডট কমের বিচারে অঞ্জুম পাবেন ১০ এর মধ্যে ৭।
জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকারদের তালিকায় থাকবেন মুরলি কার্তিকও। কিছু সিনিয়র ক্রিকেটারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বন্ধুত্বের। ক্রিকেটারদের সঙ্গে সহজে মিশতে পারেন। স্বচ্ছন্দে রসিকতা করেন। চেষ্টা করেন পরিকল্পনা জানার। এবং অবশ্যই টসের আগেই দর্শকদের তাতানোর চেষ্টা করেন। উপস্থাপনায় আগের থেকে অনেক সাবলীল হয়েছেন। প্রাক্তন স্পিনারেরও জনপ্রিয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে ধারাভাষ্যকার হিসাবে। আনন্দবাজার ডট কমের বিচারে কার্তিক পাবেন ১০-এর মধ্যে ৬.৫।
- চলতি বছর আইপিএলের ১৮তম বর্ষ। ২০০৮ সাল থেকে শুরু হয়েছিল এই প্রতিযোগিতা। এখন এই প্রতিযোগিতায় খেলে মোট ১০টি দল। তাদের মধ্যেই চলে ভারতসেরা হওয়ার লড়াই।
- গত বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। তিন বার এই ট্রফি জিতেছে তারা। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাই সুপার কিংস পাঁচ বার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, দিল্লি ক্যাপিটালস, পঞ্জাব কিংস ও লখনউ সুপার জায়ান্টস এখনও পর্যন্ত এক বারও আইপিএল জিততে পারেনি।
-
২৩:৫৩
আগামী আইপিএলে কি ধোনি খেলবেন? তিন শব্দে উত্তর চেন্নাই কোচ ফ্লেমিংয়ের -
২৩:২৮
ব্যর্থ ২৭ কোটির পন্থ, আইপিএল থেকে ছুটি লখনউয়ের, পচা শামুকে পা কাটল গোয়েন্কার দলের -
২০:০৯
আইপিএলে দাপট রাহুলের, আড়াই বছর পর খুলতে পারে দেশের টি-টোয়েন্টি দলের দরজা -
১৪:৪৮
‘অপারেশন সিঁদুরের সময় পাক অধিকৃত কাশ্মীরেই ছিল বাবা-মা’, সেই রাতের কাহিনি শোনালেন নাইট ক্রিকেটার -
১০ উইকেটে জিতে শীর্ষে গুজরাত, সঙ্গে আরও দুই দলকে প্লে-অফে তুললেন শুভমনেরা