(বাঁ দিকে) তৃণমূলের সংহতি মিছিলে হাঁটছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই মিছিলেই হাঁটছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও (ডান দিকে)। ছবি: ফেসবুক।
জল্পনা ছিল তাঁর যোগদান নিয়ে। শেষ পর্যন্ত সোমবার তৃণমূলের আহূত সংহতি মিছিলে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই রইলেন তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। হাজরা থেকে তিনিও মিছিলে পা মেলালেন নেত্রীর সঙ্গে। হাজরা থেকে যে মিছিল শুরু হয়, তার প্রথমেই রয়েছেন মমতা। পাশে বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা। তারই পিছনে অভিষেক। তাঁর পাশে হাঁটছেন রাজ্যের বিভিন্ন মন্ত্রী এবং তৃণমূলের নেতা।
রামমন্দির উদ্বোধনের দিন শহরে সংহতি মিছিলের ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। বস্তুত, ওই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন মমতা। রামমন্দিরের উদ্বোধন এবং রামলালার বিগ্রহে ‘প্রাণপ্রতিষ্ঠা’ নিয়ে যখন সারা দেশের অধিকাংশ রাজ্যই উদ্বেল, বহু রাজ্য দিনভর ছুটি ঘোষণা করেছে, তখন সেই ‘স্রোত’-এর বিপরীতে হেঁটে একমাত্র মমতাই ‘সংহতি মিছিল’-এর কর্মসূচি নিয়েছেন। কিন্তু জল্পনা ছিল, তৃণমূলের ‘অঘোষিত দু’নম্বর’ অভিষেক ওই মিছিলে থাকবেন কি না।
প্রসঙ্গত, অভিষেক রবিবার কলকাতা পুলিশের ‘হাফ ম্যারাথনে’ যোগ দিয়ে কলকাতার রাজপথে দৌড়েছিলেন। তার পর তিনি তৃণমূলের মিছিলে যোগ না-দিলে দলের ভিতরে-বাইরে ‘ভুল বার্তা’ যাওয়ার অবকাশ থাকত। মিছিলের চেয়ে অভিষেক মিছিলে যোগ না-দেওয়া অনেক বেশি ‘গুরুত্ব’ পেয়ে যেত। লোকসভা ভোটের আগে যা শাসক শিবিরের কাছে একেবারেই কাম্য ছিল না।
কালীঘাটে পুজো দিয়ে হাজরা পার্ক থেকে বেলা ৩টে নাগাদ মিছিলে শুরু করেছেন মমতা। গুরুদ্বার, মসজিদ এবং গির্জাতে যাচ্ছেন তিনি। মিছিলের শেষে পার্ক সার্কাস ময়দানে সভা করার কথা তাঁর। পথে রাধাকৃষ্ণের মন্দিরেও পুজো দেওয়ার কথা রয়েছে মমতার। কিন্তু শাসকদলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে ‘শৈত্য’ নিয়ে যখন চর্চা চলছে, তখন মমতার এই কর্মসূচিতে অভিষেককে নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই জল্পনা তৈরি হয়েছিল। শেষে দেখা গেল, অভিষেক যোগ দিলেন মমতার আহূত মিছিলে।
মিছিলে অভিষেকের পাশে হাঁটতে দেখা যায় তৃণমূল কাউন্সিলর কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়, কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী সুজিত বসু, মন্ত্রী জাভেদ খান প্রমুখকে।
সংহতি মিছিলের প্রচারের বিষয়টি নিয়েও বিস্তর আলোচনা এবং জল্পনা ছিল। অভিষেকের ঘনিষ্ঠেরা বলছিলেন, মিছিলের যে প্রচার করা হচ্ছে, তাতে কেবল মমতার নাম রয়েছে। কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় সংহতি মিছিলের যে হোর্ডিং পড়েছে, তাতেও রয়েছে কেবল নেত্রীর ছবি এবং নাম। অভিষেকের নাম বা ছবি নেই। ওই অনুযোগের সূত্রেই অনেকে মনে করেছিলেন, অভিষেক মিছিলে না থাকতে পারেন। তবে অনেকে আবার এ-ও বলছিলেন, মমতা নিজে যদি অভিষেককে মিছিলে অংশ নিতে বলেন, তা হলে তিনি সেখানে থাকবেন। নইলে দলের কাছে ‘ভুল বার্তা’ যেতে পারে। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হয়ে থাকতে পারে বলে দলের একাংশের মত। তবে কেউ আনুষ্ঠানিক ভাবে এর সত্যতা স্বীকার করেননি। বরং বলেছেন, দলীয় কর্মসূচিতে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অংশ নেবেন, সেটাই তো স্বাভাবিক। এ নিয়ে অনর্থক জল্পনা তৈরি করা হচ্ছিল
এমনিতে সাধারণত কোনও ‘সরকারি কর্মসূচি’তে থাকেন না অভিষেক। কিন্তু দলীয় কর্মসূচিতে থাকেন। কারণ, সংগঠনে তাঁর স্থান তৃণমূলের চেয়ারপার্সন মমতার ঠিক পরেই। ঘটনাচক্রে, সোমবারের মিছিল কোনও ‘সরকারি’ কর্মসূচি ছিল না। সেটি ‘রাজনৈতিক কর্মসূচি’। ফলে এমনিতে সেখানে থাকতে অভিষেকের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু একই সঙ্গে মমতা ওই মিছিলকে রাজনীতির ঊর্ধ্বেও নিয়ে যেতে চেয়েছেন। সে কারণেই তিনি মিছিলের শেষে পার্ক সার্কাসের মঞ্চে কোনও রাজনীতিককে রাখতে চাননি। ফলে সে অর্থে আবার ওই মিছিলকে তৃণমূলের ‘দলীয় কর্মসূচি’ও বলা যাবে না। তাই মিছিলে অভিষেক না-থাকলেও তার ‘যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা’ তৈরিই ছিল। তবে ঘটনা পরম্পরা বলছে, সে সব ব্যাখ্যার আর প্রয়োজন পড়ছে না।
সোমবার মমতার মিছিল ছাড়াও শহর জুড়ে প্রায় ৬০টি মিছিল এবং জমায়েত হচ্ছে। ধর্মীয় মিছিল যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী কর্মসূচিও। উত্তর কলকাতার একটি মিছিলে পা মিলিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দুপুরে বামফ্রন্ট-বহির্ভূত প্রায় ২০০টি বামপন্থী গণসংগঠন ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী’ মিছিল করেছে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে। ওই মিছিল শেষ হয়েছে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সামনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy