অভিষেকের দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি থেকে চলছে নমুনা সংগ্রহ। -নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূল যুব সভাপতি তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হওয়ার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে হুগলির হরিপাল থানায় সাংসদকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করলেন এক পুলিশকর্মী। তিনি আগের দিন অভিষেকের কনভয়ে ছিলেন।
বুধবার হুগলি জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, সনৎ মণ্ডল নামে ওই পুলিশকর্মীর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের চেষ্টা, ষড়যন্ত্র-সহ একাধিক মামলাও রুজু করা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত হিসেবে নির্দিষ্ট কাউকে চিহ্নিত করা হয়নি। সিআইডি ও জেলা পুলিশ দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও এ দিন রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে ব্রেক ভ্যান এবং দুধের গাড়ির চালককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
হুগলি জেলা পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবারের ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭ (খুনের চেষ্টা), ১২০বি (ষড়যন্ত্র), ৩২৬ (গুরুতর আঘাত করা) ধারায় মামলা শুরু হয়েছে। জাতীয় সড়ক আটকে রাখার জন্য ব্রেক ভ্যানের বিরুদ্ধে জাতীয় সড়ক আইনের ৮বি ধারাতেও অভিযোগ আনা হয়েছে।
কিন্তু কেন খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হল, সরকারি ভাবে তা নিয়ে পুলিশের কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে জেলা পুলিশের এক কর্তার ব্যাখ্যা, দুধের ভ্যানটি খারাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাকে সরিয়ে নিয়ে যেতে যে ব্রেক ভ্যানটি সেখানে ছিল, সেটারও মাঝে-মধ্যে স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। গাড়ি দু’টি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাতে একাধিক লোকের মৃত্যু হতে পারত। এটা পরিকল্পিত হতে পারে। তাই খুন ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা হল।
ভবানী ভবন সূত্রের খবর, দুর্ঘটনার পরে মঙ্গলবার রাতেই কনভয়ের পাইলট কারের চালক এবং নিরাপত্তারক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি। দুধের গাড়ির মালিকের সঙ্গেও তদন্তকারীরা কথা বলেছেন। ঘটনার পর দুধের গাড়ির এক খালাসি গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাঁর খোঁজ চলছে। যে সব নিরাপত্তাকর্মী দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন, যাঁরা কনভয়ে ছিলেন— তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেছেন সিআইডি অফিসারেরা। এ ছাড়া অভিষেকের গাড়িচালককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অভিযোগ, গাড়ি চালানোর সময় তাঁর ঝিমুনি এসেছিল। মঙ্গলবার রাতেই সিআইডি দোমড়ানো গাড়ির নমুনা সংগ্রহ করে। গোয়েন্দারা প্রাথ়মিক ভাবে জেনেছেন, বিকেল পাঁচটা নাগাদ প্রথমে পার হয়ে যায় অভিষেকের কনভয়ের পাইলট কারটি। পিছনে থাকা অভিষেকের গাড়ি সরাসরি ধাক্কা মারে দুধের ভ্যানের পিছনে।
এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ কলকাতা থেকে ফরেন্সিক বিভাগের চার জন সিঙ্গুরে যান। টাটা প্রকল্প এলাকায় কলকাতামুখী যে লেনে দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেখান থেকে তাঁরা গাড়ির কাঁচের টুকরো, রাস্তায় পড়ে থাকা পেট্রল জাতীয় কিছু তরলের নমুনা এবং দুর্ঘটনাগ্রস্থ গাড়িগুলির ভাঙা অংশ সংগ্রহ করেন। জেলা পুলিশ ওই ঘটনার যে ভিন্ন মামলা শুরু করেছে, তার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে তারকেশ্বরের সিআইকে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি দু’টিকে বর্তমানে দাদপুর থানায় রাখা হয়েছে। ফরেন্সিকের দলটি দাদপুর থানায় গিয়ে ওই গাড়ি দু’টিকে পরীক্ষা করেন ও নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
বর্ধমানের কাছে একটি ধাবায় চা খেয়েছিলেন সাংসদ ও কনভয়ের কর্মীরা। সেই ধাবার মালিকের সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের মনে হয়েছে, সাংসদের গাড়িচালকের কোনও গাফিলতি থাকলেও এটা দুর্ঘটনাই। গাড়িটির ‘মেকানিক্যাল’ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানা যাবে না।
এ দিন সকালে ও বিকেলে অভিষেককে দেখতে হাসপাতালে যান মুখ্যমন্ত্রী। হাসপাতালে যান সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ও ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং আরও অনেকেও। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী অভিষেকের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তা পাঠিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy