অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
ভোটের জন্য সন্দেশখালি নিয়ে রাজনীতি হয়েছে, মনে করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বসিরহাটে বুধবার ভোট প্রচারে গিয়ে তিনি মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রসেকে দুর্বল করতে শাহজাহানকে হেফাজতে রেখেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
সন্দেশখালিতে যত অভিযোগই থাকুক না কেন, দলের স্থানীয় নেতা শাহজাহানের পাশে থাকছে তৃণমূল। তার বাড়িতে তল্লাশিতে যাওয়ায় ইডির অফিসারদের উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে শাহজাহান ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে। তবে তার পরেও বিধানসভার ভিতরে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যেমন তার পাশে দাঁড়িয়ে শাহজাহানকে ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন, তেমনই এ দিন দলীয় সভা থেকে একই বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। বসিরহাটে এস এস ময়দানের সভায় তিনি বলেন, “সন্দেশখালির মহিলাদের আন্দোলন ছিল শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে। পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করেছে। সিবিআই এখনও তাঁদের হেফাজতে নেয়নি কেন? বিজেপির আসল উদ্দেশ্য নারী সুরক্ষা না। তৃণমূলের সংগঠনকে দুর্বল করা!” অভিষেক আরও দাবি করেছেন, “শাহজাহান গ্রেফতার হওয়ার পরে আর সন্দেশখালি যাচ্ছে না কোনও রাজনৈতিক দল। আসল উদ্দেশ্য শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করা।” সিপিএম, বিজেপির উদ্দেশে অভিষেকের মন্তব্য, “ওরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ পেলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢোকায়! এটাই পার্থক্য।”
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পাল্টা সরব হয়েছে বিরোধীরাও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, “পিসির ভাইপো হওয়া ছাড়া যাঁর কোনও যোগ্যতা নেই, তাঁর এক এক রকম কথার যুক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল! প্রায় দু’মাস ধরে শাহজাহানকে আড়াল করে রেখে প্রমাণ লোপাটের সব চেষ্টা হয়েছে। আদালত যখন বলেছে ইডি-সিবিআইও চাইলে গ্রেফতার করতে পারবে, তখন পুলিশকে দিয়ে গ্রেফতার দেখিয়ে সিআইডির হেফাজতে রেখে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। আদালতেরই নির্দেশে শাহজাহানকে সিবিআই হেফাজতে পাঠানোর পরে এ সব কথার মানে কী?” তাঁর আরও বক্তব্য, “তা ছাড়া, শিবু ও উত্তম তৃণমূলেরই সংগঠনের লোক। তাদের সিবিআই হাতে নিলে ওদের সংগঠন দুর্বল হত না?” রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “যাঁরা অন্ধ্রপ্রদেশ কিংবা কেরলে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করছেন, যাঁদের জীবন- জীবিকা, বিঘের পর বিঘে চাষের জমি লুট হয়েছে, তাঁদের সকলেরই অভিযোগ ছিল শাহজাহানের বিরুদ্ধে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তো এক সময় এই শাহজাহানের ফাঁসি চেয়েছিলেন। আজ অভিষেক তাঁকে শংসাপত্র দিচ্ছেন?”
কেন্দ্রীয় এজেন্সির তৎপরতা নিয়েও ফের চ্যালেঞ্জের সুরে অভিষেক বলেছেন, “ইডি, সিবিআই কাঁচকলা করবে। যত পাঠাবে তত মানুষের লড়াই তীব্র হবে।” যে সন্দেশখালি নিয়ে রাজনীতি তোলপাড় হয়েছে, তা বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। এখানকার পরিস্থিতি ভোটে যাতে প্রভাব না ফেলে, গোড়া থেকেই তা নিয়ে সতর্ক তৃণমূল। দলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীকে দফায় দফায় এলাকায় পাঠিয়ে মানুষের অভিযোগ সংগ্রহ করে এবং বেশ কিছু পদক্ষেপে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন দলীয় নেতৃত্ব। বিরোধীদের পাল্টা আক্রমণ করেই অভিষেক এ দিন বলেছেন, “শাহজাহান গ্রেফতার হওয়ার পরে রাজনৈতিক নেতারা সন্দেশখালি যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।” বুধবার রাতেই সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের উপরে হামলার ঘটনার তদন্তে মিনাখাঁ থানা এবং মিনাখাঁর এসডিপিও অফিসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সিবিআই।
রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনার অভিযোগেও এ দিন মানুষের মন ছুঁতে চেয়েছেন অভিষেক। রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া ও আবাস প্রকল্পের প্রাপ্যের কথা তুলে তিনি বলেন, “২০২১ সালের পর থেকে রাজ্যের মানুষের এই ন্যায্য পাওনার ১০ পয়সাও কেন্দ্রীয় সরকার দেয়নি। বারবার বলেছি, কাগজ দেখাও। পারেনি। আর এখন রাজ্যের মানুষের কাছে (সিএএ-র) কাগজ চাইছে।” এই যুক্তিতে বিজেপিকে বাংলা-বিরোধী হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy