তৃণমূলের সংগঠনে রদবদল হবে. এবং তা হবে কাজের (পারফরম্যান্স) মূল্যায়নের ভিত্তিতে। শনিবারের ভার্চুয়াল সভা থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে দলের সর্ব স্তরের নেতৃত্বকে নিয়ে শনিবার ভার্চুয়াল সভা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। সেই বৈঠক থেকেই সাংগঠনিক রদবদলের কথা আরও এক বার জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, কাজের ভিত্তিতে দলে সাংগঠনিক রদবদলের কথা গত বছর ২১ জুলাইয়ের সভায় জানিয়ে দিয়েছিলেন অভিষেক। শনিবার প্রায় দু’ঘণ্টার বৈঠকে অভিষেক এ-ও জানিয়েছেন যে, ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কমিটি কবে তৈরি হবে।
সভার মধ্যেই নেতাদের ১০ মিনিটের একটি ভিডিয়ো দেখানো হয়। ভোটার তালিকা সংক্রান্ত স্ক্রুটিনি কী প্রক্রিয়ায় হবে, তা দেখানো হয়েছে ওই ভিডিয়োতে। বলা হয়েছে, বিধানসভা ভিত্তিক কর্মশালা করে যে কর্মীবাহিনী মাঠে নেমে কাজ করবে, তাদের সে ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু হবে বলে সভায় জানিয়েছেন অভিষেক।
শনিবারের ভার্চুয়াল সভায় অভিষেক যোগ দিয়েছিলেন তাঁর ক্যামাক স্ট্রিটের দফতর থেকে। সেখান থেকেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও। বৈঠকের শুরু করেন তিনি। অভিষেক বলার শেষ করার পর মিনিট দুয়েকের উপসংহারও টানেন তিনিই। অভিষেক-বক্সীর পাশাপাশি বসাকে তৃণমূলের অনেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ ফ্রেম’ বলে অভিহিত করছেন। সূত্রের খবর, বৈঠকে বক্সী বলেছেন, অভিষেক তাঁদের ‘সকলের নেতা’।
আরও পড়ুন:
নজরে সুদীপ-নয়না
কোন বিধানসভায় মোট কত বুথ, তার মধ্যে কত বুথে গত লোকসভা নির্বাচনে ৫০-এর বেশি ভোটে তৃণমূল পিছিয়ে ছিল, সেই পরিসংখ্যান পেশ করে অভিষেকের ধমক শুনতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার নেতৃত্বকে। উত্তরবঙ্গের বালুরঘাট, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি, মালদহ এবং দক্ষিণবঙ্গের কৃষ্ণনগর উত্তর, রানাঘাট, আরামবাগ-সহ একাধিক এলাকার উদাহরণ দেন অভিষেক। ঘটনাক্রমে কলকাতার দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। সেগুলি হল জোড়াসাঁকো এবং চৌরঙ্গি। উল্লেখ্য, দু’টি বিধানসভাই উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। যে কেন্দ্রের দীর্ঘদিনের সাংসদ দলের প্রবীণ নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আর চৌরঙ্গির বিধায়ক সুদীপের স্ত্রী নয়না।
নজরে শুভেন্দুর জেলাও
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে দু’টি লোকসভা আসনেই বিজেপি জিতেছে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবারের সভায় অভিষেক বলেছেন, আরও একটু লড়াই দিতে পারলে কাঁথি আসন বার করে নেওয়া যেত। সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন উত্তম বারিক। সামগ্রিক ভাবে কাঁথি এবং তমলুক সাংগঠনিক জেলার নেতাদের আরও ‘সক্রিয়’ হওয়ার বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। পাশাপাশি এ-ও বলেছেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে পূর্ব মেদিনীপুরের ১২টি আসন জিততে হবে। উল্লেখ্য, ওই জেলায় মোট বিধানসভা আসন ১৬টি। ২০২১ সালের ভোটে তৃণমূল ওই জেলায় জিতেছিল ৯টি আসনে।
পাঁচ দিনে জেলায় কমিটি
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটার তালিকা সংক্রান্ত ৩৫ জনের যে কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন, সেই কমিটি সপ্তাহ দেড়েক আগে বৈঠকে বসেছিল। কমিটির সদস্য হিসাবে অভিষেকের নাম থাকলেও তিনি সেই বৈঠকে ছিলেন না। ওই বৈঠক থেকেই জানানো হয়েছিল, জেলাভিত্তিক কোর কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। যে কমিটি ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ তদারকি করবে। কিন্তু দুপুরে গঠিত সেই কমিটি রাতে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। শনিবারের সভায় অভিষেক জানিয়েছেন, পাঁচ দিনের মধ্যে জেলা স্তরের কমিটি গড়ে দেওয়া হবে। ২১-২৭ মার্চের মধ্যে তৈরি করা হবে ভোটার তালিকা তদারকির ব্লক কমিটিও।
জেলা ও ব্লক সভাপতি বদল
লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে যে সংগঠনে রদবদল হবে, সেই ঘোষণা অভিষেক করেছিলেন গত বছরের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে। সেপ্টেম্বরে চোখের চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার আগে রদবদল সংক্রান্ত নিজের প্রস্তাব দলনেত্রী মমতাকে দিয়ে গিয়েছিলেন অভিষেক। কিন্তু সেই রদবদল এখনও হয়নি। শনিবারের সভায় অভিষেক আরও এক বার জানিয়ে দিয়েছেন, শীঘ্রই কিছু সাংগঠনিক জেলা এবং ব্লক সভাপতি পদে বদল করা হবে। তার সূচক হবে কাজ (পারফরম্যান্স)।