Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

নেত্রী নেই, ভিড়েও ঘাটতি যুবরাজের সভায়

প্রায় সকলেই জানতেন তিনি আসবেন। এলেন না। দলে অনেকেরই দাবি ছিল, ময়দান উপচে পড়বে। পড়ল না। যদিও সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁর ভাইপো, তৃণমূলের ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সদর্পে ঘোষণা করলেন, “নেংটি ইঁদুরের সঙ্গে লড়াই করতে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার মাঠে নামে না।” অথচ দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, “দিদিই তো গত সোমবার মিছিলের শেষে বলেছিলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে ১ ডিসেম্বর দেখা হবে।’ তা হলে এলেন না কেন?” তার জবাবও কান পাতলে শোনা যাচ্ছিল সভা এলাকা থেকে।

সভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত মুকুল রায়। পাশে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত মুকুল রায়। পাশে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮
Share: Save:

প্রায় সকলেই জানতেন তিনি আসবেন। এলেন না। দলে অনেকেরই দাবি ছিল, ময়দান উপচে পড়বে। পড়ল না। যদিও সেখানে দাঁড়িয়ে তাঁর ভাইপো, তৃণমূলের ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সদর্পে ঘোষণা করলেন, “নেংটি ইঁদুরের সঙ্গে লড়াই করতে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার মাঠে নামে না।”

অথচ দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, “দিদিই তো গত সোমবার মিছিলের শেষে বলেছিলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে ১ ডিসেম্বর দেখা হবে।’ তা হলে এলেন না কেন?” তার জবাবও কান পাতলে শোনা যাচ্ছিল সভা এলাকা থেকে। গুঞ্জন চলছিল দলে, প্রত্যাশিত ভিড় না হওয়াতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার শহিদ মিনার ময়দানে দলের যুব সংগঠনের সমাবেশে যাননি! জনান্তিকে তৃণমূলের কোনও কোনও নেতা এ-ও বলে ফেললেন, “ভাইপোর অনভিজ্ঞতায় কিছু দিন আগে দিল্লিতে দলের সভা ফ্লপ করেছিল। রাজ্য থেকে ট্রেন, বাস, গাড়ি ভর্তি করে লোক নিয়েও সেই সভা ভরানো যায়নি। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি।” দলের এক রসিক নেতার মন্তব্য, “এ দিনের সভা ভিড়ের নিরিখে ফ্লপ নাম্বার টু!”

তবে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় তো বটেই, খোদ অভিষেকও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সমাবেশে দলনেত্রীর তো আসার কথা ছিল না। যদিও অনেকেই ভেবেছিলেন, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বা কেন্দ্রীয় সম্পাদক সিদ্ধার্থনাথ সিংহের আক্রমণের জবাব দিতে মমতা শহিদ মিনার ময়দানে আসবেন। কিন্তু না, আসেননি। অন্যত্র সভা ছিল। তবে সেখানেও জবাব ছিল না তাঁর মুখে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায় তিনটি বেসরকারি প্রকল্পের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মাত্র সাত মিনিট বক্তৃতা দিয়েছেন মমতা। পুলিশ-প্রশাসনের মধ্যে গুঞ্জন, এটা সম্ভবত মমতার জীবনের সবচেয়ে কম সময়ের বক্তৃতা। তাতে আবার বিজেপির কারও নামগন্ধ নেই। যা দেখেশুনে হাজির সমর্থকদের অনেকেই হতাশ। কেউ কেউ বলেছেন, অমিত শাহ, বিজেপি, সারদা সিবিআই, খাগড়াগড় দিদি তো কিছুই বললেন না। পাশ থেকে আর এক জনের উক্তি, “দিদি যখন কিছু বলবেন মনে করেন, তখন কিছুই তোয়াক্কা করেন না। কিছু একটা হয়েছে। দিদি কিছু বলছেন না।” আর এক জন অবশ্য বলেন, “এটা তো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়। তাই হয়তো দিদি এড়িয়ে গিয়েছেন।” কিন্তু এমন অনেক অনুষ্ঠানে মমতা এর আগে দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক বক্তব্য রেখেছেন। তা হলে?

জল্পনা তৈরি হয়েছে অভিষেকের এ দিনের সভা নিয়েও। জনসমাগমের নিরিখে রবিবার বিজেপির সভা এবং সোমবার তৃণমূলের সভা নিয়ে তুল্যমূল্য আলোচনা হয়েছে। তৃণমূলের সভায় কত লোক হয়েছিল, তা নিয়ে রাত পর্যন্ত পুলিশ নির্দিষ্ট করে কোনও হিসেব দেয়নি। পুলিশের তরফে বলা হয়েছে,“হাজার হাজার লোক ছিল।” রবিবার অবশ্য ধর্মতলার সভায় প্রায় ষাট হাজার লোক হয়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ দিন শহিদ মিনার ময়দান পুরো ভরেনি বলে তৃণমূলের একাংশের অভিমত।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিন জানান, শহিদ মিনার ময়দানে ২৫ হাজারের মতো লোক ধরে। অভিষেক অবশ্য মঞ্চ থেকে বলেন, “যতদূর চোখ যাচ্ছে শুধু কালো মাথার ভিড় দেখছি।” আর এক ধাপ এগিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এ দিন বলেন, “আজ যা ভিড় হয়েছে তাতে তৃণমূলের জুনিয়র টিমের কাছে বিজেপি ৫-০ গোলে হেরেছে।” তাঁর কথার সূত্র ধরে অভিষেক বলেছেন, “বিজেপির বন্ধুদের বলব, আগে সিপিএম এবং কংগ্রেসকে হারিয়ে আই লিগে দু’নম্বরে ওঠো, তার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোকাবিলা করার কথা ভাববে।”

তবে অরূপবাবু যাকে জুনিয়র টিম বলছেন, তাতে হাজির ছিলেন মুকুল রায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মতো প্রথম সারির নেতারা। ছিলেন অশোক রুদ্র, শঙ্কুদেব পণ্ডা, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়ের মতো ছাত্র-যুব নেতারাও। এই তারকাখচিত দলও যখন ভিড় জমাতে পারল না, তখন দলের একাংশের কাছ থেকেই শোনা গেল, “আসলে মুকুলদার মতো সংগঠককে দায়িত্ব না দেওয়াতেই ভিড় তেমন হয়নি।” তবে দলের অন্য অংশের কথায়, “তিন দিনের প্রস্তুতিতে যা হওয়া উচিত, তার চেয়ে বেশিই হয়েছে।”

মমতা সশরীর হাজির না থাকলেও নেতাদের মুখে ছিলেন। ফিরহাদ হাকিম বললেন, “চাঁদেরও কলঙ্ক থাকতে পারে, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও কলঙ্ক থাকতে পারে না।” আবার মুকুলবাবু বললেন, “যাঁরা আমাদের বাংলা থেকে ভাগানোর কথা বলছেন, তাঁরা তো বাংলায় জন্মাননি, বাংলাকে চেনেন না।” তবে তৃণমূল নেতারা এ দিন যে ভাবে তাঁদের নেতাদের সমালোচনা করেছেন, তাতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ পাল্টা বলেছেন, “ওঁরা ব্যক্তি চরিত্র হনন করেছেন। কারণ, ওঁদের রাজনৈতিক কোনও বক্তব্য নেই।”

এ দিনের সভায় অভিষেক ঘোষণা করেন, রাহুলবাবুর ভাই সুদীপ সিংহ তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাঁকে দক্ষিণ কলকাতা জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। কিন্তু রাহুলবাবু বলেন, “তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই আমার ভাই ওই দলের সক্রিয় কর্মী। বিজেপি এবং আমার পরিবারে ভাঙন দেখাতে আজ হঠাৎ সুদীপের যোগদানের কথা ঘোষণা করা হল।” তাঁর অভিযোগ, এটা মিথ্যাচার, এ জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া উচিত। আর একই সঙ্গে কটাক্ষ, “তবু তো রাহুল সিংহের ভয়ে এত দিনে সুদীপের একটা পদপ্রাপ্তি হল!”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy