Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Death

কাজ করতে গিয়েই প্রাণ গেল কিশোরের

হাবিবুলের বাবা মহিবুল শেখ পেশায় খেতমজুর। মা লুতফা বিবি নানা রোগে ভুগছেন। হাবিবুল মাধ্যমিক পাশ করে স্থানীয় মহাদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল।

হাবিবুল শেখ।

হাবিবুল শেখ। নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৪০
Share: Save:

‘দিন আনি দিন খাই’ সংসার। অভাব ঘোচানোর আশায় একমাত্র ছেলেকে গুজরাতে গয়নার কাজ শিখতে পাঠিয়েছিলেন বাবা-মা। রবিবার গভীর রাতে ফোনে খবর আসে, সেখানে সেতু দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ছেলে হাবিবুল শেখের (১৭)। তার পর থেকেই শোকস্তব্ধ পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর মুকশিমপাড়ার কেশববাটী গ্রামে। বিজেপি শাসিত রাজ্যে এমন দুর্ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল। কেন ওই কিশোরকে পড়াশোনা ছেড়ে ভিন্‌ রাজ্যে কাজে যেতে হয়েছিল, পাল্টা প্রশ্ন বিজেপির।

হাবিবুলের বাবা মহিবুল শেখ পেশায় খেতমজুর। মা লুতফা বিবি নানা রোগে ভুগছেন। হাবিবুল মাধ্যমিক পাশ করে স্থানীয় মহাদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। তবে বেশি দিন স্কুলে যাওয়া হয়নি। গুজরাতের মোরবী শহরে বছর দশেক ধরে একটি গয়নার দোকানে কাজ করছেন হাবিবুলের কাকা সাহিবুল শেখ। মাস দশেক আগে হাবিবুলকে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন বাড়ির লোকজন।

তার পর থেকে আর বাড়ি আসেনি হাবিবুল। তবে নিয়মিত ফোন করত। লুতফা বিবি জানান, রবিবার বিকেল ৫টা নাগাদ ছেলে ফোন করে বাড়ির সকলের কথা জানতে চায়। এর পরে রাত ১টা নাগাদ হাবিবুলের ঠাকুমা সালার বিবির ফোন বেজে ওঠে। ফোন ধরেন ঠাকুরদা আজিজুল। সে ফোনেই জানা যায়, মোরবী শহরে মাচ্ছু নদীর উপরে কেবল সেতু ভেঙে মারা গিয়েছে হাবিবুলও।

মহিবুল বলেন, ‘‘সংসারে অভাব ঘোচার আশায় ছেলেকে ওখানে পাঠিয়েছিলাম। সেখানে যে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে, বাড়িতে টিভি না থাকায় জানতেও পারিনি। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে খবর শুনে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না, এত বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে আমাদের!’’ কান্নায় ভেঙে পড়ে লুতফা বলেন, ‘‘ছেলে এ ভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে ভাবিনি!’’

গুজরাত থেকে ফোনে সাহিবুল জানান, তিনি যে দোকানে কাজ করেন, সেখান থেকে ওই সেতু মিনিট সাতেকের হাঁটা পথ। রবিবার ছুটি ছিল। সন্ধ্যায় ভাইপো তাঁকে জানায়, কয়েক জন বন্ধু সেতুতে বেড়াতে যাচ্ছে। সে-ও যেতে চায়। সাহিবুলের কথায়, ‘‘ভাইপোর ইচ্ছেয় অমত করিনি। সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাগাদ এক জন জানান, সেতু ভেঙে পড়েছে। শোনার পরেই হাত-পা কাঁপতে থাকে।’’ তিনি জানান, রাত ১১টা নাগাদ নদীতে ভাইপোর দেহ মেলে।

সোমবার হাবিবুলের বাড়িতে ছিল পড়শির ভিড়। ফজলুল হক মণ্ডল, রফিক মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘খুব মিশুকে ছেলে ছিল হাবিবুল। পড়াশোনাতেও খারাপ ছিল না। সংসারে অভাবের জন্য ওকে গুজরাতে যেতে হল। সেখানে এ ভাবে মৃত্যু, মানা যায় না!’’ পূর্বস্থলী-২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বদরুল আলম জানান, সোমবার রাতে দমদম বিমানমন্দরে দেহ পৌঁছবে। সেখান থেকে গাড়িতে গ্রামে আনা হবে।

এ দিন হাবিবুলের বাড়িতে গিয়ে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সারানোর পরেই সেতু ভেঙে পড়ল, এই তো নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের নমুনা। আমরা পরিবারটির পাশে আছি।’’ কালনায় এক অনুষ্ঠানে এসে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের দাবি, ‘‘যানবাহন নয়, মানুষ যাতায়াত করতেই সেতু ভেঙে পড়েছে। বিজেপির লোকজন নিজেদের সম্পদ বাড়াচ্ছেন, আর অন্যদের বিপর্যস্ত করছেন।’’ বিজেপির জেলা (কাটোয়া) সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, ‘‘পূর্বস্থলীর কিশোরের মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। গুজরাত সরকার দুর্ঘটনার তদন্ত করছে। কিন্তু এ রাজ্যে কর্মসংস্থান নেই। তাই এক কিশোরকেও গুজরাতে কাজের খোঁজে যেতে হয়!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death Gujarat Boy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy