Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Covid Warrior

ডাইন অপবাদে ঘর ছাড়ে পরিবার, করোনা যোদ্ধা হয়ে সহ নাগরিকদের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন চুড়কী

চুড়কী বলছেন, ‘‘আমি কষ্ট করে বড় হয়েছি, তাই মানুষের কষ্ট বুঝি। এই পরিস্থিতিতে যে ভাবে পারছি মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি।’’

অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর পৌঁছে দিচ্ছেন চুড়কী।

অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর পৌঁছে দিচ্ছেন চুড়কী। নিজস্ব চিত্র

বাসুদেব ঘোষ 
পাড়ুই শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২১ ০৬:০৯
Share: Save:

সহ নাগরিকদের আক্রমণে ছাড়তে হয়েছিল ভিটেমাটি। ডাইন অপবাদে মারধর করে ঘরছাড়া করা হয়েছিল তাঁর পরিবারকে। কিশোরী বেলার সেই কথা ভোলেননি চুড়কী হাঁসদা। এখন তিনি নিজে তাই করোনা-যোদ্ধা হয়ে সহ-নাগরিকদের পাশে। গাড়ি চালিয়ে আক্রান্তদের পৌঁছে দিচ্ছেন অক্সিজেন, খাবার। বীরভূমের পাড়ুইয়ের বাঁধনবগ্রামের বাসিন্দা চুড়কী বলছেন, ‘‘আমি কষ্ট করে বড় হয়েছি, তাই মানুষের কষ্ট বুঝি। এই পরিস্থিতিতে যে ভাবে পারছি মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি।’’

সতেরো বছর আগে তাঁর পরিবারের পাশে অবশ্য কেউ দাঁড়াননি। সেটা ২০০৪ সাল। পাড়ুইয়ের কসবা পঞ্চায়েতের গোপালনগর গ্রামে মা-বাবা, দুই ভাই, এক বোনের সঙ্গে থাকতেন চুড়কী। সেই সময়েই এক দিন ডাইন অপবাদ দিয়ে চুড়কীদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে সকলকে মারধর করে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে গ্রামবাসীদের একাংশের বিরুদ্ধে।

ভাই বোনদের মধ্যে সবচেয়ে বড়, নবম শ্রেণির ছাত্রী চুড়কির পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় তখন। বিভিন্ন জায়গায়, নানা আত্মীয়ের বাড়িতে দিন কাটাতে থাকে। বছরখানেক কাটানোর পর তাঁদের পরিবার বাঁধনবগ্রামে চলে আসে। ফের শুরু হয় নতুন করে পথ চলা। চুড়কী নিজের পড়াশোনা শুরু করে স্নাতক হন। পাশাপাশি পরিবারকে সাহায্য করতে একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন। সেখান থেকে যা উপার্জন হত এবং তাঁর বাবা-মা দিনমজুরের কাজ করে যা উপার্জন করতেন তাতেই চলে সংসার।

চুড়কীদের ওই সংস্থা অসহায় শিশুদের পড়াশোনা শেখানোর কাজ করে। সেখানে কাজ করতে করতেই গাড়ি চালানো শিখে নেন চুড়কী। কারণ পড়ানোর কাজে সংস্থার কর্মীদের বিভিন্ন গ্রামে যেতে হত। চুড়কী নিজেই গাড়ি চালিয়ে যেতেন, নিয়ে যেতেন সহকর্মীদের। এখন গাড়ি চালিয়েই তিনি করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে শুরু করে অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর, খাবারও। তাঁর কথায়, তাঁর কথায়, ‘‘এই পরিস্থিতিতে মানুষকে যদি কিছু সহযোগিতা করতে পারি তাহলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করব।’’

করোনা পরিস্থিতিতে বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের উদ্যোগে করোনা আক্রান্তদের সাহায্যের এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হন চুড়কী। মঞ্চের বোলপুর শাখার দায়িত্বে থাকা মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ও যেভাবে লড়াই করে বড় হয়েছে এবং এই পরিস্থিতিতে যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে তাতে ওর এই কাজ বাকিদের আরও উৎসাহ দেবে।” চুড়কীর বাবা বাদল হাঁসদা বলেন, “মিথ্যা অভিযোগে একদিন গ্রামের কিছু লোক আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তা বলে আমাদের মনুষ্যত্ব হারিয়ে যায়নি। তাই চুড়কী এই পরিস্থিতির মধ্যেও যতটা পারছে মানুষের সেবা করে যাচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Covid Warrior
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE