পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মানিক ভট্টাচার্য। ফাইল চিত্র।
নারদ-কাণ্ডে ‘প্রভাবশালী’ পুলিশ অফিসারের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ সামনে এসেছিল। কয়লা ও গরু পাচার কাণ্ডে রাজ্য পুলিশের একাধিক কর্তা এবং নিচুতলার অফিসারদের যোগসাজশের অভিযোগের তদন্ত করছে সিবিআই এবং ইডি। এ বার স্কুলে (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) নিয়োগে দুর্নীতির ক্ষেত্রেও অন্যতম নিয়ন্ত্রক হিসেবে রাজ্য পুলিশের এক প্রভাবশালী কর্তার নাম উঠে আসছে বলে ইডি সূত্রে দাবি।
টেট-দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতারের পরে ইডি সূত্রে খবর, এর আগে সারদা কাণ্ডেও ওই পুলিশকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই।
তদন্তকারীদের দাবি, এসএসসি দুর্নীতি কাণ্ডে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ‘বান্ধবী’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের সময়ে অর্পিতার দু’টি মোবাইল ছাড়াও তাঁর বাড়ি থেকে আরও ২০টি মোবাইল উদ্ধার হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল পার্থর মোবাইলও। ইডি সূত্রে দাবি, এর পরে যাদবপুরে মানিকের দু’টি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তাঁরও একটি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির সূত্রে দাবি, উদ্ধার হওয়া এই সমস্ত মোবাইলের দীর্ঘদিনের কল-লিস্ট পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে, এই তিন জনের মোবাইলেই একই সাংকেতিক নামে ওই পুলিশকর্তার মোবাইল নম্বর ‘সেভ’ করা রয়েছে!
শুধু তা-ই নয়, তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, ওই পুলিশকর্তার সঙ্গে মানিকের একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ-চ্যাটের তথ্য তাঁদের হাতে এসেছে। যা থেকে তাঁদের ধারণা, প্রশাসনের উঁচু মহল থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত নানা নির্দেশ আসত পার্থদের কাছে। সেই সব নির্দেশ ঠিকমতো পালন করা হচ্ছে কি না, তা ওই পুলিশকর্তাই খতিয়ে দেখতেন বলে ইডি সূত্রে দাবি। মানিকের মোবাইলে ‘ডিডি’ (DD) ও ‘আরকে’ (RK) বলে নাম সেভ থাকার যে খবর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির সূত্রে সামনে এসেছে, তাকে ঘিরে এখন সরগরম বঙ্গের রাজনীতিও।
এ নিয়ে সরকার তথা শাসকদলের শীর্ষ স্তরের দিকেই আঙুল তুলছেন বিরোধীরা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যেমন এ দিন ফেলুদাকে নিয়ে (সত্যজিৎ রায়ের ঋণ স্বীকার-সহ) কাল্পনিক সংলাপের একটি কমিক স্ট্রিপ পোস্ট করেছেন সমাজ মাধ্যমে। সেখানে যেন ‘নিয়োগ দুর্নীতি রহস্য’ সমাধানে নেমেছেন ফেলুদা। দেখানো হচ্ছে, ‘ডিডি’ এবং ‘আরকে’-ধাঁধার রহস্য ভেদ করতে যাওয়া ইডি-র আধিকারিককে ফেলুদা বোঝাচ্ছেন, ‘আরকে’ মানে ধরে নিন আর কে? অর্থাৎ গৌণ। তালিকায় সম্মতি দিচ্ছেন ‘ডিডি’। তিনিই মুখ্য। কমিকের ফেলুদার আরও প্রশ্ন, ‘আপনি বাংলার দিদি শব্দটি যদি ইংরেজিতে লিখে মোবাইলে সেভ করেন, তা হলে কী বানান লিখবেন’? উত্তর আসছে, ‘ডিডি, তা-ই তো’! এই কমিক স্ট্রিপ তুলে ধরে শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘এ ভাবে যদি রহস্যের জাল কেটে সত্য খুঁজে নেওয়া যেত, তা হলে হয়তো তদন্ত শীঘ্রই শেষ করে প্রকৃত দোষীদের সাজা দেওয়া যেত।’’
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘কল্পিত অভিযোগের জবাব হয় না! এ ক্ষেত্রে সত্য জানতে মানিক ভট্টাচার্যকে জেরা করা হোক। পাশাপাশি, সারদা-কাণ্ডে সত্য জানতে সুদীপ্ত সেনকেও জেরা করা হোক। তিনিই তো শুভেন্দু অধিকারী-সহ অনেকের নাম বলেছেন।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও অভিযোগ, ‘‘সব মিলিয়ে যে ৫৮ হাজার নিয়োগ হয়েছে, তার মধ্যে খুব বেশি হলে ২০ হাজার যথাযথ। ৮০ ভাগই দুর্নীতি।... ‘ডিডি’ মানে যে ‘দিদি’, সবাই বুঝে যাবে। আরকে-টা কে, তা-ও পরিষ্কার করতে হবে।’’... তৃণমূলের নেতারা বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন।’’ কুণালের অবশ্য দাবি, ‘‘তদন্ত হোক, দোষীর শাস্তি হোক। কিন্তু সেই সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়াও চালু রাখতে পদক্ষেপ করা হোক।’’
রাজ্যের রাজনীতি যখন ‘মানিকের মোবাইলে থাকা সাংকেতিক নাম’ নিয়ে সরগরম, তখন এক ইডি কর্তার অভিযোগ, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে জাল নথি তৈরি করে অযোগ্য প্রার্থীদের বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে।’’ সরকারি চাকরিতে চাকরিপ্রার্থীর পুলিশ ভেরিফিকেশন-এর শংসাপত্র লাগে। ওই পুলিশকর্তার তাতেও হাত রয়েছে বলে তাঁদের দাবি।
এক তদন্তকারী অফিসারের দাবি, ওই প্রভাবশালী পুলিশকর্তা নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রশাসনের উপর মহলের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতেন। মানিকের সঙ্গে ওই পুলিশকর্তার বেশ কয়েকটি হোয়াটসঅ্যাপ-চ্যাট সেই ইঙ্গিত দেয়। ইডি সূত্রের দাবি, সেখানে উপর মহলের অনুমোদনের তালিকা পাঠিয়ে তা কার্যকর করার জন্য স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন ওই পুলিশ কর্তা।
এক তদন্তকারী অফিসারের দাবি, সোমবার সিজিও কমপ্লেক্সে মানিককে ওই পুলিশকর্তার সঙ্গে চ্যাটের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে, তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ওই দিন প্রায় মধ্যরাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ইডি সূত্রের খবর, বুধবারেও ওই পুলিশকর্তার সঙ্গে তাঁর চ্যাটের বিষয়ে মানিককে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ইডি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘মানিকের বাড়ি থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়েছে। পার্থ-সহ প্রশাসনের উপর মহল থেকেও যে টাকার বিনিময়ে বেআইনি নিয়োগের সুপারিশ এসেছিল এবং তা কার্যকর করা হয়েছে, সে রকম কিছু তথ্য আমাদের হাতে এসেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy