—প্রতীকী ছবি।
জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল, মালদহের বামনগোলার পরে এ বারে আলিপুরদুয়ারের ঢেকলাপাড়া চা বাগান। মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকের এই বন্ধ বাগানের এক অসুস্থ শ্রমিকের পরিবার অ্যাম্বুল্যান্স চেয়েও না-পাওয়ায় বাড়িতে পড়ে থেকে কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হল ওই শ্রমিক সুশীল ওরাওঁয়ের (৪১)।
বীরপাড়া সাধারণ হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছিল, অ্যাম্বুল্যান্সটি বিকল। এ দিকে বাগান থেকে মজুরি জুটছিল না বলে সুশীলের পরিবারের সঙ্গতি ছিল না গাড়ি ভাড়া করে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার। এই ঘটনায় এক দিকে বাগানগুলির পরিস্থিতি এবং অন্য দিকে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠে গেল।
কিছু দিন আগে জলপাইগুড়ি মেডিক্যালে অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে বৃদ্ধার দেহ কাঁধে তুলে বাড়ির পথে হাঁটা দিয়েছিলেন স্বামী-ছেলে। গ্রামের বেহাল রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে রাজি না হওয়ায় খাটিয়ায় করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে গিয়ে সম্প্রতি মালদহের বামনগোলায় মৃত্যু হয় এক রোগিণীর। এ বারে সুশীলের মৃত্যু। এই নিয়ে বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালের সুপার কৌশিক গড়াই বলেন, ‘‘হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্সটি বিকল। ওঁদের বলি, অন্যও কোনও গাড়ি করে রোগীকে নিয়ে আসতে। গাড়িভাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মিটিয়ে দেবেন।’’
জেলাশাসক আর বিমলা বলেছেন, ‘‘যোগাযোগ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির জেরে ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। বিষয়টি দেখা হচ্ছে। প্রশাসন পরিবারটির পাশে রয়েছে। সমব্যথী প্রকল্পে মৃতের শেষকৃত্যের জন্য পরিবারের হাতে দু’হাজার টাকা তুলে দেওয়া হবে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার অসুস্থ হয়ে পড়েন সুশীল। পুজোর সময় থেকে বন্ধ এই বাগান। ফলে, দু’মাস ধরে মজুরি পাচ্ছেন না শ্রমিকেরা। এই পরিস্থিতিতে অসুস্থ পরিজনকে গাড়ি ভাড়া করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি পরিবারটির পক্ষে।
মৃতের দাদা রাজু ওরাওঁ বলেন, ‘‘ভাইয়ের অবস্থা দেখে বীরপাড়া হাসপাতালে ফোন করি। হাসপাতাল থেকে জানায়, অ্যাম্বুল্যান্স খারাপ। দু’মাস ধরে বাগান বন্ধ থাকায় বেতন নেই। টানাটানির সংসার। গাড়ি ভাড়া করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কোথায়? ফলে, বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই ভাই মারা গেল!’’
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (ভারপ্রাপ্ত) কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। তবে এটাও বাস্তব, যে আমাদের সরকারি হাসপাতালগুলিতে মা ও সন্তান ছাড়া, অন্য রোগীদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি থেকে বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতালে একটি অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চালক দেওয়া হয়নি। অ্যাম্বুল্যান্সটিও খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে।’’
মাদারিহাটের বিধায়ক তথা রাজ্য বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘‘শুধু ভোট পেতে চা শ্রমিকদের সঙ্গে ছেলেখেলা করছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। সে জন্যই মৃত্যুর আগে সামান্য চিকিৎসা পরিষেবা থেকেও বঞ্চিত হতে হচ্ছে তাঁদের।’’ রাজ্যসভার সদস্য তথা তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি প্রকাশ চিক বরাইক বলেন, ‘‘মনোজ টিগ্গা ২০১৬ থেকে বিধায়ক। এত দিনে বিধায়ক হিসেবে তিনি নিজে চা শ্রমিকদের জন্য কী করেছেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy