Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
BSF

গরু: গোয়েন্দা-নজরে বিএসএফের একাংশ

এক তদন্তকারী অফিসারের হিসাব অনুযায়ী, জেনারুল বিএসএফের কাছ থেকে ২০১৯ সালের আগে পর্যন্ত ১৮০০ গরু কিনেছিলেন। তার মধ্যে ১২০০ গরুকেই মৃত বা নিখোঁজ দেখিয়ে বাংলাদেশে পাচার করে দেন তিনি।

সিআইডি-র নজরে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি অংশ।

সিআইডি-র নজরে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি অংশ। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৪৬
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে গরু পাচারের তদন্তে নেমে বিএসএফ বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কমান্ডান্ট স্তরের এক অফিসারকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। সিআইডি-ও গরু পাচার কাণ্ডে তাদের তরফে প্রথম গ্রেফতারের পরে মনে করছে, বিএসএফের মদত ছাড়া ধৃত জেনারুল শেখের পক্ষে কোনও ভাবেই এই পাচার চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। ফলে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি অংশ এখন সিআইডি-র নজরে।

সিআইডি সূত্রের খবর, জেনারুল খোঁয়াড় চালাতেন। রঘুনাথগঞ্জে তাঁর চারটির বেশি খোঁয়াড় রয়েছে। অবৈধ ভাবে ও-পারে পাঠানোর আগে মুর্শিদাবাদ ও মালদহের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বিএসএফ যে-সব গরু আটক করত, তাদের নিজের বিভিন্ন খোঁয়াড়ে রাখতেন জেনারুল। পরে সুযোগ বুঝে তিনি সেই সব গরু পাচার করতেন বলে জানাচ্ছে সিআইডি। জেনারুলের কর্মকৌশল সম্বন্ধে তদন্ত করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, বিএসএফের কাছ থেকে তিনি যে-সব গরু নিয়ে আসতেন, কিছু দিন পরে তাদের বড় অংশকেই খাতায়-কলমে মৃত বলে দেখিয়ে দিতেন। আসলে সেই সব গরুকে পাচার করে দেওয়া হত বাংলাদেশে। অনেক সময় যুক্তি দেখানো হত, খোঁয়াড়ে অনেক গরুর মৃত্যু হয়েছে, তাই তাদের নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।

এক তদন্তকারী অফিসারের হিসাব অনুযায়ী, জেনারুল বিএসএফের কাছ থেকে ২০১৯ সালের আগে পর্যন্ত ১৮০০ গরু কিনেছিলেন। তার মধ্যে ১২০০ গরুকেই মৃত বা নিখোঁজ দেখিয়ে বাংলাদেশে পাচার করে দেন তিনি। তদন্তকারীদের দাবি, এই কাজে বিএসএফের একটি অংশ নিয়মিত সাহায্য করত জেনারুলকে। গরু পাচারের টাকার ভাগ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছেই যেত বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। সিআইডি জানতে পেরেছে, গরু পাচার বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

শনিবার দুপুরে জেনারুলকে গ্রেফতার করে সিআইডি। রবিবার তাঁকে জঙ্গিপুর আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁকে ১২ দিনের জন্য সিআইডি-র হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। জঙ্গিপুরের সরকারি আইনজীবী রাতুল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর রঘুনাথগঞ্জ থানায় দায়ের করা গরু পাচারের একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে জেনারুলকে। ওই মামলায় এফআইআরে দুই অভিযুক্তের নাম ছিল। তাঁরা জামিনে আছেন। রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ ওই মামলায় চার্জশিটও দিয়েছে ৪০৬, ৪২০ এবং জীবজন্তুর উপরে নির্যাতন সংক্রান্ত ধারায়। সম্প্রতি সেই পুরনো মামলার তদন্তভার নিয়েছে সিআইডি। চার্জশিটে অতিরিক্ত ৪০৯ ধারা যুক্ত করে জেনারুলকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে তারা। সব ক’টি ধারাই জামিন-অযোগ্য। জেনারুল গরু পাচার কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে ধৃত এনামুল হকের ঘনিষ্ঠ বলেও জানিয়েছে সিআইডি। তদন্তকারীদের দাবি, এনামুল ও জেনারুল একসঙ্গেই গরু পাচারের চক্র চালাতেন।

সিআইডি-র খবর, জেনারুলকে হেফাজতে নিয়ে গরু পাচারে পুলিশ, বিএসএফ ও খোঁয়াড়-মালিকদের যোগসাজশ খুঁজে বার করার চেষ্টা হবে। স্থানীয় পুলিশের একাংশও ওই চক্রে জড়িত বলে প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। এখন অনেকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি হয়ে গেলেও তদন্তে তাঁদের ডাকা হবে বলে সিআইডি-র তরফে জানানো হয়েছে।

রঘুনাথগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক তথা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আখরুজ্জামানের সঙ্গে একটি মিছিলে দেখা গিয়েছে জেনারুলকে। সেই ছবি সমাজমাধ্যমে ঘুরছে। আখরুজ্জামান বলেন, ‘‘রাস্তাঘাটে অনেকেই আমার সঙ্গে ছবি তুলতে পারে। তবে জেনারুলকে আমি চিনি। কেউ যদি কোনও অপরাধ করে থাকে, তার সাজা সে পাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

BSF Cow Smuggling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy