মিড-ডে মিলে পড়ুয়াদের সঙ্গে শ্যামল টিগ্গা। নিজস্ব চিত্র
স্কুল তখনও খোলেনি। মিড-ডে মিলের রান্নার ঘরেও তালা ঝুলছে। যদিও তালাবন্ধ রান্নাঘরের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে রয়েছেন তিনি, বছর বাহান্নর শ্যামল টিগ্গা।
না, তিনি শিক্ষক, অভিভাবক বা কর্মী—কেউই নন। তবু তিনি রোজ আসেন, অপেক্ষা করেন রান্না হওয়ার। তা হলেই দিনে অন্তত একবার খেতে পাবেন। জানালেন, আগের দিন দুপুরে খেয়েছিলেন। তার পর থেকে ভাত জোটেনি। দু’মুঠো ভাতের আশায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তা উজিয়ে এসে তপনের মহাদেববাটী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দিন দুয়েক হল বসে থাকছেন শ্যামল।
তপনের ৪ নম্বর হরসুরা অঞ্চলের সিরাহাল গ্রামে শ্যামলের বাড়ি। বিয়ের কয়েক বছর পরেই স্ত্রী ছেড়ে চলে যায়। সেই থেকে একাই থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে দু’টি চোখের দৃষ্টিও ঝাপসা হয়ে যায়। চিকিৎসার অভাবে এখন প্রায় দৃষ্টিহীনই হয়ে গিয়েছেন বলা চলে। অসুবিধে হয় হাঁটাচলাতেও। লাঠিতে ভর দিয়ে কোনও মতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলেন। ভাঙা একটি কুঁড়ে ঘরে থাকেন। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত যেতে পারেন না বলে চোখের চিকিৎসা হয়নি। প্রতি দিন ভিক্ষেও জোটে না গ্রামে।
শ্যামলের কথায়, ‘‘দু’দিন কিছু খেতে পাইনি। ভিক্ষেও পাই না৷ তাই মাস্টারমশাইকে বলেছি একটু খেতে দিতে।’’ তার পরেই হাহাকার ভেসে আসে, ‘‘আমার যে কেউ নেই।’’
শ্যামল জানান, সরকারি কোনও সুযোগ-সুবিধা পাননি। কোনও দিন অনাহারে তো কোনও দিন অর্ধাহারে থাকতে হয়। খিদের জ্বালায় বৃহস্পতিবার এই মহাদেববাটী স্কুলে এসেছিলেন। স্কুলশিক্ষক কৌশিকরঞ্জন খাঁ তাঁকে মিড-ডে মিলের খাবার দেন। শুক্রবার ফের স্কুল খোলার আগেই এসে হাজির হন শ্যামল। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এ দিনও তাঁকে খেতে দেওয়ার পাশাপাশি রাতের ভাতও দিয়ে দিয়েছেন।
কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘মিড-ডে মিলে পড়ুয়া ছাড়া বাইরের কারও খাবার বরাদ্দ থাকে না। মানবিকতার কারণে আমরা তাঁকে খেতে দিয়েছি। এটা আমাদের লজ্জা যে এক জন মানুষ না খেতে পেয়ে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ছেন। রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে।’’
তপনের বিডিও সগেল তামাং বিষয়টি জানার পর বলেন, ‘‘প্রশাসনের ক্ষমতা অনুযায়ী সব রকম সাহায্য করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy