মায়ের সঙ্গে বশিরুল। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
গত ১৮ বছর ধরে কাশ্মীরের সঙ্গে সম্পর্ক। বছর শেষের দেড়-দু’খানা মাস কাজ করি, তার পর কিছু বাড়তি আয় করে ফিরে যাই গ্রামে। এটাই দস্তুর হয়ে গিয়েছে।
প্রতি বার কাতরাসুর ওই ঘরেই গিয়ে উঠি। গ্রামের অন্যরাও থাকেন, কাজ শেষে বাড়ির কথা, গল্প-আড্ডা সবই হয়। চাপা অসন্তোষ টের পাই, তবে কাশ্মীরে এসে কখনও অপ্রীতিকর ঘটনার সামনে পড়িনি।
আশ্বিন কার্তিক মাসে বাহালনগর বা তার আশপাশের গাঁ-গঞ্জে তেমন কাজ থাকে না। তাই কাশ্মীর গিয়ে দু’টি বাড়তি আয়ের আশা নিয়ে ফি বছরই পাড়ি দিই।
চিত্রাগাঁওয়ে ইতিমধ্যেই গ্রামের কয়েক জন গিয়েছে। বুকে বল পেয়ে আমরাও পাড়ি দিলাম কাতরাসু। সপ্তাহ তিনেক আগে পৌঁছই সেখানে। কিন্তু যাওয়ার দিন পাঁচেকের মধ্যেই বুঝতে পারলাম, ভুল করে ফেলেছি। এ সেই চেনা কাশ্মীর নয়। বাজারের দেওয়ালে দেওয়ালে উর্দুতে লেখা পোস্টারে ছেয়ে গেল— বহিরাগতরা পাততাড়ি গোটাও। পড়তে পারিনি, কিন্তু বাগান মালিক আর স্থানীয় লোকজনেরাই বলতে শুরু করলেন, এ ভাল ইঙ্গিত নয়। এক দিন বাজারের সামনে স্থানীয় একটি লোককে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেয়া লিখখা হ্যায় ভাই?’ বলল— ‘বাহার কা লোগ কাশ্মীর ছোড় কার ভাগো!’ আশঙ্কা জাগল ঠিকই তবে কাজ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা কেউ ভাবিনি। তবে, দিন কয়েকের মধ্যেই বাগান মালিক আড়ালে ডেকে বললেন, ‘নাহ, তোমাদের ফিরে যাওয়াই ভাল। না হলে ঝুঁকি হয়ে যাবে।’ ঠিক হল ৩০ তারিখ সকালে রওনা দেব আমরা।
সে সন্ধেয়, সাতটা নাগাদ আজান শুরু হতেই আমি বেরিয়ে গেলাম খাবার আনতে। পর দিন সকালে ফিরব, গোছগাছ তোড়জোড় চলছিল। আমি বেরিয়ে গেলাম। কত হবে, বড়জোর মিনিট বিশেক, ভাত নিয়ে যখন ডেরায় ফিরে দেখলাম কেউ নেই। মালপত্র সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। কী হল? একটু চিন্তা হল আমার, খাবারটা ঘরে রেখে নীচে নামতেই এক দোকানদার হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এসে বললেন, ‘‘আরে ভাই ভাগো হিঁয়া সে, কাতল্ কর দেঙ্গে, সব গড়বড় হো গিয়া।’’
আমি অন্ধের মতো বাগান মালিকের বাড়ির দিকে ছুটলাম। সেখানে পৌঁছেই বুঝলাম বড় কোনও কাণ্ড হয়ে গিয়েছে, দেখলাম সন্ত্রস্ত মুখে ঘরে পায়চারি করছেন বাগান মালিক। বললেন, ‘চুপ রাহো, বাহার মাত যাও!’ তার পরেই কানে এল ফটফট, গুলির শব্দ। কালীপুজোর রাতে যেমন বাজি ফাটে, পর পর, অজস্র, শেষই হচ্ছে না যেন। খানিক পরেই সেনা বাহিনীর জওয়ানেরা এসে আমাকে ডেকে নিয়ে গেল। দেখলাম একের পর এক পরে আছে রফিক, কামিরুদ্দিন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে মাটি। আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। এই মাত্র যাঁদের সঙ্গে গল্প করে গেলাম তাঁদের এই হাল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy