প্রতীকী ছবি।
নদীর ও-পারে তুমি আর এ-পারে আমি নয়। সমুদ্রের এক পারে স্বামী, অন্য পারে স্ত্রী। বিরহ-বৃত্তান্ত নয়। বিচ্ছেদের মামলা। টেক্সাসে স্বামী আর কলকাতায় স্ত্রীর মধ্যে সেই মামলার শুনানি চলল ‘জ়ুম’ প্রযুক্তিতে।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা নেই বেশ কয়েক বছর ধরে। মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী কলকাতায়। স্বামী মার্কিন মুলুকে। গত বছর টেক্সাসের কাউন্টি আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেন স্বামী। আদালতে হাজিরার জন্য সেখান থেকে কলকাতায় ই-মেলে নোটিস আসে বার তিনেক। কলকাতায় স্ত্রীর কৌঁসুলি, কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী চন্দ্রশেখর বাগ ই-মেলে জানান, যাতায়াতের বিমান-ভাড়া, টেক্সাসে গিয়ে থাকা এবং সেখানে আইনি লড়াইয়ের খরচ বহন করলে তিনি এবং তাঁর মক্কেল যাবেন। কিন্তু সেই চিঠির জবাব আসেনি।
এর মধ্যেই বিশ্বের ছবি বদলে দেয় করোনা। সাধারণ যাত্রিবাহী আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ। কলকাতার সঙ্গে টেক্সাসের ‘জ়ুম’-এ শুনানির জন্য নোটিস আসে জুলাইয়ে। চন্দ্রশেখর জানান, ১ সেপ্টেম্বর তাঁকে ই-মেল করে জ়ুমের আইডি এবং পাসওয়ার্ড পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ শুরু হয় শুনানি, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।
চন্দ্রশেখর বলেন, “আমার মক্কেলের স্বামী সে-দেশের নাগরিক নন, গ্রিন কার্ড হোল্ডার। তাই সে-দেশের আদালতে তাঁদের বিচ্ছেদের মামলা চলতে পারে না। আমাদের আবেদন মেনে টেক্সাসের কাউন্টি আদালতের বিচারক বিবাহবিচ্ছেদের মামলা বাতিল করে দিয়েছেন।”
জ়ুম-মিটিংয়ে টেক্সাসের আদালতে সওয়াল করতে বা সেখানকার কৌঁসুলি বা বিচারকের কথা বুঝতে অসুবিধা হয়নি? সাধারণত সে-দেশের বাসিন্দাদের ইংরেজি উচ্চারণ এ দেশের বেশির ভাগ মানুষেরই বুঝতে অসুবিধা হয়। সামনাসামনি ঠোঁটের নড়াচড়া থেকে অনেকটা বোঝা যায়। কিন্তু জ়ুম-মিটিংয়ে কি সেটা সম্ভব?
চন্দ্রশেখর বলেন, “আমার তো এই অভিজ্ঞতা প্রথম। জ়ুম-মিটিংয়ের শুরুতেই মার্কিন বিচারক স্কট জেনকিন্স খুব কড়া ভাবে আমাকে বলেন, ‘এই আদালতে মামলা লড়ার এক্তিয়ার নেই আপনার। কিন্তু আমি বিশেষ ক্ষমতাবলে আপনাকে সেই ক্ষমতা দিচ্ছি।’ আমিও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নই। আমি পাল্টা বলি, এই বিবাহবিচ্ছেদের মামলা শোনারই এক্তিয়ার নেই আপনার আদালতের। এটা সম্পূর্ণ ভাবে আমাদের দেশের আইনি বিষয়। শুধু আপনারা যোগ দিতে বলছেন বলে যোগ দিয়েছি।”
চন্দ্রশেখর জানান, প্রথমেই এই কথোপকথনের পরে সুর নরম হয়ে যায় বিচারক জেটকিন্স এবং অন্য পক্ষের কৌঁসুলি জেসাস অ্যাগুয়ার-এর। তিনি যে তাঁদের ভাষা ঠিক ভাবে বুঝতে পারছেন না, চন্দ্রশেখর তা-ও জানান। তার পরে তাঁর এবং সঙ্গী জুনিয়রের যাতে বুঝতে সুবিধা হয়, সে-ভাবে ধীরে ধীরে বলতে থাকেন তাঁরা। দু’পক্ষের সওয়ালের পরে বিচারক জানান, এই মামলা তাঁরা আর শুনবেন না। অ্যাগুয়ারকে তিনি সরাসরি চন্দ্রশেখরের সঙ্গে যোগাযোগ করে দু’পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে বলেন।
আর তা যদি না-হয়? চন্দ্রশেখর জানান, হিন্দু বিবাহ আইন অনুযায়ী বিয়ে হয়েছে কলকাতায়। সমঝোতার মাধ্যমে বিচ্ছেদ হয়ে গেলে আলাদা কথা। কিন্তু আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে গেলে সেটা করতে হবে এ দেশেই। অন্য পক্ষকে আসতে হবে কলকাতায়। ‘‘আমার মক্কেলের স্বামীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই থানায় অভিযোগ করেছি। উনি যদি মার্কিন দেশের নাগরিক হতেন, তা হলে অবশ্য সে-দেশের আদালতে শুনানি হতে পারত,” বলেন চন্দ্রশেখর।
যিনি টেক্সাসে মামলা ঠুকেছিলেন, সেই ইন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ফোনে বলেন, “আমার কৌঁসুলির সঙ্গে কথা না-বলে আমি কিছু বলতে পারব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy