প্রতীকী ছবি।
সালিশি সভার মধ্যেই শিবগাতুল্লা শেখ (৫০) নামে এক প্রৌঢ়কে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল তাঁর জামাইয়ের বিরুদ্ধে। রবিবার সকালে
মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর শহরের রাধানগর পল্লির এই ঘটনায় পুলিশ শিবগাতুল্লার জামাই মিজানুর হাসান, মিজানুরের বাবা মাসুদ হাসান, মাসুদের এক ছেলে সেজানুর হাসান ও মাসুদের স্ত্রী জাহেরা বিবিকে গ্রেফতার করেছে। সালিশিতে উপস্থিত পড়শি রেগান শেখ বলেন, ‘‘সালিশির সিদ্ধান্ত মানতে চাননি মিজানুররা। সেই রাগেই তাঁরা আচমকা ঝাঁপিয়ে পড়ে শিবগাতুল্লাকে মারধর করতে শুরু করেন। অন্যরা ছুটে যাওয়ার আগেই মারের চোটে তিনি লুটিয়ে পড়েছিলেন।’’ হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও বাঁচানো যায়নি।
প্রশ্ন উঠেছে, সালিশি সভার মধ্যে এমন ঘটনা ঘটতে পারল কী করে? বাকিরা আটকালেন না? সালিশিতে উপস্থিত সরফরাজ খান বলেন, ‘‘দুই পক্ষ পাশাপাশি বসেছিল। প্রথমে তর্ক হচ্ছিল। আচমকা হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। আমরা উঠে গিয়ে ওদের ছাড়াতে যাই। অনেক কষ্টে ওদের চার জনকে সরিয়ে শিবগাতুল্লাকে মুক্ত করার পরে দেখি ওর মধ্যেই তিনি প্রচণ্ড চোট পেয়েছেন।’’ পড়ে গিয়ে জখম হয়েছেন সাবিনার দিদিও।
জঙ্গিপুরের এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পারিবারিক বিবাদ মীমাংসা করতে সালিশির রেওয়াজ এই এলাকায় রয়েছে। কিন্তু বাকিরা কী করছিলেন, তা দেখছে পুলিশ।’’
টাকা ধার দিয়ে সুদের ব্যবসা করেন মিজানুর। তাঁর বাবাও একই ব্যবসা করেন। মিজানুরের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। তার পরে তিনি বিয়ে করেন শিবগাতুল্লার কন্যা সাবিনাকে। তাঁদের একটি আড়াই বছরের কন্যাও রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি মিজানুর আরও একটি বিয়ে করেন বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে বিবাদেই সালিশি ডাকা হয়। সালিশিতে ছিলেন দুই পরিবারের আত্মীয়স্বজন এবং গ্রামের কয়েক জন। তাঁদের অন্যতম রেগান শেখ বলেন, ‘‘মিজানুরের দু’টি বাড়ি রয়েছে। সালিশিতে ঠিক হয়, দু’টি বাড়ির একটি সাবিনা ও তাঁর মেয়ের জন্য মিজানুরকে ছেড়ে দিতে হবে। সাবিনাদের ভরণপোষণের দায়ও নিতে হবে। এই সিদ্ধান্ত অস্বীকার করেন মিজানুররা। তার পরে মিজানুর, তাঁর বাবা, মা ও এক ভাই চড়াও হন শিবগাতুল্লার উপরে।’’ শিবগাতুল্লাকে উদ্ধার করে মাইল চারেক দূরে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভর্তির কিছু ক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর।
সাবিনার কথায়, ‘‘ওরা পরিকল্পনা করেই এসেছিল বলে আমার আশঙ্কা। না হলে এমন আচমকা বাবার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ত না। বাকিরা চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি।’’ সালিশিতে উপস্থিত মহম্মাদুর হোসেনও বলেন, ‘‘এত আচমকা সব ঘটে গেল যে, আমরা ওদের ছাড়ানোর আগেই শিবগাতুল্লা মারাত্মক ভাবে আহত হয়ে যান।’’
ঘটনায় হতবাক জঙ্গিপুরের সাংসদ তৃণমূলের খলিলুর রহমানও। তাঁর কথায়, ‘‘পারিবারিক বিবাদে অনেক সময় আত্মীয়স্বজনেরা বসে সালিশি করে সিদ্ধান্ত নেন। এমন রেওয়াজ আমাদের এখানে রয়েছে। কিন্তু তার এমন পরিণতি হবে, ভাবতেও পারছি না।’’ এই এলাকা জঙ্গিপুর পুর এলাকার মধ্যে। পুরপ্রধান তৃণমূলের মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘‘সালিশিতে শুধু দুই পরিবারের লোকেরাই ছিলেন। কিন্তু কী করে এক প্রৌঢ়কে সকলের সামনে পিটিয়ে মারা হল, তার খোঁজ নিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy