প্রতীকী ছবি।
থানায় গিয়ে নিজের নাবালিকা মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ জানিয়েছিল বাবা। তদন্তে নেমে পুলিশ অবশ্য জানতে পারল, দুই পরিবারের সম্মতিতেই ১৪ বছরের ওই নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হয়েছিল মন্দিরে। ঘটা করে অনুষ্ঠানও হয়েছিল। মাংস-ভাত খেয়েছিল অন্ততদু’শো লোক।
ঝাড়গ্রাম জেলার এই ঘটনায় নাবালিকার বাবা, পাত্রের বাবা, পাত্র-সহ মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে পাত্রের কাকা ও এক আত্মীয়ও রয়েছে। পাঁচ জনের বিরুদ্ধেই পকসো ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। রয়েছে প্রোহিবিশন অব চাইল্ড ম্যারেজ অ্যাক্টের ৯-১০ ধারাও। রবিবার ধৃতদের ঝাড়গ্রাম সিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশ সূত্রে খবর, পকসোয় মামলা হওয়ায় ধৃতদের সোমবার ফের ঝাড়গ্রামের বিশেষ আদালতে তোলা হবে। জেলার পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিন্হা বলেন, ‘‘অপহরণের অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমে আমরা জানতে পারি, নাবালিকার বাপের বাড়ির ইচ্ছাতেই বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নাবালিকার বিয়ে দেওয়া অপরাধ। তাই তার বাবাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
উদ্ধারের পরে নাবালিকার মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়েছিল। মেডিক্যাল রিপোর্টে চিকিৎসক জানান, গত ছ’মাস ধরে ওই নাবালিকার সঙ্গে লাগাতার সহবাস হয়েছে। আদালতে বাপের বাড়িতে ফিরে যেতে অস্বীকার করে নাবালিকা। আদালতের নির্দেশে তার ঠাঁই হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি হোমে।
পুলিশ সূত্রে খবর, করোনা কালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার পরে স্কুলছুট হয়ে গিয়েছে ওই নাবালিকা। ইতিমধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে প্রতিবেশী এক তরুণের সঙ্গে। দু’জনে বেশ কয়েক বার পালিয়েও গিয়েছিল। ওই তরুণের এক আত্মীয় জানালেন, তিন বার পালানোর পরে দুই পরিবারের সিদ্ধান্ত মতোই গত মার্চে স্থানীয় মন্দিরে তাদের বিয়ে হয়েছিল। এপ্রিলে সামাজিক অনুষ্ঠানও হয়। তার পরে শ্বশুরবাড়িতেই ছিল নাবালিকা। কিন্তু গত মাসে ঘটে বিপত্তি। নাবালিকার বাপের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির গন্ডগোল হয় অম্বুবাচীর দিন। দুই পরিবারের লোকজনের মধ্যে মারপিটও হয়। তার পরেই গত শুক্রবার পাত্র-সহ চার জনের নামে লিখিত অভিযোগ জানায় নাবালিকার বাবা। পুলিশ অপহরণের ধারায় মামলা রুজু করে এবং নাবালিকাকে উদ্ধারও করে।
শনিবার গ্রামীণ হাসপাতালে নাবালিকার মেডিক্যাল পরীক্ষার পরে নাবালিকাকে আদালতে তোলা হয়। গোপন জবানবন্দি দেয় সে। পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে হয়েছে জেনে পুলিশ অভিযোগকারী নাবালিকার বাবা-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে।
করোনা কালে জঙ্গলমহলের এই জেলায় নাবালিকা বিয়ের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। বহু স্কুলছুট কন্যা আঠারোর আগেই বসেছে বিয়ের পিঁড়িতে। অনেকে আবার বৌয়ের বেশে মাধ্যমিক দিয়েছে। এই প্রবণতা বিপজ্জনক, মনে করাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘নাবালিকা মেয়েরা বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মা হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চা ও মা দু’জনেই অপুষ্টি ও নানা রোগে ভুগছে।’’ এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘নাবালিকা বিয়ে ঠেকাতে সচেতন করা হবে। প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ ভাবে নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy