Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Death

ট্রলি চাওয়ায় দুর্ব্যবহার, জরুরি বিভাগ পর্যন্ত যাওয়া গেল না, অ্যাম্বুল্যান্সেই মৃত যুবক

রবিবার সকালে এই ঘটনায় অশান্ত হয়ে ওঠে নদিয়ার শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল চত্বর। মৃত যুবকের নাম অখিল সরকার (২৯)। বাড়ি চাপড়ার কল্যাণদহ এলাকায়।

অ্যাম্বুল্যান্সে অখিলের দেহ। পাশে স্ত্রী প্রীতিলতা। রবিবার।  ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

অ্যাম্বুল্যান্সে অখিলের দেহ। পাশে স্ত্রী প্রীতিলতা। রবিবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সুস্মিত হালদার 
কৃষ্ণনগর  শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৪৯
Share: Save:

জরুরি বিভাগের সামনে অ্যাম্বুল্যান্সে পড়ে কিডনির রোগে মুমূর্ষু যুবক। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে ভিতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রলি পাননি বাড়ির লোকজন। অভিযোগ, নার্স থেকে নিরাপত্তা রক্ষী সকলের কাছে সাহায্য চেয়ে দুর্ব্যবহার ছাড়া কিছু জোটেনি, তা নিয়ে বলতে গেলে উল্টে রোগীর শ্বশুরকে মাটিতে ফেলে মারধর করা হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে এক চিকিৎসক এসে যুবককে পরীক্ষা করে জানান, তিনি ‘মৃত’।

রবিবার সকালে এই ঘটনায় অশান্ত হয়ে ওঠে নদিয়ার শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল চত্বর। মৃত যুবকের নাম অখিল সরকার (২৯)। বাড়ি চাপড়ার কল্যাণদহ এলাকায়। ডাক্তার দেখার আগে মৃত্যু হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ময়নাতদন্ত করিয়ে তবেই মৃতদেহ দেওয়া হবে বলে জানান। নারাজ পরিজন জরুরি বিভাগের সামনে দেহ শুইয়ে রেখে ধর্না শুরু করেন। শেষমেশ হাসপাতাল থেকে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ না নিয়েই তাঁরা মৃতদেহ নিয়ে চলে যান। পরে বাইরের এক ডাক্তারের থেকে সার্টিফিকেট জোগাড় করে দেহ সৎকার করা হয়।

স্বাভাবিক ভাবেই, বিরোধীরা এই ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন। নদিয়ার রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে স্বাস্থ্য দফতর দেখেন। তার পরেও সরকারি হাসপাতালের কী হাল, তা এই ঘটনায় স্পষ্ট।” নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি কল্লোল খাঁ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতর সামলাচ্ছেন। হাসপাতাল সুপার এবং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে বলেছি গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে কড়া পদক্ষেপ করতে।” হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত সরকার বলেন, “যদি কারও দোষ প্রমাণ হয়, কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।”

নদিয়ার জেলা হাসপাতালে এই সমস্যা নতুন নয়। কর্মীদের একাংশের দাবি, ২০-২৫টি ট্রলি থাকলেও রোগীর পরিবার যাতে টাকা দিয়ে সেগুলি নিতে বাধ্য হন, তার জন্য কিছু ‘বহিরাগত যুবক’ সেগুলিকে লুকিয়ে রাখে। মৃতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, টোটোচালক ওই যুবক দীর্ঘ দিন ধরেই কিডনির অসুখে ভুগছিলেন। বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে রবিবার সকালে তাঁকে চাপড়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা জেলা হাসপাতালে ‘রেফার’ করে। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ তাঁরা কৃষ্ণনগরে জেলা হাসাপাতালে আসেন।

মৃতের শ্বশুর কালাচাঁদ সরকারের অভিযোগ, “জামাইকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা হন্যে হয়ে ট্রলির খোঁজ করতে থাকি। আশপাশে কোথাও ট্রলি পাইনি। আমি বাধ্য হয়ে এক নার্সের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাহায্য করার বদলে উল্টে অপমান করেন। মূল ফটকে নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে গেলে তারাও অত্যন্ত দুর্বব্যবহার করে। আমি প্রতিবাদ করায় সাত-আট জন মিলে আমায় মাটিতে ফেলে মারধর করে।” যদিও রক্ষীদের পাল্টা দাবি, কালাচাঁদ এক মহিলা কর্মীকে গালিগালাজ করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে হাসপাতাল কর্মীদের হাতে মার খেতে দেখে চত্বরে উপস্থিত অন্যান্য রোগীর পরিবারের লোকজন উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। কোতোয়ালি থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

কালাচাঁদের আক্ষেপ, “ছেলেটাকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে জরুরি বিভাগ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া গেল না। সেখান থেকে কোনও ডাক্তার এসেও দেখলেন না। বিনা চিকিৎসায় এতক্ষণ ধরে কষ্ট পেয়ে ছেলেটা মারা গেল।” ট্রলি যখন অমিল, জরুরি বিভাগ থেকে ডাক্তার আসতে আড়াই ঘণ্টা লাগল কেন? কর্তব্যরত চিকিৎসক সুবীর রায়ের বক্তব্য, “রোগী দেখায় ব্যস্ত ছিলাম। আমাকে যখন জানানো হয়, তখনই গিয়েছি।” কেন তাঁকে আরও আগে জানানো হল না? ওয়ার্ড মাস্টারের দায়িত্বে থাকা জনি পাল তার সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, “রোগীর বাড়ির লোককে বলেছিলাম, যে ভাবে হোক রোগীকে ভিতরে নিয়ে আসুন।” সুপার বলেন, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। গোটা ঘটনার তদন্ত হচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Death Nadia Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy