Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Inmate

অপেক্ষায় নবতিপর মা, বৃদ্ধ বন্দির বাড়ির খোঁজ মিলল নেপালে

৩৯ বছর ধরে এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলে বন্দি রয়েছেন দীপক। দার্জিলিঙে একটি খুনের মামলায় অভিযুক্ত তিনি। কিন্তু সেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়নি এখনও।

মনোমায়াদেবী।

মনোমায়াদেবী।

সুনন্দ ঘোষ ও বিতান ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২০ ০৫:৪৮
Share: Save:

নেপালে পাহাড়ের উপরে, লুম্বক নামের একটি গ্রামে খুঁজে পাওয়া গেল দীপক জোশীর নবতিপর মাকে।

৩৯ বছর ধরে এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলে বন্দি রয়েছেন দীপক। দার্জিলিঙে একটি খুনের মামলায় অভিযুক্ত তিনি। কিন্তু সেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়নি এখনও। যাঁদের তিন কুলে কেউ নেই, সেই সব বন্দিকে সাহায্য করতেও সরকারি ব্যবস্থা থাকার কথা। কিন্তু, ৭৫ বছরের ভিন্ দেশি এই মানুষটা আজ পর্যন্ত সেই সুবিধা পাননি।

পশ্চিমবঙ্গ রেডিয়ো ক্লাবে দীপকের বিষয়টি জানিয়েছিলেন নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে ধৃত এক রাজনৈতিক বন্দি। ওই ক্লাবের সদস্য, আইনজীবী হীরক সিংহ সম্প্রতি দমদম জেলে গিয়ে দেখা করে আসেন দীপকের সঙ্গে। তাঁর ওকালতনামায় সইও করিয়ে নেন। হীরকবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমরা ওঁর বাড়িটাও খুঁজে বার করতে পেরেছি। এটা আমাদের বড় সাফল্য। এর পরে দার্জিলিং আদালত থেকে সার্টিফায়েড কপি বার করে আমরা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে শুনানির আর্জি জানাব।’’

আরও পড়ুন: রাজ্য বিজেপিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, বুঝছেন দিল্লির নেতারা

এর মধ্যেই হীরকবাবুদের হাতে আসে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এক, দীপকের আসল নাম দুর্গাপ্রসাদ তিমনাসিয়া। বাড়ির নাম দীপক। জোশী তাঁর আসল পদবি নয়। দুই, তিনি নেপালের একতা মানাবিয়া নামে একটি স্কুলে পড়তেন। যার হদিস গুগলেও পাওয়া যায় না। তিন, ৪০ বছর আগে চাকরির খোঁজে তিনি দার্জিলিঙে আসেন। এক ব্যক্তি তাঁকে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। সুঠাম দেহ ও সরল মনের দীপক তা বিশ্বাস করেন। সেই ব্যক্তির পিছু পিছু ঘুরতে শুরু করেন। চাকরি পাওয়ার আশায় এক দিন ওই ব্যক্তির প্ররোচনায় এক যুবককে তিনি খুন করেন বলে অভিযোগ। তার পরেই শুরু হয় হাজতবাস।

আরও পড়ুন: বাইরের কাউকে ভয় পাবেন না: মমতা

রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের কথায়, “দীপকের আত্মীয়দের খুঁজতে আমরা মাঠে নেমে পড়ি। যোগাযোগ করা হয় কলকাতার নেপালি দূতাবাসের সঙ্গে। দূতাবাসের কর্তা আমাদের সাহায্য করার আশ্বাস দেন। কারণ, দীপক জামিন পেয়ে গেলে তাঁকে তো কোথাও রাখতে হবে।”

নেপালের রেডিয়ো ক্লাবের সদস্য সতীশ খান্ডেলওয়াল শুরু করেন খোঁজ। সম্প্রতি সেই একতা স্কুলের খোঁজ পেয়ে সেখানে হাজির হন সতীশ। যে স্কুলশিক্ষকের কাছে গিয়ে তিনি দীপকের খোঁজ করেন, সেই প্রকাশ আদতে দীপকেরই কাকার ছেলে। সেখান থেকেই পাওয়া যায় দীপকের মা মনোমায়ার খোঁজ।

পূর্ব নেপালের লুম্বক গ্রামটি মোবাইল বা ইন্টারনেট পরিষেবার বাইরে। মঙ্গলবার রাতে সেই গ্রামেই পৌঁছে গিয়েছিলেন সে দেশের হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরেরা। দুর্গাপ্রসাদের বেঁচে থাকার খবর শোনাতেই আনন্দে কেঁদে ফেলেন বৃদ্ধা। এত দিন ধরে ছেলের ছবিতে ফুল আর চন্দনের ফোঁটা দিয়েছেন, আর কোনও দিন ফিরে পাবেন না ভেবে। সরকারি আধিকারিকেরাও পৌঁছন মনোমায়াদেবীর কাছে। ছেলেকে যে তিনি ফিরে পাবেন, সে বিষয়ে তাঁরাও অভয় দেন। নেপালের হ্যাম রেডিয়ো অপারেটর সতীশ ও অরুণ সিংহেরা বলেন, ‘‘দীপক তিমনাসিয়া এখানে দুর্গাপ্রসাদ নামে পরিচিত। ছেলে বেঁচে আছে শুনে অসুস্থ বৃদ্ধার মুখ খুশিতে ঝলমল করে উঠেছিল।’’

ইতিমধ্যেই জেলে গিয়ে দীপকের সঙ্গে দেখা করার জন্য আর্জি জানিয়েছেন কলকাতার নেপালি দূতাবাসের প্রধান এশর রাজ পাউডেল। তিনি বলেন, ‘‘আমি অভিভূত! এ ভাবেও যে ৩৯ বছর ধরে বাড়ি থেকে ‘নিখোঁজ’কে বাড়ি ফেরানোর পথ দেখানো যায়, সেটাই তো দৃষ্টান্ত।’’ তিনি জানান, ভারত ও নেপালের মধ্যে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী দীপককে তাঁর বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে। তা ছাড়া, আদালত জামিন মঞ্জুর করার আগেই তাঁর আত্মীয়দের কলকাতায় এনে দেখা করানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দীপক ও তাঁর পরিবারের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখবে নেপাল সরকার।

অন্য বিষয়গুলি:

Inmate India Nepal West Bengal Radio Club
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy