নিজের উপন্যাস নিয়ে সত্যেশ্বর বর। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সমুদ্রের ঢেউ যেমন, তেমনই অনন্ত কথা জীবনের। নিজের জেলে-জীবনের সেই অনন্ত কথার খানিকটা দু’মলাটে ধরতে চেয়েছেন সত্যেশ্বর বর। পেশা-পরিচয়ে সত্যেশ্বর এক জন মৎস্যজীবী। সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে আসলে তিনি রোজই জীবনসমুদ্রের অনন্ত ঢেউ ঠেলে এগিয়ে যান। সেই উত্তাল ঢেউয়ের নীচে চাপা পড়ে যাওয়া মৎস্যজীবীদের সুখদুঃখের কথাই তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর ‘দিঘা মোহনায়’ নামক উপন্যাসে।
বাষট্টির সত্যেশ্বর জীবনের ৪০টা বছর কাটিয়েছেন সমুদ্রের নোনা হাওয়ায়। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি তিন নম্বর ব্লকের সিজুয়া গ্রামে বাস। সেই অভিজ্ঞতাই লিখেছেন তাঁর উপন্যাসে। যা তাঁর কিছুটা নিজের জীবনের কথাও বটে। সম্প্রতি সত্যেশ্বর প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম উপন্যাস। সে উপন্যাসের দুই চরিত্র ‘আনন্দ’ এবং ‘চন্দ্রপ্রভা’র মধ্যে দিয়ে রক্ত-মাংসের মৎস্যজীবীদের অনেক অজানা কথা তুলে ধরেছেন লেখক।
একটা সময় আর্থিক সঙ্কটে পড়ে পড়াশোনা থেমে গিয়েছিল সত্যেশ্বরের। ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া সত্যেশ্বরের সঙ্গে বইপত্রের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় নাইনের পরেই। আর্থিক সঙ্কট কাটাতে তখন তিনি ঝাঁপ দেন উত্তাল জীবনসমুদ্রে। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সময় কী ভাবে বার বার তাঁকে মৃত্যুভয় কুরে কুরে খেয়েছে তা তিনি তুলে ধরেছেন নিজের লেখায়। আজীবন রবীন্দ্র অনুরাগী সত্যেশ্বরের লেখায় উঠে এসেছে রবীন্দ্রনাথের ভাবধারাও।
আনন্দবাজার অনলাইনকে এ প্রসঙ্গে সত্যেশ্বর বলেন, ‘‘জেলেদের জীবন বরাবরই উপেক্ষিত। তাঁরা থেকে গিয়েছেন অন্তরালে। অথচ তাঁরাই প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছের জোগান দিয়ে চলেছেন। জেলেরা যে কতটা অন্ধকারের জীবন কাটান তার খোঁজ কেউ রাখে না। সেই সব উপলব্ধিই আমি তুলে ধরেছি আমার উপন্যাসে।’’
সত্যেশ্বরের কথায়, ‘‘এই উপন্যাসের মূল চরিত্র আনন্দ জেলে পরিবারের ছেলে। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে এক ঝড়ঝঞ্ঝায় হারিয়ে যায় তার বাবা। আনন্দের মায়ের কঠিন লড়াইয়ের ফলে সে ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে। তবে কাজ না পেয়ে সে-ও শেষপর্যন্ত বেছে নেয় জেলের জীবনই।’’ তিনি আরও বলছেন, “উচ্চশিক্ষার ইচ্ছা থাকলেও, আমি নিজেও এক দিন পড়াশোনা ছেড়ে ঝাঁপ দিয়েছিলাম সমুদ্রে।’’
নানা চড়াই উতরাই ঠেলে উপন্যাসের কাহিনি এগিয়ে গিয়েছে। সত্যেশ্বর বলছেন, ‘‘ঠিক যেমন এগোয় লড়াকু মানুষের জীবন।’’ জীবন সংগ্রামের সেই লড়াই পাঠককুল কী ভাবে নেন সে দিকে তাকিয়ে আপাতত তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy