জাতীয় বাংলা সম্মেলনে বিশিষ্টজনেরা নিজস্ব চিত্র
শনিবার কলকাতার মহাজাতি সদনে জাতীয় বাংলা সংগঠনের পক্ষ থেকে 'বাংলা কি এ বার বাংলা হারাবে' শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ওই আলোচনাতে অংশগ্রহণ করেন সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ব্যাপারি, অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অধ্যাপক সুগত বসু, নাট্য পরিচালক প্রসন্ন, সঙ্গীত শিল্পী সৌমিত্র রায় এবং সমাজ কর্মী চন্দন গৌড়া-সহ আরও অনেকে।
বাংলা ভাষার প্রতি হিন্দি ভাষার মানুষদের ঘৃণা রয়েছে বলে দাবি করেন মনোরঞ্জন। তাঁর কথায়, "বাংলা ভাষার প্রতি হিন্দিভাষীদের রাগ রয়েছে। কারণ তাঁরা মনে করেন বাংলা ভাষা হচ্ছে বাংলাদেশের ভাষা। তাই এই ভাষা-অঞ্চলকে তাঁরা দুর্বল করতে চায়। বাংলায় বাঙালি ক্রমশ সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছে। আর অনুপ্রবেশ ঘটছে হিন্দিভাষীদের। অনেকে বলেন, বাংলায় রোজগার নেই তাই বাঙালিদের চলে যেতে হচ্ছে অন্য রাজ্যে। আমি মনে করি এটা সম্পূর্ণ ভুল। বাইরে থেকে এসে কলকাতা দখল করে নিয়েছেন অন্যরা, তাই নিজের মাটিতে কাজ না পেয়ে অন্য কোথাও চলে যেতে হচ্ছে বাঙালিদের।" উদাহরণ স্বরূপ তিনি জানান, হাওড়া স্টেশনে ৮ লক্ষ ট্যাক্সি চালক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ক'জন বাঙালি রয়েছে হাতে গুনে বলা যাবে। বেশিরভাগ ট্যাক্সি চালকই অ-বাঙালি। এখান থেকেই বোঝা যায়, বাংলার কাজ অন্যরা করছে, আর আমরা কাজ পাচ্ছি না। এর বিরুদ্ধে সমস্ত বাঙালিকে সোচ্চার হতে বলেন মনোরঞ্জন। বলেন, "চুপ করে থাকলে চলবে না। প্রতিবাদ করতে হবে। না হলে গো-বলয়ের লোকরা এসে আমদের সরিয়ে দেব।"
আবার নাট্য পরিচালক প্রসন্ন মনে করেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। জোর করে ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে মানুষের মধ্যে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সকল ধর্ম, সকল জাতি তথা ভাষাকে যে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, বর্তমান শাসক তা মানছে না। তারা তামিল, তেলুগু, কন্নড় ও বাংলার মধ্যে হিন্দি ঢুকিয়ে দিতে চাইছে। এর নিজেদের সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে গেলে এর প্রতিবাদ হওয়ার প্রয়োজন। অন্য দিকে, বাংলা ভাষায় পাসপোর্ট করা হোক এই ইচ্ছা প্রকাশ করেন গায়ক সৌমিত্র। তাঁর মতে, "বাংলাকে কেউ যদি সত্যিকারের ভালোবাসে তবে সে হল বাংলাদেশ। তাদের গাড়ির নম্বর প্লেট বাংলায় লেখা। এমনকি পাসপোর্টও বাংলায়। আমার ইচ্ছে আমাদের পাসপোর্টও বাংলা করা হোক।" একইসঙ্গে বিজেপি-র উদ্দেশে কটাক্ষ করে সৌমিত্র বলেন, "যাঁরা নিজেদের ছবির নীচে রবীন্দ্রনাথকে রাখেন, তাঁরা বাংলাকে ভালোবাসতে পারেন না। যতই মুখে ‘শ্রীরাম’ বলুন।"
এই আলোচনায় বাঙালি ও বাংলা ভাষাকে বাঁচাতে সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করেন পরমব্রত। তাঁর মতে, "বাঙালি হিসেবে আমরা নিজেদের গুটিয়ে রাখছি। বাঙালি ছোট জায়গার মধ্যে সীমিত নয়। মনে রাখতে হবে আমি বাঙালি, তাই আমি আন্তর্জাতিক। আমি আন্তর্জাতিক, তাই আমি বাঙালি। আমি বাঙালি, তাই আমি ভারতীয় এবং বাঙালি। প্রত্যেকটা একে অপরের পরিপূরক। একটা ছেড়ে অন্যটা নয়।" অর্থাৎ বাঙালি নিজেকে নিজেই শেষ করছে। তার জন্য বাইরের কেউ দায়ী নয়। এমনটাই বলতে চেয়েছেন পরমব্রত। পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘হিন্দি ও ইংরেজি ভাষার মানুষদের আমরা দু'টো চোখে দেখি। প্রথম ক্ষেত্রে প্রভুর দৃষ্টিভঙ্গি। দ্বিতীয়ত ক্ষেত্রে, সেই দৃষ্টিভঙ্গি জাত শত্রুর মতো। আদতে কোনওটাই নয়। তাঁরা আমদের সমকক্ষ। এটা বুঝতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy