ফাইল চিত্র।
প্রাক্-অতিমারি স্বাভাবিকতা ফিরতে এখনও দেরি। তবে আগের থেকে বেশি শ্রোতা-দর্শক নিয়ে আগামী বছর কিছুটা হলেও পুরনো ছন্দে ফিরছে ডোভার লেন সঙ্গীত সম্মেলন।
৭০ তম অধিবেশনে ডোভার লেনের আসর বসছে ২০২২এর ২২ থেকে ২৫ জানুয়ারি। তবে সোমবার উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, প্রথম দু’দিন (২২ এবং ২৩ জানুয়ারি) দিনের বেলায় হবে সঙ্গীত সম্মেলন। পরের দু’দিন আগের মতো রাতে অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা তাঁদের। সেই সময়ে কোভিড-পরিস্থিতি কী রকম এবং রাজ্যে নৈশ-কার্ফু তথা কোভিড-বিধি কী অবস্থায় থাকে তার উপরে সবটা নির্ভর করবে। গত বছর নজরুল মঞ্চে প্রেক্ষাগৃহ ৫০ শতাংশ পূর্ণ অবস্থায় সঙ্গীত আসরের ছাড়পত্র মিলেছে। এ বার ৭০ শতাংশ আসনে ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ভাবছেন উদ্যোক্তারা। নির্দিষ্ট ঘোষণার পরে ১০ জানুয়ারি থেকে মিলবে টিকিট।
এ বছরের অধিবেশন ২০২১এ প্রয়াত কণ্ঠ-শিল্পী রাজন মিশ্র এবং তবলাশিল্পী শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে নিবেদিত। এ বারের শিল্পীদের মধ্যে কণ্ঠশিল্পী রাশিদ খান বা সেতার-শিল্পী শুজাত হুসেন খানরা সাংবাদিক সম্মেলনে ভিডিয়ো কলেই কলকাতার গর্বের ধ্রুপদী সঙ্গীত-আসর নিয়ে মুখর হলেন। এ বছর ডোভার লেনের সঙ্গীত-সম্মান পাচ্ছেন রাশিদ। শুজাত বলছিলেন, তাঁর বাবা বিলায়েত খানের যুবাবয়সের ডোভার লেন সম্মেলনের কথা। তখন খোলা জায়গায় হতো অনুষ্ঠান।
উদ্যোক্তাদের আক্ষেপ, অতিমারির জন্য ডোভার লেনের নতুন প্রতিভা খোঁজার উদ্যোগটি গত বারের মতো এ বারও বন্ধ রয়েছে। তবে শিল্পীদের তালিকায় প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়। ৮৬ বছরের দিদিমা এন রাজম এবং তাঁর নাতনি রাগিণী শঙ্কর বেহালা পরিবেশন করবেন। সরোদ-স্থপতি আমজাদ আলি খানের পুত্র আমান আলি খানও অনুষ্ঠান করবেন। আমদাবাদ থেকে মোহন বীণার শিল্পী বিশ্বমোহন ভট্ট বা মুম্বই থেকে কণ্ঠশিল্পী অশ্বিনী দেশপান্ডেও এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দেন। অতীতে কলকাতায় ডোভার লেনের অনুষ্ঠান সেরে রাতভর অন্যদের শুনে ভরা মনে সকালের উড়ানে মুম্বই ফেরার স্মৃতিচারণ করছিলেন অশ্বিনী। আমদাবাদে কয়েক দিনেই শুরু হবে সপ্তক সঙ্গীত সম্মেলন। বিশ্বমোহন বললেন, ‘‘যথেষ্ট হয়েছে, এ বার শিল্পী-শ্রোতার মুখোমুখি অনুষ্ঠান চালু হোক।’’
ভুবনেশ্বর থেকে কলকাতায় এসে নৃত্যগুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের শিষ্যা ওড়িশি-শিল্পী সুজাতা মহাপাত্রও বলছিলেন তাঁর গুরুদেবের সঙ্গে এই আসরে অনুষ্ঠান করতে আসার কথা। রবি শঙ্করের শিষ্য সরোদ-শিল্পী পার্থসারথির মনে পড়ছিল, দশ বছর বয়সে ডোভার লেনে আলি আকবর মিউজ়িক কলেজের হয়ে অর্কেস্ট্রায় বাজানোর কথা। মুম্বই থেকে আগত কণ্ঠশিল্পী গৌরী পাথারেও উপস্থিত ছিলেন। তবলার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, সমর সাহা, হারমোনিয়ামের জ্যোতি গোহও এ দিন এসেছিলেন।
সম্মেলনে রাজন মিশ্রের পুত্র রীতেশ মিশ্র এবং সাজন মিশ্রের পুত্র রজনীশ মিশ্রের দ্বৈত সঙ্গীত থাকছে। খেয়াল-শিল্পী তুষার দত্ত বা কিরানা ঘরানার বিশিষ্ট উত্তরাধিকারী কুমার মারদুর এ বার গাইবেন। বাঁশির রাকেশ চৌরাসিয়া থেকে কণ্ঠশিল্পী মঞ্জিরী কেলকর রয়েছেন শিল্পী-তালিকায়। এ বারের শিল্পীদের অনেকেই ঐতিহ্যশালী সঙ্গীত-পরিবারের সন্তান। শিবকুমার শর্মার পুত্র সন্তুর শিল্পী রাহুল শর্মা, সানাইয়ের আলি আহমেদ হুসেনের পুত্র হাসান হায়দার খান, রাশিদ খান পুত্র আরমান খান থাকবেন। কুচিপুডি নৃত্যে বৈজয়ন্তী কাশী-প্রতীক্ষা কাশী, কত্থকে বিশাল কৃষ্ণ, ভরতনাট্যমে রাধিকা শেঠী প্রমুখও থাকছেন। শেষ দিনে শেষ শিল্পী বেগম পরভিন সুলতানা। কলকাতার ঐতিহ্যশালী সঙ্গীত সম্মেলনের হাত ধরে ছন্দে ফিরতে চাইছে কোভিড-ধ্বস্ত জীবন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy