Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

এ বার মূলস্রোতে সস্ত্রীক জয়ন্ত-সহ সাত মাওবাদী

সস্ত্রীক রঞ্জিত পাল, সদলে কানুরাম মুন্ডার পর এ বার সস্ত্রীক জয়ন্ত। সঙ্গে মাওবাদী স্কোয়াড সদস্য ও লিঙ্কম্যান মিলিয়ে আরও পাঁচ জন। সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের কাছে আত্মসমর্পণের পর এক গোয়েন্দা অফিসার বলেন, ‘‘এ যেন মাওবাদী আত্মসমর্পণের মরসুম।

পুলিশ সুপারের হাতে একে ৪৭ তুলে দিচ্ছে জয়ন্ত।  ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

পুলিশ সুপারের হাতে একে ৪৭ তুলে দিচ্ছে জয়ন্ত। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:২৬
Share: Save:

সস্ত্রীক রঞ্জিত পাল, সদলে কানুরাম মুন্ডার পর এ বার সস্ত্রীক জয়ন্ত। সঙ্গে মাওবাদী স্কোয়াড সদস্য ও লিঙ্কম্যান মিলিয়ে আরও পাঁচ জন। সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের কাছে আত্মসমর্পণের পর এক গোয়েন্দা অফিসার বলেন, ‘‘এ যেন মাওবাদী আত্মসমর্পণের মরসুম। এক মাসেরও কম সময়ে এত জন মাওবাদী নেতার আত্মসমর্পণ আগে কখনও হয়নি।’’

কিন্তু কেন? ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের ঘটনা। লালগড়ের শালুকা গ্রামের কাছে জঙ্গলে জনা কয়েক মাওবাদী ঢুকেছিল ঝাড়খণ্ড থেকে বেলপাহাড়ি হয়ে। গ্রামের একটি বাড়িতে তারা কেজি তিনেক চাল দিয়ে ভাত রান্না করতে বলে। কিন্তু গৃহস্থ ও তাঁর স্ত্রী সটান বলে দেন, এটা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় কোনও ভাবেই নয়। অন্য দু’-তিনটি ঘরে চাল নিয়ে গেলেও একই ভাবে প্রত্যাখ্যাত হয় তারা।

একেই নোট বাতিলের জেরে ‘চাঁদা’ বাবদ সংগৃহীত বিপুল পরিমাণ পুরনো নোট এক রকম ফেলে দিতে হয়েছে। তার উপর চাল নিয়ে গেলেও সে টুকু ফুটিয়ে দিতে রাজি হচ্ছেন না সেই সব গ্রামের মানুষ, যাঁরা একদা ছিলেন সমর্থক। এই পরিস্থিতিতে ধরা দেওয়া ছাড়া মাওবাদীদের সামনে বিকল্প নেই বলে গোয়েন্দাদের দাবি।

এ দিন ধরা দেওয়া মাওবাদীদের মধ্যে জয়ন্ত ওরফে সাহেবরাম মুর্মু ছিল লালগড় আন্দোলনের উত্তাল সময়ে গোটা ঝাড়গ্রাম ব্লকের ত্রাস। সেখানকার অধিকাংশ হিংসার ঘটনায় জয়ন্ত কোনও না কোনও ভাবে জড়িত ছিল। তা ছাড়া, মাওবাদীদের এক-এক জন নেতা পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ডের এক-একটি সীমানা এলাকার দায়িত্বে ছিল। মদন মাহাতো যেমন বেলপাহাড়ির। জয়ন্ত তেমন জামনির পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানার দায়িত্বে ছিল। এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহল থেকে ওরা আগেই মুছে গিয়েছিল। এ বার এক মাসের মধ্যে রঞ্জিত পাল, কানু, জয়ন্ত ধরা দেওয়ায় ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলায় মাওবাদীদের অস্তিত্ব কার্যত মুছে গেল।’’

খুন-ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ-সহ ৪৮টি নাশকতার মামলায় অভিযুক্ত জয়ন্ত জানিয়েছে, সমাজের মূলস্রোতে ফিরে সে নতুন জীবন শুরু করতে চায়। ২৫ জানুয়ারি ধরা দেওয়া রঞ্জিত পালের সুরেই এ দিন জয়ন্ত বলেছে, “এতদিন ভুল পথে চলেছি। মূলস্রোতে ফেরার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ফিরে এলাম। অতীত ভুলে নতুন জীবন শুরু করতে চাই।’’ তার কথায়, ‘‘বাকিদেরও বলব যে, তারাও যেন অস্ত্র ছেড়ে সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসে।” আত্মসমর্পণ করেছে জয়ন্তর স্ত্রী মানসী মাহাতোও। মানসীর কথায়, “সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসতে পেরে খুব ভাল লাগছে।” জয়ন্তর বাড়ি জামবনিতে, ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া কানিমহুলি স্টেশনের কাছে আমতলিয়া গ্রামে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের কথায়, “জয়ন্তদের আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে ঝাড়গ্রামের একটা বড় অধ্যায় শেষ হয়ে গেল। এখন ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলা অনেক সুরক্ষিত।’’ তাঁর দাবি, এখন মাত্র দু’-তিন জন মাও-নেতা রয়ে গিয়েছে।

পুলিশের একাংশের আশা, মূলত বেলপাহাড়ি ব্লক জুড়ে কাজ করা মাওবাদী নেতা মদন মাহাতোও আত্মসমর্পণ করে শীঘ্রই সমাজের মূলস্রোতে ফিরবে। সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপি ভারতী ঘোষের কাছে জয়ন্ত ও তার স্ত্রী মানসী ছাড়াও আত্মসমর্পণ করেছে মাওবাদী নেতা দিলীপ সিংহ ওরফে গুড়াই, দিলীপের স্ত্রী মালতী মাহাতো, সমীর মাহাতো, বৈদ্যনাথ মুর্মু ও বনমালী মাহাতো। দিলীপের বিরুদ্ধেও নাশকতার ১৮টি মামলা রয়েছে। অন্য দিকে সমীর, বৈদ্যনাথ, বনমালী ছিল লিঙ্কম্যান।

এসপি ভারতী ঘোষ জানান, জয়ন্তর নামে যে ৪৮টি মামলা রয়েছে তার মধ্যে সাঁকরাইল থানা আক্রমণ ও দুই পুলিশকর্মীকে খুন করে ওসি-কে অপহরণ, শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হামলা, পঞ্চায়েত অফিসে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের মতো মামলাও রয়েছে। সে মাওবাদীদের তিনটি স্কোয়াডের কমান্ডার ছিল। দিলীপ ওরফে গুড়াই কাজ করত মদন মাহাতোর স্কোয়াডে।

এ দিন পুলিশের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলিও জমা দেয় আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীরা। জয়ন্ত যেমন এ কে ৪৭ জমা দেয়, সঙ্গে ১০ রাউন্ড গুলি। গুড়াই জমা দেয় এসএলআর, সঙ্গে চার রাউন্ড গুলি। এ দিন গুড়াইও বলছে, “ওটা ভুল পথ ছিল। এখন বুঝতে পারছি।” আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীরা কী কী সুবিধে পাবে? পুলিশ জানিয়েছে, ‘পুনর্বাসন প্যাকেজে’ রয়েছে ২ লক্ষ টাকা স্থায়ী আমানত, এককালীন ৫০ হাজার টাকা অনুদান ও প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য। এ ছাড়া চিকিৎসার খরচ বাবদ প্রতি মাসে ৫০০ টাকা। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম, ওরা সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসুক। ওরাও তাই চেয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Bharati Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy