Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Mukul Roy Missing

মুকুল বলছেন ‘যাব-যাব’, বিজেপি বলছে ‘না-না’, ৫ কারণে বাংলার পদ্মশিবির রায় জানাতে গিয়ে দ্বিধায়

মুকুল রায়ের দিল্লিযাত্রার দেড় দিন পার হয়ে গেলেও জল্পনা একটুও কমেনি। বিজেপি কি তাঁকে ফিরিয়ে নিতে চায়? কেন্দ্রীয় বিজেপি যা-ই করুক, দলের রাজ্য নেতৃত্ব তেমন কিছু চাইছেন না।

5 reasons why Why West Bengal BJP is not ready to accept TMC leader Mukul Roy.

রাজ্য বিজেপির কাছে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, মুকুল বিজেপিতে ফিরতে চান। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ১১:২৮
Share: Save:

মুকুল রায়ের দিল্লিযাত্রার দু’রাত পার হয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত তাঁর সফরের উদ্দেশ্য সে ভাবে স্পষ্ট হয়নি। সবটাই ভাসা ভাসা। পুলিশ অপহরণের তদন্ত শুরু করলেও এখনও সে ভাবে কোনও অগ্রগতিও দেখা যায়নি। যদিও মুকুল বলছেন অন্য কথা। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘বিজেপি করব কি না, এখনও ঠিক করিনি। সে রকম হলে বিজেপি করব আবার।’’ বিজেপি করার জন্য পুত্র শুভ্রাংশু রায়কেও পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি, নিজের জন্য, পরিবারের জন্য শুভ্রাংশুরও বিজেপি করা উচিত।’’

এই বক্তব্য থেকে রাজ্য বিজেপির কাছে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, মুকুল বিজেপিতে ফিরতে চান। দিল্লি পৌঁছনোর পরে প্রথম দিকে রাজধানী সফরের উদ্দেশ্য নিয়ে কিছু বলতে না চাইলেও জল্পনার পারদ চড়তেই মুখ খুলেছেন মুকুল। বলেছেন, ‘‘শরীর ভাল ছিল না বলে কিছু দিন পুরোমাত্রায় রাজনীতি করতে পারিনি। এখন শরীরটা সুস্থ হয়েছে। অমিত শাহজি, নড্ডাজি’র (বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা) সঙ্গে কথা বলব।’’

বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, ইতিমধ্যেই শাহ এবং নড্ডার সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছেন মুকুল। তবে বুধবার সকাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা বিজেপি সভাপতি মুকুলকে সময় দিয়েছেন বলে জানা যায়নি। তবে একেবারেই সময় দেবেন না, সেটাও চূড়ান্ত করে কেউই বলতে চাইছেন না। তবে রাজ্য বিজেপি নেতারা মুকুলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্তরের শীর্ষনেতাদের সাক্ষাতের সম্ভাবনায় খুব একটা খুশি নন। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সে ভাবে মুখ না খুললেও সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বিরোধিতায় সরব।

মুকুলের দিল্লিযাত্রার সঙ্গে বিজেপির যোগ আছে বলে বলছেন অনেকে। তেমন হয়ে থাকলেও তা নিয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে ছিলেন দলের রাজ্য নেতারা। যদিও দলের একটি সূত্রের দাবি, দিল্লির বিমানে ওঠার আগে সোমবার বিকেলে মুকুলের কাছে দলের এক শীর্ষনেতার ফোন এসেছিল। তার পরেই বাড়িতে না জানিয়ে তড়িঘড়ি দিল্লি রওনা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন রায়সাহেব। পরবর্তী কালে মুকুলকে ঘিরে জল্পনা এবং তাঁর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সুকান্ত বলেন, ‘‘উনি বিজেপিতে যোগ দেবেন কি দেবেন না, সেটা অনেক দূরের বিষয়। সে সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। তবে আমি এটা বলতে পারি যে, ইতিমধ্যেই উনি যা যা বলেছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে উনি তৃণমূলে ভাল নেই। এখন বিজেপিতে ফিরে এসে নিজের ভুল নিজেই সংশোধন করতে চাইছেন।’’

তবে দিলীপ স্পষ্ট ভাষাতেই মুকুলকে আক্রমণ করেছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে অশান্তির চাপে উনি দিল্লিতে গিয়েছেন বলে মনে হয়। এখন বিজেপিতে ফেরার কথা বলছেন। কিন্তু কী লাভ ওঁকে নিয়ে! অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন আর জল্পনা বাড়াচ্ছেন।’’ একই সঙ্গে দিলীপের প্রশ্ন, ‘‘রাজ্য পুলিশ দিল্লিতে খুঁজতে চলে গেল অথচ পাচ্ছে না! উত্তরপ্রদেশে গিয়ে নয়ডায় জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে খুঁজে পায় আর দিল্লির অলিগলিতে ঘুরে বেড়ানো মুকুল রায়কে পাচ্ছে না কেন?’’

বস্তুত, প্রকাশ্যে না বললেও রাজ্য বিজেপির প্রায় কোনও নেতাই চান না মুকুল বিজেপিতে ফিরুন। এর পিছনে নির্দিষ্ট পাঁচটি কারণ রয়েছে—

১। বিজেপির টিকিটে কৃষ্ণনগর উত্তর আসন থেকে জয়ের পরে পরেই তৃণমূলে ফিরে যান মুকুল। এর পরে কৃষ্ণনগর উত্তরে মুকুলকে বাদ দিয়েই বিজেপি সংগঠন সাজিয়েছে। সেখানে এখন নতুন করে মুকুলের আবির্ভাব হলে দল বিড়ম্বনায় পড়বে।

২। মুকুল খাতায়কলমে এখন বিজেপির বিধায়ক। দলেরই একজন বিধায়ককে নতুন করে দলে যোগ দেওয়ানো সাধারণ কর্মীদের কাছে যে বার্তা দেবে, তা বিজেপির কাছে খুব সম্মানজনক হবে না। আগেই দলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তৃণমূল থেকে এসেও যাঁরা ফিরে গিয়েছেন বা দূরত্ব তৈরি করেছেন, তাঁদের আর দলে ফেরার সুযোগ দেওয়া হবে না।

৩। মুকুল তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তাঁর বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে আদালতে গিয়েছে বিজেপির পরিষদীয় দল। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছেন। এখন সেই মুকুলকে ফিরিয়ে আনলে দলের বিধায়কদেরই বিড়ম্বনায় ফেলা হবে।

৪। মুকুলের পরে আরও পাঁচ জন বিজেপি বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। সকলের ক্ষেত্রে না হলেও কয়েক জনের প্রত্যাবর্তনে মুকুলের ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হয়। সে ক্ষেত্রে ‘চাপ এবং প্রলোভন’ সত্ত্বেও যাঁরা বিজেপিতে থেকে লড়াই করছেন, তাঁদের অসম্মান করা হবে।

৫। মুকুলের মানসিক স্থিতি। এটিই রাজ্য বিজেপিকে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে। ছেলে শুভ্রাংশু রায় সরাসরি ‘মানসিক রোগী’ বলে দেগে দিয়েছেন বাবাকে। বাস্তবেও মুকুল সব কিছু ঠিকঠাক গুছিয়ে বলতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে মুকুল বিজেপিতে ফিরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হলেও মানুষের কাছে তা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য হবে? পাশাপাশিই, এটাও ঠিক যে, তৃণমূলে ফিরে অনেক বক্তব্যেই শাসকদলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন মুকুল। বিজেপির ক্ষেত্রেও যে সেটা হবে না, তা কে হলফ করে বলতে পারে!

তবে এত কারণ এবং ভাবনা থাকলেও বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব এটা মানছেন যে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কোনও সিদ্ধান্ত নিলে তা মেনে নিতেই হবে। সে ক্ষেত্রে কোনও মতামত দেওয়ার জায়গা থাকবে না। এটাই বিজেপির দলীয় নীতি। কেউ বিরোধিতা করে মুখ খুললে তাঁকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত হতে হবে। এমন নজির অনেক রয়েছে। তাই রাজ্য নেতারা ‘চুপ’ থেকেই দিল্লির দিকে নজর রাখার পক্ষপাতী। যদি কখনও দিল্লির বিজেপি দফতরে মুকুলকে সাংবাদিক বৈঠক করতে দেখা যায়!

অন্য বিষয়গুলি:

Mukul Roy BJP Dilip Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE