কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়ের গতিবিধি ঘিরে জল্পনা। ফাইল চিত্র।
সকালে ছেলে দাবি করলেন, বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। রাতে বাবা টিভি চ্যানেলকে ফোনে জানালেন, তাঁর সঙ্গে ছেলের আগেই কথা হয়েছিল। কোন দলের হয়ে রাজনীতি করবেন, সেটা এখনও ঠিক করেননি! তবে পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ছেলের যে বিজেপি করা উচিত, সেই ‘পরামর্শ’ও দিয়ে রাখলেন টিভি চ্যানেল মারফত!
কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়ের গতিবিধি ঘিরে নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহ চলল দিনভর। তবে বিধানসভা ভোটের পরে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়া মুকুল ফের বিজেপিতে যাবেন কি না, সেই জল্পনা ভেসেই থাকল। কারণ, দিল্লি থেকে মঙ্গলবার রাতে মুকুল নিজেই বলেছেন, ‘‘শরীর ভাল ছিল না বলে কিছু দিন পুরো মাত্রায় রাজনীতি করতে পারিনি। এখন শরীরটা সুস্থ হয়েছে। অমিত শাহজি, নড্ডাজি’র (বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা) সঙ্গে কথা বলব। বিজেপি করব কি না, এখনও ঠিক করিনি। সে রকম হলে বিজেপি করব আবার।’’ রাজ্যে বিজেপির প্রাক্তন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের সহায়তায় দিল্লিতে থাকার ব্যবস্থা হচ্ছে বলেও তাঁর দাবি। তবে একই সঙ্গে মুকুল যে-হেতু নিজেকে লোকসভার সাংসদ বলে দাবি করে সংসদের অধিবেশনে যোগ দিতে এসেছি বলেছেন, কখনও বলেছেন বিজেপির বিধায়ক ছিলাম না, কখনও বলেছেন তৃণমূল করিনি, তার ফলে তাঁর মানসিক স্থিতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
রাতে মুকুল এ সব কথা বলার আগে সকালে তাঁর ছেলে, প্রাক্তন বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় দাবি করেছিলেন, বাবা দিল্লি পৌঁছনোর পর থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এমনকি, বিমানবন্দর (এনএসসিবিআই) থানায় শুভ্রাংশু তাঁর বাবাকে অপহরণ করা হয়ে থাকতে পারে অভিযোগ দায়ের করায় তার প্রেক্ষিতে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের একটি দল দিল্লি রওনা হয়ে যায়। বীজপুরের বাড়িতে শুভ্রাংশু বলেন, ‘‘আমি বলতে পারি না বাবা উন্মাদ। কিন্তু তাঁর মানসিক পরিস্থিতি ঠিক নেই। পারকিনসন্স, ডিমেনশিয়া রয়েছে। এই অবস্থায় আমাকে না জানিয়ে দুই সঙ্গীকে নিয়ে দিল্লি গিয়েছেন বাবা।’’ তাঁর আরও বক্তব্য ছিল, ‘‘অসুস্থ মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বদনাম করার জন্য রাজনীতি করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন।’’ তিনি যে বিমানবন্দর থানার দ্বারস্থ হয়েছেন, তা-ও জানান শুভ্রাংশু।
মুকুল আবার রাতে বলেন, ‘‘বাড়িতে, পরিবারে না জানিয়েই কখনও কখনও বেরিয়ে আসতে হয়! বাড়ি থেকে বেরোলেই কেউ যদি নিখোঁজের ডায়েরি করে দেয়, তা হলে কী করা যাবে? ছেলের সঙ্গে তো সোমবার সন্ধ্যাতেই ফোনে কথা হয়েছে।’’ কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়কের আরও পরামর্শ, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি, নিজের জন্য, পরিবারের জন্য শুভ্রাংশুরও বিজেপি করা উচিত।’’ যা শুভ্রাংশু আবার বলেছেন, ‘‘আমার তো প্রশ্ন বাবার মানসিক সুস্থতা নিয়েই!’’
এই নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহে বিড়ম্বনায় পড়েছে তৃণমূল ও বিজেপি, দু’দলই। শুভ্রাংশুর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘অভিষেককে নিয়ে অনেক দিন ধরেই অনেক কিছু চলছে। মুকুলবাবু তো কিছু বলেননি। এখন তাঁর ছেলে অভিষেকের নাম করছেন। উনি বিজেপিতে আছেন কি নেই, সেটা নিয়ে বিধানসভার স্পিকারের একটা পর্যবেক্ষণ আছে। এর উপরে দলের তরফে কিছু বলার নেই। একটা জগাখিচুড়ি পরিস্থিতি। কিন্তু তাতে অভিষেকের নাম টেনে আনার কোনও যুক্তি নেই।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘মুকুলবাবু তিন দিন বিজেপিতে থাকেন। তিন দিন তৃণমূলে। রবিবার বাড়িতে বসে চা খান!’’ অন্য দিকে, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘উনি তো বিধায়ক। গত ৬ মাস ওঁর কোনও খবর পেয়েছেন? উনি ‘লস্ট কেস’। ওঁকে নিয়ে মাথা ঘামানোর কারও সময় নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy