এই সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার হয় পাঁচ জনের দেহ। ছবি: পাপন চৌধুরী
রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএলের ঝাড়খণ্ডের নিরশার পরিত্যক্ত গোপীনাথপুর খোলামুখ খনিতে ‘অবৈধ’ ভাবে কয়লা কাটতে গিয়ে পাথরের চাঁই চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। মঙ্গলবারের ওই ঘটনার পরে, বুধবার তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার (ধানবাদ গ্রামীণ) রিশমা রামেশনের নেতৃত্বে চার সদস্যের ‘সিট’ (বিশেষ তদন্তকারী দল) গঠন করল ঝাড়খণ্ড সরকার।
এলাকায় গিয়ে এ দিন দেখা গিয়েছে, ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ। ঝোলানো হয়েছে, সতর্কীকরণ বোর্ড। কাছেই ভিড় করে আছেন এলাকাবাসীর একাংশ। ইসিএলের উদ্ধারকারী দলকেও ঘটনাস্থলের পর্যবেক্ষণ করতে দেখা গিয়েছে। দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পুলিশ (এসএসপি, ধানবাদ) সঞ্জীব কুমার। সঞ্জীব বলেন, “মৃত পাঁচ জনের মধ্যে চার জন মহিলা ও এক জন পুরুষ। তাঁদের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মূল অভিযুক্তদের খোঁজ চালানো হচ্ছে।” মৃতেরা স্থানীয় বাঙালপাড়ার বাসিন্দা পুষ্পা শর্মা (৩৯), তাঁর মেয়ে পায়েল শর্মা (১৮), পাহাড়িবস্তির বাসিন্দা জুলেখা বিবি (৫০), তাঁর খুড়তুতো বোন জ়ুবেদা খাতুন (৩৬)। রাত পর্যন্ত অন্য জনের পরিচয় জানা যায়নি।
পাহাড়িবস্তি ও বাঙালপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, কয়েক জন বাসিন্দা ইতিউতি ভিড় জমিয়েছেন। তাঁরা মুখ খুলতে চাননি। মৃত পুষ্পার স্বামী মনোজ শর্মা বলেন, “আমরা সব সময় আতঙ্কে থাকি। কথা বলার মতো অবস্থা নেই।” তবে কে বা কারা সে ‘আতঙ্কের’ পরিবেশ তৈরি করেছে, ভাঙেননি তিনি। ঘটনা নিয়ে বিজেপির নিরশার বিধায়ক অপর্ণা সেনগুপ্তের অভিযোগ, “ইসিএলের খনিতে অবৈধ খনি চলছে। অথচ, ইসিএলের তরফে নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করা হচ্ছে না। ঘটনার জন্য ইসিএলই দায়ী।” ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অশোক মণ্ডল বলেন, “ঘটনার সঙ্গে ইসিএলের যোগ রয়েছে।”
‘ডিরেক্টর জেনারেল অব মাইনস সেফটি’ (ডিজিএমএস) প্রভাস কুমারও বলেন, “এটি পরিত্যক্ত খনি হওয়ায় আমরা আর পর্যবেক্ষণ করি না। কিন্তু খনিটি ইসিএলের পরিত্যক্ত খনি হওয়ায় সেটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার সংস্থারই।” তবে ইসিএলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বিবেক কুমার বলেন, “এটি আর ইসিএলের খনিই নয়। যেখানে ঘটনা ঘটেছে, সেটি অবৈধ খনি।” সংস্থার চেয়ারম্যান কাম ম্যানেজার ডিরেক্টর (সিএমডি) অম্বিকাপ্রসাদ পান্ডার দফতরের কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “নিরশার ওই এলাকায় ইসিএলের পরিত্যক্ত খনি রয়েছে। সেখানে অবৈধ কয়লা খননের অভিযোগ নিরশা থানায় বহু বার করা হয়েছে।”
কেন ওই দুর্ঘটনা? ডিজিএমএস প্রভাস কুমার বলেন, “দুর্ঘটনাটি একটি খনিতে হওয়ায় আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বেশ কয়েক বার বৈঠক রয়েছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরে, কিছু বলতে পারব।” প্রাক্তন খনি-কর্তাদের একাংশের অনুমান, পরিত্যক্ত খোলামুখ খনির গভীরে কিছু কয়লার চাঁই আছে। তা কাটা ইসিএলের পক্ষে লাভজনক নয়। কিন্তু ‘কয়লা-মাফিয়া’রা খনির দেওয়াল কেটে সুড়ঙ্গ বানিয়ে তেমন কয়লার চাঁই বার করে আনে। খোলামুখ খনির দেওয়াল কাটলে, মাটির উপরের অংশ ধরে রাখা যায় না। তাই সুড়ঙ্গ কিছুটা গভীর হওয়ার পরে, মাটির উপরের অংশ আলগা হয়ে যায়। চাল ধসে পড়ে। পাশাপাশি, সুড়ঙ্গের ভিতরে গাঁইতি দিয়ে কয়লা কাটার সময় প্রচণ্ড শব্দ হয়। সে শব্দের কম্পনেও অনেক সময় মাটির উপরের অংশ খসে পড়ে। এই জোড়া কারণে মঙ্গলবার দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy