উত্তরাখণ্ডে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ফাইল চিত্র।
উত্তরাখণ্ডে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ রাজ্যের পাঁচ বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি সরকারি সূত্রের। মোট মৃত ন’জন। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কারও পরিচয় জানা যায়নি। এখনও পর্যন্ত কম-বেশি ১৫০ জন আটকে রয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রের অনুমান। হাওড়ার বাগনানের তিন যুবক-সহ পাঁচ জন উত্তরাখণ্ডে ট্রেকিংয়ে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। বাকি দুই যুবক বেহালা ও নদিয়ার রানাঘাটের। এক যুবকের বাবা জানান, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ছেলের খোঁজ মেলেনি। তাঁরা প্রচণ্ড উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
১৪ অক্টোবর উত্তরাখণ্ডের হরশিল থেকে হিমাচলের ছিটকুলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল ১১ জনের একটি দল। ১৭ অক্টোবর আবহাওয়া খারাপ হওয়ার পরে, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। ‘স্টেট রেসপন্স ডিজ়াস্টার ফোর্স’ (এসডিআরএফ)-এর ডিআইজি ঋধিম আগরওয়াল জানিয়েছেন, সে দলের পাঁচ সদস্যের দেহ মিলেছে।
প্রশাসন সূত্রের দাবি, প্রতিকূল আবহাওয়ায় বাধা পাচ্ছে উত্তরাখণ্ডের উদ্ধারকাজ। সব চেয়ে সমস্যা হচ্ছে, নিখোঁজদের হদিস পেতে। আবহাওয়া খারাপ থাকায় উদ্ধারকারী দল এখনই পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রতিনিয়ত উত্তরাখণ্ড সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসন। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীও ওই রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। পাশাপাশি, দিল্লির রেসিডেন্ট কমিশনারের কার্যালয়ও একই কাজ করছে।
প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, “অনেক জায়গা থেকে জল না নামায় উদ্ধারকাজ চালানো কঠিন হচ্ছে। তবুও সে রাজ্যের এবং কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী কাজ চালাচ্ছে। পরিস্থিতি অনুকূল হলে, উদ্ধারকাজে গতি আসবে। এখন এ রাজ্যের দল পাঠালেও, কাজ হবে না।”
সূত্রের খবর, দিল্লির রেসিডেন্ট কমিশনারের কার্যালয়ে ‘কন্ট্রোলরুম’ চালু করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আটকে থাকা ব্যক্তিদের ফোন নম্বর জোগাড় করার চেষ্টা চলছে। এক কর্তা বলেন, “যাঁরা যেখানে আটকে রয়েছেন, তাঁদের সেখানে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। না হলে, সংশ্লিষ্টদের খুঁজে পেতে সমস্যা হবে। প্রত্যেককে সুরক্ষিত ভাবে ফেরানোর জন্য যা দরকার, তা-ই করতে বদ্ধ পরিকর প্রশাসন।”
কুমায়ুনের ধসে দুর্ভোগের শিকার বাগুইআটি-জ্যাংড়া, দমদম, হাওড়া থেকে বেড়াতে যাওয়া একটি দলের আজ, শুক্রবার হাওড়া স্টেশনে পৌঁছনোর কথা। বৃহস্পতিবার তাঁরা কাঠগোদাম থেকে ট্রেনে উঠেছেন। ওই দলের কৃষ্ণকুমার গোস্বামী বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুলিশ সহায় না হলে যে কী হত, ভাবতে সাহস হচ্ছে না!” কৌশানির কাছে কাঁইচিধারে ভাওয়ালি থানার পুলিশ রাস্তা পরিষ্কার করার যন্ত্র ও লোকজন দিয়ে তাঁদের সাহায্য করে। ধসে সরিয়ে, চাপা পড়া, ভাঙাচোরা গাড়ি সরিয়ে ওই পথ ফের গাড়ি চলার উপযুক্ত করা হয়। কৃষ্ণকুমার বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ পুলিশও বিপদের সময়ে আমাদের খবর নিয়েছে। উত্তরখণ্ডের স্থানীয় পুলিশের সঙ্গেও যে আমাদের রাজ্যের পুলিশ যোগাযোগ রাখছিল, তা বুঝতে পেরেছি। বিপদে সবার সাহায্য পেয়েছি বলে আমরা কৃতজ্ঞ।”
কেদারনাথে আটকে পড়েছিলেন হুগলির চুঁচুড়ার বিশ্বজিৎ রায় এবং তাঁর স্ত্রী-কন্যা। বুধবার বিকেল থেকে রাতভর হেঁটে বৃহস্পতিবার ভোরে তাঁরা গৌরীকুণ্ডে পৌঁছন। উত্তরপাড়ার মাখলার একটি পরিবার বিনসরে আটকে পড়েছিল। এ দিন বিকেলে তারা নৈনিতালে পৌঁছয়। আজ, শুক্রবার তাদের ফেরার ট্রেন ধরার কথা। নৈনিতাল থেকে কৌশানি যাওয়ার পথে রবিবার ভাওয়ালি গ্রামে আটকে পড়া চুঁচুড়ার সাত বাসিন্দা নিরাপদে রয়েছেন। উত্তরাখণ্ডে গিয়ে আটকে পড়া হাওড়ার বাগনানের পাঁচ পর্যটকের সঙ্গে যোগাযোগ করা গিয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের মেমারির তিন ট্রেকারকে এ দিন উত্তরাখণ্ডের দান্তুগ্রাম থেকে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী।
উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে ট্রেকিংয়ে যাওয়া বাঁকুড়ার ওন্দার পুরুষোত্তমপুর গ্রামের সাত জনের সঙ্গে রবিবার পরে যোগাযোগ করতে না পেরে উৎকণ্ঠায় ছিলেন পরিজনেরা। তবে এ দিন ওই দলের উত্তরাখণ্ডের বেস ক্যাম্পে থাকা গাইডের এক সহকারী ভগৎ সিংহের দাবি, “ওই দলের সদস্যেরা সুরক্ষিত রয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ে তাঁরা বেস ক্যাম্পে ফিরে আসবেন।” উত্তরাখণ্ডে আটকে পড়া উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদের একটি পর্যটকের দলের এক সদস্য বলেন, ‘‘মনে হচ্ছিল, আর বাড়ি ফেরা হবে না। অনেককে দেখলাম, টাকা না থাকায় বৃষ্টির মধ্যে হোটেল ছেড়ে রাস্তায় রয়েছেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy