শঙ্কর ঘোষ, শিখা চট্টোপাধ্যায় ও আনন্দময় বর্মণ।
কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না রাজ্য বিজেপি-র। রবিবার নিজের ফেসবুক পেজ-এ দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দাবি করেছেন, তাঁর দলের কোনও বিধায়ক কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ফিরিয়ে দেননি। যদিও রীতিমতো ঘোষণা করে শনিবার নাটাবাড়ির বিধায়ক মিহির গোস্বামী কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছেড়েছেন। প্রথম থেকেই নিরাপত্তা নিতে চাননি বালুরঘাটের বিধায়ক অশোক লাহিড়ি। রবিবার জানা গেল উত্তরবঙ্গেরই আরও ৩ বিধায়ক দল বললেও আবেদন করেননি। একই সঙ্গে সিআইএসএফ-এর পক্ষ থেকেও ফোন করা হলে তাঁরা ‘না’ বলেছেন। সকলেরই আলাদা আলাদা যুক্তি রয়েছে। কিন্তু একটি বিষয়ে সবার বক্তব্য এক। তাঁদের প্রশ্ন, সাধারণ কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে শুধু বিধায়করা কেন অস্ত্রধারী জওয়ান নিয়ে ঘুরবেন?
শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণারও পরে সিপিএম থেকে বিজেপি-তে যোগ দেন। তৃণমূল প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্রর থেকে ৩৫,৫৮৬ ভোট বেশি পেয়ে জিতেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি বরাবর স্কুটি নিয়ে ঘুরি। শিলিগুড়ি পুরসভার কাউন্সিলার এবং মেয়র পারিষদ ছিলাম। মানুষ আমায় এই ভাবেই দেখেছে আর এই ভাবেই দেখতে ভালবাসে। আর আমিও স্কুটি নিয়ে ঘোরার স্বাচ্ছন্দ্য ছাড়তে চাই না।’’ একই সঙ্গে শঙ্কর বলেন, ‘‘রাজ্যে এত হিংসা চলছে। ভোটে এবং ফল ঘোষণার পরে হিংসায় এত জন কর্মীর মৃত্যু। সেই কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তো আমাদের লক্ষ্য। তাঁরা তো আর নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরছেন না। এ নিয়েও আমার মনে একটা দ্বিধা আছে।’’ তবে যাঁরা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়েছেন তাঁদের সম্পর্কে কোনও ক্ষোভ নেই। শঙ্কর বলেন, ‘‘প্রতিটি এলাকার পরিস্থিতি আলাদা আলাদা। সেই এলাকার বাস্তবতা দেখে অনেক বিধায়ক নিয়েছেন। আমার এখন মনে হচ্ছে না। আগামী দিনে পরিস্থিতি বদলালে কখনও নিতেও হতে পারে।’’
রাজ্য বিজেপি-তে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের চিঠি পাঠানোর পরে। চুঁচুড়া বিধানসভা আসনে প্রার্থী হলেও জয় পাননি লকেট। এর পরেই সাধারণ কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে না ঘোরার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ছেড়ে দেন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা।
শনিবার একই সিদ্ধান্ত জানান নাটাবাড়ির বিধায়ক। তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যাওয়া মিহিরের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছাড়ার ইচ্ছা নিয়ে জল্পনাও তৈরি হয়েছে। যদিও মিহিরের ব্যাখ্যা, দলীয় কর্মীরা ‘সন্ত্রস্ত’। এমন অবস্থায় কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিলে কর্মীদের মধ্যে ‘ভয় এবং বিরক্তি’ তৈরি হবে। তবুও জল্পনার কারণ, ভোটে পরাজিতদের থেকে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হলেও বিজেপি সম্প্রতি সব বিধায়ককেই ওই সুবিধা দিতে উদ্যোগী হয়েছে। ভোটের আগে থেকে যাঁরা পাচ্ছিলেন তাঁদের পাশাপাশি অনেক বিধায়ক সম্প্রতি নতুন করে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেয়েছেন।
আবেদন না জানানো সত্ত্বেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পাঠানো তালিকায় নাম ছিল অনেক বিধায়কের। তাঁদের কেউ কেউ নিলেও ‘না’ বলেছিলেন ডাবগ্রাম ফুলবাড়ির বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমায় সিআইএসএফ-এর তরফ থেকে ফোন করা হয়েছিল। দরকার নেই বলে জানিয়ে দিয়েছি।’’ কেন নিলেন না? ২০১৭ সালে তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া শিখা বলেন, ‘‘মানুষ আমায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। মানুষই আমার নিরাপত্তা রক্ষী। আর একজন গরিব মানুষের কাছে জওয়ানদের নিয়ে গেলে তাঁরা আমার সম্পর্কে কোনও রাগ বা ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারবেন না। মন খুলে কথাও বলতে পারবেন না।’’
শিখার সুর শোনা গিয়েছে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়কের মুখেও। তরুণ বিধায়ক আনন্দময় বর্মণের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি-র ৭৭ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটে জিতেছি আমি। ব্যাবধান ৭০ হাজারেরও বেশি। এত মানুষ যাঁর সঙ্গে আছে তাঁর আবার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার কী দরকার? দল থেকে বলা হলেও আমি নিতে চাইনি।’’ অনেকেই তো নিয়েছেন? আনন্দময় বলেন, ‘‘যাঁদের দরকার তাঁরাই নিয়েছেন। আমাদের এখানে সে ভাবে ভোট পরবর্তী গোলমাল নেই। তাই প্রয়োজন মনে করছি না। কিন্তু আগামী দিনে পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে গোলমালের পরিবেশ হলে তখন হয়তো দরকার হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy