সমস্তিপুরে আত্মীয়ার সঙ্গে তরুণী (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র
মানসিক চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার পরেও ঘরে ফিরতে পারছিলেন না তরুণী। কারণ তাঁর কথায় জড়তা থাকার জন্য বছর কুড়ির মেয়েটির বাড়ি কোথায়, তা-ই বোঝা যাচ্ছিল না। ফলে পুরুলিয়া মানসিক হাসপাতালে ভর্তি রোগিণীকে বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও কার্যকরী করতে পারছিলেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমন অবস্থায় এগিয়ে আসে ওই হাসপাতালে মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাদেরই উদ্যোগে সদ্য ঘরে ফিরলেন ভিন্ রাজ্যের ওই তরুণী।
বছর পাঁচেক আগের ঘটনা। উদ্ভ্রান্ত এক তরুণীকে ঘুরতে দেখে স্থানীয় পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে পুরুলিয়া মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। সেখানেই চিকিৎসায় ধরা পড়ে বাইপোলার এফেক্টিভ ডিজ়অর্ডার (বিইডি)-এর শিকার ওই তরুণী। মানসিক হাসপাতালে দীর্ঘদিন তাঁর চিকিৎসক ছিলেন গুঞ্জেশ কুমার। তাঁর ব্যাখ্যায়, এই অসুখে রোগীর চরিত্রে দু’টি বিপরীত বৈশিষ্ট্য, অতিরিক্ত উদ্যম এবং অত্যধিক হতাশার সহাবস্থান দেখা যায়। গুঞ্জেশ কুমারের কথায়, “সারা জীবন নিয়মিত ওষুধ খেয়ে গেলে বিইডি নিয়ন্ত্রণ
করা যায়।”
হাসপাতাল সূত্রের খবর, তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারার জন্যে সুস্থ হওয়ার পরেও ওই তরুণীকে মানসিক রোগীদের সঙ্গেই থাকতে হচ্ছিল। বছরখানেক আগে তাঁকে ঘরে ফেরানোর চেষ্টা শুরু করে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সম্প্রতি সংস্থার দুই কর্মী অনিন্দিতা চক্রবর্তী এবং বিশ্বজিৎ পতি ওই তরুণীকে ‘লিভ অব অ্যাবসেন্স’ অর্ডারে বিহারের সমস্তিপুর নিয়ে যান। স্থানীয় পুলিশ, গাড়িচালক, স্থানীয় বাসিন্দা ও হোটেলকর্মীদের সহযোগিতায় বাঘোপুর গ্রামের সন্ধান মেলে। সংস্থার কেস সাপোর্ট ম্যানেজার অনিন্দিতা বলেন, “ওঁর সঙ্গে বারবার বসেছিলাম আমরা। কথায় অসম্ভব জড়তা থাকায় বোঝা যাচ্ছিল
না গ্রামের নাম বা পারিবারিক পরিচিতি। শুধু বুঝেছিলাম, ওঁর বাড়ি সমস্তিপুরে।”
দীর্ঘ বছর বাদে নিখোঁজ মেয়ের আসার খবর তল্লাটে পৌঁছতেই তাঁকে দেখতে ভিড় করেছিলেন গ্রামবাসীরা। তরুণীর ভাগচাষি দাদা সঞ্জিৎ কুমারের কথায়, “বোনকে অনেক খুঁজেছিলাম। আমাদের সঙ্গেই থাকবে ও। ওর চিকিৎসাও করাব।” পাশে তখন খুশিতে চোখ মুছে চলেছেন মা সরস্বতীদেবী। যদিও চিকিৎসা নিয়ে সন্দিহান সংস্থার সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শুক্লা দাসবড়ুয়া। তিনি বলেন, “বাঘোপুরের সব থেকে কাছে মানসিক হাসপাতাল কয়েলওয়ার। প্রায় দু’শো কিলোমিটার দূরত্ব পেরোনোর যোগাযোগ ব্যবস্থাই নেই! তবে মুখিয়া রাণুদেবী আশ্বাস দিয়েছেন, ওষুধ আনতে বাঘোপুর দিয়ে কয়েলওয়ারে যাওয়া বালির লরিতে তুলে দেওয়া হবে ওঁদের।”
সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে রত্নাবলী রায় বলছেন, “এক জন রোগীর মানসিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি, কথা বলতে না পারা বা অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা তো থাকতেই পারে। তাঁদের পুনর্বাসন কী ভাবে হবে, সেটা নিয়ে কোনও ভাবনা নেই প্রশাসনের! এমন ক্ষেত্রে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা নিয়ে রাজ্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে।” তাঁর কথায়, “সরকারের ভরসায় থাকলে তো মেয়েটি বাড়িই ফিরতে পারতেন না!”
পুরুলিয়া মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা স্বাস্থ্য ভবনের তরফে অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy