রাজ্যের বামপন্থী রাজনীতির ‘পিতামহ ভীষ্ম’ হয়ে যাওয়া বিমানবাবু নিজেই এ বার সেই চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে চান বলে খবর। ফাইল চিত্র
টানা ২৪ বছর ধরে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন সিপিএমের প্রবীণ নেতা বিমান বসু। যা বামফ্রন্টের ইতিহাসে নজিরবিহীনও বটে। বামফ্রন্ট গঠনের পর থেকে আর কোনও নেতাকে এত বেশি দিন এই পদে দেখা যায়নি। রাজ্যের বামপন্থী রাজনীতির ‘পিতামহ ভীষ্ম’ হয়ে যাওয়া বিমানবাবু নিজেই এ বার সেই চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে চান বলে খবর।
১৯৯৭ সালে তৎকালীন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান শৈলেন দাশগুপ্ত প্রয়াত হলে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয় বিমানকে। একই ভাবে ২০০৬ সালে তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস প্রয়াত হওয়ার পর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্বও বর্তেছিল তাঁরই কাঁধে। তারপর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিমান একা হাতেই এই দুই দায়িত্ব সামলেছিলেন। তার পরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের পদে আসেন সূর্যকান্ত মিশ্র। বিমান ফিরে যান বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের একক দায়িত্বে।
ঘটনাচক্রে, ফ্রন্ট চেয়ারম্যানের পদ তিনি ছেড়ে দিলে সেই শূন্যস্থানে বিমানের উত্তরসূরি হিসাবে আপাতত সবচেয়ে এগিয়ে সিপিএমের বর্তমান রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত। মার্চ মাসের পর তিনি রাজ্য সম্পাদক না থাকলেও পার্টির পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য থাকবেন। তা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ পার্টিতে সূর্যকান্তের মতো অভিজ্ঞ নেতার সংখ্যাও খুব কম। যিনি ফ্রন্টের চেয়ারম্যান হবেন, তাঁকে শরিকদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রেখে চলতে হবে। একদা রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্তের সেই অভিজ্ঞতাও রয়েছে। তাই আগামী দিনে বিমানের ছেড়ে যাওয়া চেয়ারে তাঁর মতো নেতার বসার সম্ভাবনা একেবারে ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না।
সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস আসন্ন। তার আগে দলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির ২৬ তম রাজ্য সম্মেলন হবে মার্চ মাসে। ১৫-১৭ মার্চ সেই সম্মেলন হবে কলকাতায়। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রের খবর, সেই সম্মেলনেই পার্টির রাজ্য সম্পাদক বদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই বদলের অপর পিঠে রয়েছে বিমানের ফ্রন্ট চেয়ারম্যানের পদ ছাড়ার সম্ভাবনা।
ওই বিষয়ে প্রশ্ন করায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা বলেছেন, ‘‘বামফ্রন্টকে অটুট রাখতে গত ২৪ বছর বিমান’দাকে যে কী কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে, তা কেবল বিমান’দাই জানবেন। বিমান’দার নেতৃত্ব প্রশ্নাতীত। তাঁর বিকল্প পাওয়া কিন্তু সহজ কথা নয়।’’ প্রসঙ্গত, অশীতিপর বিমান নিজেই বহুদিন পার্টির নতুনদের সুযোগ দেওয়ার কথা বলে আসছেন। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রের খবর, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে পুরনো ও নতুন— দুই প্রজন্মকেই বার্তা দিতে চান বিমান।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের পর সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই বিদ্রোহ করে বসেছিলেন আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের সব শীর্ষনেতা। সেই সময় তাঁদের বিদ্রোহ থামিয়ে বামফ্রন্টকে ঐক্যবদ্ধ রাখায় বিষয়ে বড় ভুমিকা ছিল বিমানের। আবার ২০১৬ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা নিয়েও বাম শরিকদের সঙ্গে কার্যত গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছিল ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানকেই। তাই যিনিই বিমানবাবুর উত্তরসূরি হবেন, তাঁকেও সময়ে সময়ে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকতে হবে। শেষ মুহূর্তের নাটকীয় কোনও পরিবর্তন না-হলে সূর্যকান্তকেই ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে। তেমনই মনে করছেন সিপিএম বামফ্রন্টের প্রবীণ নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy