Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

সন্দেশখালিতে ভুটভুটি ডুবি, উদ্ধার দু’টি দেহ

ভুটভুটি ডুবির পরে চার দিনের মাথায় উদ্ধার হল দু’টি দেহ। তবে কোন ডুবুরি কিংবা প্রশাসনের কর্মীদের চেষ্টায় নয়, মঙ্গলবার সকালে দেহ দু’টির একটি সন্দেশখালির আতাপুর গ্রামে রায়মঙ্গল নদী এবং অন্যটি বেড়মজুর গ্রামে বেতনী নদীর চরে আটকে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ জানিয়েছে, একটি দেহ বেড়মজুর গ্রামের বিকাশ মণ্ডলের (২৬)। অন্য দেহটি দ্বারিকজঙ্গলের দু’মাসের শিশু সায়ন দাসের। দেহ পরিবারের লোকজন শনাক্ত করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৩৬
Share: Save:

ভুটভুটি ডুবির পরে চার দিনের মাথায় উদ্ধার হল দু’টি দেহ। তবে কোন ডুবুরি কিংবা প্রশাসনের কর্মীদের চেষ্টায় নয়, মঙ্গলবার সকালে দেহ দু’টির একটি সন্দেশখালির আতাপুর গ্রামে রায়মঙ্গল নদী এবং অন্যটি বেড়মজুর গ্রামে বেতনী নদীর চরে আটকে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ জানিয়েছে, একটি দেহ বেড়মজুর গ্রামের বিকাশ মণ্ডলের (২৬)। অন্য দেহটি দ্বারিকজঙ্গলের দু’মাসের শিশু সায়ন দাসের। দেহ পরিবারের লোকজন শনাক্ত করেছেন।

শনিবার সন্দেশখালির যন্ত্রচালিত ভুটভুটিটি ন্যাজাট থেকে যাচ্ছিল কাঠখালি গ্রামের দিকে। প্রচুর যাত্রী তো ছিলেনই, ইমারতি সরঞ্জামও তোলা হয়েছিল ভুটভুটিতে। বেড়মজুরের দিকে যাওয়ার সময়ে মসজিদবাড়ি দক্ষিণপাড়ার এলাকায় ভুটভুটি বেসামাল হয়ে এক দিকে কাত হয়ে পড়ে। উল্টেও যায়। তলিয়ে যান অনেকে।

নিখোঁজের সংখ্যা নিয়ে ধন্দ আছে। প্রশাসনের মতে, ৪ জন নিখোঁজ। এলাকার মানুষের দাবি, প্রায় পনেরো জনের খোঁজ নেই। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, ভুটভুটিটি বহু দিনের পুরনো। ইঞ্জিনও ছিল যথেষ্ট কমজোরি। তা সত্ত্বেও ইমারতি দ্রব্য, মুদিখানার মাল তোলা হয়েছিল যাত্রিবোঝাই ভুটভুটিতে। জনা পঞ্চাশ যাত্রী ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে বিপর্যয় ঘটে। ভুটভুটির মালিক বা চালক অবশ্য এখনও গ্রেফতার হয়নি। তবে দেরিতে হলেও মঙ্গলবার থেকে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে অতিরিক্ত যাত্রী কিম্বা জিনিশপত্র ভুটভুটিতে তোলা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ন্যাজাট ফেরিঘাট এলাকায় মাইক প্রচার করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে বেড়মজুর গ্রামে বেতনী নদীর চরে একটি শিশুর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে দ্বারিকজঙ্গল গ্রাম থেকে বিশ্বজিত্‌ দাস এবং তাঁর স্ত্রী অলোকা এসে তাঁদের সন্তানকে শনাক্ত করেন। ঘটনার দিন সায়নকে নিয়ে ওই দম্পতি ন্যাজাটে এসেছিলেন ডাক্তার দেখাতে। ফেরার পথে ভুটভুটির পাটাতনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। সকলেই জলে পড়ে যান। বিশ্বজিত্‌বাবু বলেন, “এক হাতে ছেলেকে অন্য হাতে স্ত্রীকে ধরে অনেকটাই পাড়ের দিকে এগিয়ে এসেছিলাম। উদ্ধার করতে আসা একটা বড় নৌকার ধাক্কায় হঠাত্‌ হাত থেকে পড়ে গেল ছেলে। আর তার খোঁজ পাইনি।”

বেলা বাড়তেই সন্দেশখালি থানায় খবর আসে, আতাপুর গ্রামে রায়মঙ্গলের চরে বছর ছাব্বিশের এক যুবকের দেহ ভেসে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দেহটি আটকান। খবর পেয়ে বেড়মজুর গ্রাম থেকে আত্মীয়েরা গিয়ে বিকাশের দেহ শনাক্ত করেন।

এ দিকে, কত দিন তল্লাশি চালানো সম্ভব হবে, তা নিয়েও দ্বিধাগ্রস্ত প্রশাসন। এরই মধ্যে প্রশাসনের চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ডুবুরিরা। প্রায় জলে ডুব না দিয়েই ডুবুরিরা তাদের পাওনা হিসাবে লক্ষাধিক টাকা চেয়ে বসেছে। এই অবস্থার মধ্যে দিশাহারা প্রশাসনের পক্ষে কেবল সন্দেশখালির বেতনী নদীতে মাঝে মধ্যে লঞ্চ নিয়ে ঘোরাঘুরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া তল্লাশি অভিযান প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড়। আশপাশের গ্রামের বহু মানুষ নৌকা নিয়ে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন। বসিরহাটের মহকুমাশসাক শেখর সেন বলেন, “ডুবুরিদের দাবির বিষয় নিয়ে উদ্ভূত সমস্যা আলোচনার মধ্যে দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে আর দু’দিনের মধ্যে যদি তলিয়ে যাওয়া ভুটভুটি এবং মানুষের খোঁজ না মেলে, তা হলে হয় তো তল্লাশি বন্ধ করে দিতে হবে।”

এলাকার মানুষ জানান, এতো বড় একটা দুর্ঘটনার পরেও পুলিশ ও প্রশাসনের যে উদ্যোগ লক্ষ করা যায়, এ ক্ষেত্রে তেমনটা চোখে পড়ছে না। মালপত্রের সঙ্গে যাত্রী তোলা হচ্ছে নৌকোয়। রাজনৈতিক দলগুলিও নীরব। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার পরে আধুনিক পরিকাঠামো-বিহীন স্থানীয় ১০ জন ডুবুরি এবং কলকাতা থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডুবুরি আনা হয়েছিল। ঘটনার দিন রাতে দু’একবার জলে নামার পরে অতিরিক্ত স্রোতে জলে নামা সম্ভব নয় বলে তারা ওই দিনই চলে যায়। স্থানীয় ডুবুরিরা কিছুটা চেষ্টা করেছেন। রবিবার ও সোমবার কয়েক দফায় জলে নামে তারা। কিন্তু এই কাজের বিনিময়ে ইতিমধ্যেই লক্ষাধিক টাকা দাবি করে বসেছে তারা। তা-ও যদি যে কাজে তাদের আনা, সেই কাজ হত!

অন্য বিষয়গুলি:

sandeshkhali boat capsized southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy