স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী পরিচয় দিয়ে দুই স্বাস্থ্যকর্মী ও এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর কাছ থেকে প্রায় দু’লক্ষ টাকা হাতিয়ে পালালেন এক মহিলা। অভিযোগ, ওই মহিলা নিজেকে স্বাস্থ্য দফতরের অফিসার বলে ভেবিয়ার দুই স্বাস্থ্যকর্মী ও মিনাখাঁর মালঞ্চের এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর কাছে গিয়ে জানান, তাঁদের নামে দফতর থেকে মামলা হচ্ছে। মামলা থামানোর জন্য অনেক টাকা দাবি করেন। তাঁরা সেই টাকা দিয়েও দেন। পরে বুঝতে পারেন কোনও মামলাই হয়নি। বেমালুম ঠকে গিয়েছেন তাঁরা। ততক্ষণে ওই প্রতারক মহিলা ও তার দলবল টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত বলেন,‘‘আমাদের দুই কর্মীর কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। ওই দু’জনকে ডাকা হয়েছে। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতারকের বিষয়টি জানিয়ে সাবধান করা হয়েছে।’’পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা ওই স্বাস্থ্যকর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের কাছে গিয়ে কখনও বিকাশ ভবন থেকে, কখনও স্বাস্থ্য দফতর থেকে আসছেন বলে জানিয়েছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসনাবাদের ভেবিয়া পালপাড়ার বাসিন্দা শুভ্রা পাল স্থানীয় মুরারীশা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজ করেন। গত বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ ওই কেন্দ্রের সামনে একটি দামি এসি গাড়ি এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নামেন বছর ষাটের এক মহিলা। সঙ্গে ছিল এক যুবক। শুভ্রাদেবী তখন শিশুদের টিকাকরণের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সঙ্গীদের মারফত খবর পান, কলকাতার স্বাস্থ্য ভবন থেকে এক মহিলা অফিসার তাঁর খোঁজে এসেছেন। শুভ্রাদেবীর কথায়, “স্বাস্থ্য ভবন থেকে এসেছেন শুনে তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছে যাই। ওই মহিলা নিজেকে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক পরিচয় দিয়ে বলেন, আমার নামে নাকি বড় অভিযোগ হয়েছে। দুপুরের মধ্যে মামলাও শুরু হবে। দ্রুত কোনও ব্যবস্থা না নিলে চাকরিতে আমার বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। সাসপেন্ড তো বটেই, চাকরিও চলে যেতে পারে বলে ভয় দেখান মহিলা।” এর পরে মহিলা শুভ্রাদেবীকে গাড়িতে তুলে নেন। শুভ্রাদেবী বলেন, “কিছু না করা সত্ত্বেও কেন আমার বিরুদ্ধে মামলা শুরু হতে চলেছে বুঝতে পারিনি। ঘামতে শুরু করি। ওই মহিলা তার ব্যাগ থেকে জল বের করে খেতে দেন। তারপরে কেমন একটা লাগছিল। মহিলার কথা মত বাড়ি এসে ব্যাঙ্কের বই নিয়ে ভেবিয়ায় ব্যাঙ্কে যাই। পুরো সময়টাই মহিলা এবং তাঁর দল আমার সঙ্গে ছিল। ব্যাঙ্কে গিয়ে আমাকে ৭০ হাজার টাকা লিখতে বলেন। আমিও লিখে দিই। এরপর মহিলা ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে দ্রুত টাকা তোলার ব্যবস্থা করতে বলেন। ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার পর টাকাটা আমার হাত থেকে নিয়ে নেন। তারপরে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে যান। বলেন, সাড়ে তিনটের মধ্যে আসবেন। আমাকে একটা মোবাইল নম্বর দিয়ে যান।’’
শুভ্রাদেবী জানান, এর পরে মহিলা আর আসেননি। মোবাইলে ফোন করলে দেখা যায়, ফোন ব্যস্ত রয়েছে। বৃহস্পতিবার লিখিত ভাবে ঘটনাটি হাসনাবাদ থানায় জানান তিনি। সিসিটিভির ফুটেজ দেখার জন্য ভেবিয়া ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ মনে করছে, প্রতারক দলটি এতটাই দ্রুততার সাথে কাজ করেছে যে ওই স্বাস্থ্যকর্মী কিছু বুঝে ওঠার আগেই কাজ শেষ করে পালিয়ে গিয়েছে। জলেও হয়তো কিছু মেশানো ছিল।
প্রায় একই ভাবে ঠকেছেন মিনাখাঁর চৈতল উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মী কুমকুম চট্টোপাধ্যায়ও। ভেবিয়ার বাসিন্দা কুমকুমদেবী পুলিশকে জানান, তিনি যখন উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত, গাড়ি করে এক মহিলা এসে তাঁকে ডাকেন। নিজের নাম বলেন, সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়। নিজের পরিচয়পত্রও দেখান তিনি। বিকাশ ভবন এবং স্বাস্থ্য ভবনের কাজের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করে তিনি কুমকুমদেবীকে জানান, তাঁর নামে একটি মামলা রুজু হতে চলেছে। মামলাটি খারিজ করা না হলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে কুমকুমদেবীকে। তাঁকেও একই ভাবে গাড়িতে তোলেন তিনি। মালঞ্চের একটি ব্যাঙ্ক থেকে ৪৯ হাজার টাকা তুলে দেন কুমকুমদেবী ওই মহিলাকে দেন। পরে বুঝতে পারেন প্রতারিত হয়েছেন। তার পরেই মিনাখাঁ পুলিশকে বিষয়টি জানান তিনি। মালঞ্চের আই সি ডি এস কর্মী রেহেনা বিবির কাছ থেকেও একই ভাবে ৪০ হাজার টাকা ও গলার হার নিয়ে চম্পট দিয়েছেন ওই মহিলা। সব ক’টি ক্ষেত্রেই পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়গুলি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy