Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

মরা গাছ কাটবে কে, টানাপড়েন চলছেই

রাস্তার দু’ধারে সার সার মরা গাছ। তার ডালপালা কবে কার ঘাড়ে ভেঙে পড়বে, কেউ জানে না। মাঝে-মধ্যে যে দু’চারখানা ভাঙে না, তা নয়। গাছগুলি অবিলম্বে কাটা উচিত বলে মনে করেন স্থানীয় মানুষ। প্রশাসনের কর্তাদেরও তাই মত। কিন্তু গাছ আর কাটা হয় না। ডায়মন্ড হারবার পুর এলাকার নানা জায়গায় এই একই চিত্র। ঝড়-বাদলার দিন এলেই আতঙ্কিত হন মানুষ।

রাস্তার পাশে মরা গাছ। ভেঙে পড়তে পারে যখন তখন। নিজস্ব চিত্র।

রাস্তার পাশে মরা গাছ। ভেঙে পড়তে পারে যখন তখন। নিজস্ব চিত্র।

শান্তশ্রী মজুমদার
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৪ ০১:৩৫
Share: Save:

রাস্তার দু’ধারে সার সার মরা গাছ। তার ডালপালা কবে কার ঘাড়ে ভেঙে পড়বে, কেউ জানে না। মাঝে-মধ্যে যে দু’চারখানা ভাঙে না, তা নয়। গাছগুলি অবিলম্বে কাটা উচিত বলে মনে করেন স্থানীয় মানুষ। প্রশাসনের কর্তাদেরও তাই মত। কিন্তু গাছ আর কাটা হয় না।

ডায়মন্ড হারবার পুর এলাকার নানা জায়গায় এই একই চিত্র। ঝড়-বাদলার দিন এলেই আতঙ্কিত হন মানুষ। ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে মরা গাছ কাটার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কিন্তু বাকি গাছগুলির কী হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মূলত দুই সরকারি দফতরের টানাপড়েনের মধ্যে মরা গাছ নিয়ে আতঙ্ক জিইয়ে রয়েছে পুর এলাকায়।

পুরসভা এ ব্যাপারে উদ্যোগী হলেও সেচ ও পূর্ত দফতরের জমি-বিবাদে মরা গাছের মালিকানাই ঠিক করাই যায়নি প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বনাধিকারিক লিপিকা রায়ের কথায়, “যে দফতরের জমিতে গাছ রয়েছে, তাঁদের তরফে আবেদন জমা পড়লে বন দফতর সমীক্ষা করে গাছ কাটার অনুমতি দিতে পারে।’’

পুরসভার তিনটি ছড়িয়ে রয়েছে বিশাল আকারের মরা শিরীষ ও ক্ষীরীশ গাছ। শুকনো ডালপালা ঝুলছে রাস্তার উপর। কোথাও বা বাড়ি দোকানের উপরে ডালপালা ঝুলে রয়েছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের জাতীয় সড়কের পাশে ডায়মন্ড হারবার থানার কাছেও রয়েছে এ রকম দু’টি বড় গাছ। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজ রোডের ধারেও রয়েছে ৬-৭টি মরা গাছ। এর ফল যে দুর্ঘটনা হতে পারে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন পুর-কর্তৃপক্ষ।

পুরসভার চেয়ারপার্সন মীরা হালদার বলেন, “পুজোর আগে থেকেই এগুলি কাটার চেষ্টা করছি। কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। ডাল ভেঙে পড়ছে। সমস্যা ঠেকাতে থানার কাছের গাছগুলি কাটার জন্য পূর্ত (জাতীয় সড়ক) ইঞ্জিনিয়রদের বলেছি। এর আগে দু’টি গাছ কাটা হয়েছে। থানার কাছের গাছগুলি কাটার ক্ষেত্রে বন দফতরের কাছে আবেদনও জমা করা হয়েছে।” ১৪ নম্বর ওয়ার্ডেরও একই চিত্র। লালপুল থেকে শুরু করে পুর দফতরের কার্যালয় পর্যন্ত এলাকার ১০-১২টি বিশালাকার শুকনো গাছ রয়েছে। সেগুলি ডালপালা মেলেছে রাস্তার উপর। বিপজ্জনক শুকনো ডালের তলা দিয়েই যাতায়াত করতে হয় ডায়মন্ড হারবার টাউন অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে পড়ুয়াদের।

তার উল্টো দিকে নৌ-সেনা প্রাঙ্গণের ভিতরে ও রাস্তা লাগোয়া দেওয়াল ঘেঁষে রয়েছে আরও কিছু মৃত গাছ। দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়িয়েছে সেচ দফতরের সাবডিভিশন প্রাঙ্গণের একটি মরা গাছ। লালপুল অটো স্ট্যান্ডের কাছে সেটি ডালপালা মেলে রয়েছে। ঠিক তার নীচে দেওয়াল ঘেঁষে টিনের চাল দিয়ে চলছে অটো স্ট্যান্ডের ‘টাইম অফিস’।

অটো স্ট্যান্ড থেকে রোজ কয়েক হাজার যাত্রী ওই যাতায়াত করেন। স্টার্টার রণজিৎ হালদার বলেন, “আমি এউ ওয়ার্ডের বাসিন্দা। বছর খানেক আগে ঝড়ের সময়ে একটি শুকনো গাছের ডাল ভেঙে নীচে দাঁড়ানো অটোর চাল ফাটিয়ে দেয়। যদিও সে সময়ে কোনও যাত্রী ছিলেন না বলে তেমন কোনও বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি।” এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পীযূষকান্তি বারিক বলেন, “পূর্ত দফতরের কাছে এর আগেও চিঠি পাঠানো হয়েছে ওই গাছগুলি কাটার বিষয়ে। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। আবারও আবেদন জানানো হবে।”

ঝড়-জলে মাথায় ডাল ভেঙে পড়ার আতঙ্ক নিয়েই এলাকার বাসিন্দারা চলাফেরা করেন। এখনও কোনও সমাধানসূত্র পাওয়া যায়নি। পূর্ত দফতরের ওই রাস্তার দু’পাশের জমিতে থাকা শুকনো গাছগুলি সেচ দফতরের বলে জানায় পূর্ত দফতর। পূর্ত দফতরের ডায়মন্ড হারবার মহকুমার সহকারী বাস্তুকার বিশ্বজিৎ বল বলেন, “আমরা রাস্তা তৈরি করেছি। তার রক্ষণাবেক্ষণ করি। গাছগুলি আমাদের নয়, সেচ দফতরের জমিতে। তাই সেগুলি কাটার ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারব না।”

অন্য দিকে, সেচ দফতরের তরফেও বন দফতরের কাছে আবেদন জমা পড়েনি গাছ কাটার জন্য। মহকুমার সেচ দফতরের সহকারী বাস্তুকার প্রদীপ হালদার ও দফতরের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকেরা এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে সেচ দফতর সূত্রে বলা হয়েছে, পূর্ত দফতরের রাস্তার পাশের জমির রেকর্ড পাওয়া যাচ্ছে না। তাই গাছগুলি কার মালিকানাধীন, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে।

সমস্যার সমাধান যে অবিলম্বে হচ্ছে না, তা ধরেই নিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। সামনেই বর্ষা-বৃষ্টির মরসুম। শুকনো ডাল ভেঙে বিপদের আশঙ্কায় দিন কাটছে তাঁদের।

অন্য বিষয়গুলি:

southbengal santasri majumdar diamond harbor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy