বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে এই নদীবাঁধ। ছবি: নির্মল বসু।
সন্দেশখালির কালীনগরের মসজিদবাড়িতে বেতনী নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধ জোড়া লাগলেও ফের বাঁধ ভেঙে বড় বিপদের মুখে পড়ার আশঙ্কায় দিন গুণছেন ওই এলাকার মানুষ। কালীনগর ফেরিঘাট থেকে বাঁ দিকে ঘোষপুর স্লুইচ গেটের কাছে বেতনী নদীর বাঁধে বড় আকারের ফাটল দেখা দিয়েছে। দ্রুত বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু করা না হলে সামনেই ভরা কোটালে সুন্দরবন এলাকার নদীতে জল বাড়লে ঘোষপুরে বাঁধ রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে তাঁদের অনুমান। ওই বাঁধ ভাঙলে কালীনগর থেকে ঘোষপুর, গজালিয়া, ঘটিহারা, মডেলবাজার হয়ে একেবারে ভবাণীপুর পর্যন্ত নোনা জলে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
ঘোষপুরে নদী বাঁধের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ায় স্থানীয় বিডিও অনিন্দ্য গৌতম, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অপর্ণা হালদার, সেচ দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার গৌতম চট্টোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ রণজিৎ দাস-সহ অন্যান্য সেচকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে শনিবার বিকেলে সন্দেশখালি ১ ব্লক অফিসে জরুরি বৈঠক করেছেন বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিস আলি। তিনি বলেন, “সকলে মিলে যে ভাবে মসজিদবাড়ির বাঁধ আপাতত রক্ষা করেছি, তেমনি ঘোষপুরের বাঁধও আমারা রক্ষা করব।” এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে তিনি ঘোষপুরে মেরামতির কাজ শুরু করার জন্য সেচ দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেন।
শনিবার দুপুরে কালীনগর বাঁধের কাজ দেখতে এসেছিলেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। কাজে গাফিলতির জন্য দফতরের এক আধিকারিককে ধমকান তিনি। সেই সঙ্গে বাঁধ ভাঙার পরে মাত্র ন’দিনের মধ্যে রিং বাঁধ তৈরি করে জল আটকানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রশংসাও করেন তিনি। দুর্গত মানুষকে প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়ার পাশাপাশি ভরা কোটালে জল বাড়ার আগে যত দ্রুত সম্ভব মসজিদবাড়িতে রিং বাঁধে মাটি ফেলে শক্ত করার নির্দেশ দেন মন্ত্রী। ওই এলাকায় কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ শুরুর কথাও বলেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মসজিদবাড়ি এলাকার নদীবাঁধের অবস্থা শোচনীয়, এই অভিযোগ আগেও করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন সে কথা কর্ণপাত না করায় গত ১২ অগস্ট রাতে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এ বার অন্তত ঘোষপুরের ক্ষেত্রে তেমনটা যেন না হয়, সেই দাবি উঠেছে। বাসিন্দাদের বক্তব্য, বাঁধ ভাঙার পরে যেন বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু না হয়। সময় থাকতে বাঁধ মেরামত করতে পারলে বহু মানুষ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
বিলাস হালদার, তুষার রায় বলেন, “কালীনগর, সেহেরা-রাধানগর এবং ভবাণীপুর তিনটি পঞ্চায়েতের মধ্যে সংযোগকারী ঘোষপুর রাস্তাটি এলাকার লক্ষাধিক মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, ফেরিঘাট-সহ সর্বত্র যেতে হলে ওই রাস্তা ব্যবহার জরুরি। সংস্কারের অভাবে ঘোষপুর স্লুইস গেটের কাছে বাঁধ ভেঙে ও ফাটল ধরে রাস্তার বেশির ভাগটাই তলিয়ে গিয়েছে।”
কালীনগরে বেতনী নদীর অন্য পাড়ে ন্যাজাট ফেরিঘাট-সংলগ্ন পশ্চিমদিকের দোকানগুলি কার্যত এখন নদীর উপরে ঝুলছে। সেখানেও বাঁধে বড় আকারের ফাটল দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সনৎ মণ্ডলের নেতৃত্ব ব্যবসায়ীরা বিডিও এবং পঞ্চায়েত সমিতি সভাপতিকে লিখিত ভাবে সে কথা জানান। ব্যবসায়ীদের দাবি, ন্যাজাট এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ইট-ভর্তি বাঁশের খাঁচা ফেললেও বাঁধ খানিকটা রক্ষা পাবে। এ বিষয়ে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আধিকারিকদের বলা হয়েছে, খারাপ এলাকা চিহ্নিত করে সামনের কোটালের আগে সেখানকার বাঁধে মাটি ফেলে আরও শক্তিশালী করতে হবে। মন্ত্রী জানান, সুন্দরবন এলাকায় ইতিমধ্যে ২১ কিলোমিটার কংক্রিটের বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। আরও ১৯ কিলোমিটারের কাজ চলছে। রাজীববাবুর কথায়, “সুন্দরবন এলাকার মানুষদের রক্ষায় যা যা করার দরকার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা করবেন।” ইদ্রিসের কথায়, “ঘোষপুর এবং ন্যাজাটে বাঁধ রক্ষায় প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আধিকারিকদের বলা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy