হাটে বিকিকিনি। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
হাটটি এলাকার চাষিদের ফসল বিক্রির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। দূর-দূরান্ত থেকে এখানে শয়ে শয়ে চাষিরা গাড়িতে করে তাদের খেতের ফসল এখানে এনে বিক্রি করেন। এলাকার মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতেও হাটটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরে প্রায় ২০ বিঘে জমির উপর গোপালনগরের হাটটি প্রায় ৮০ বছরের প্রাচীন। বনগাঁ-চাকদহ সড়কের উত্তর পাশে প্রতি সপ্তাহের রবি ও বৃহস্পতিবার এখানে হাট বসে।
কথা হচ্ছিল ওই হাটে পানের দোকানি বৃদ্ধ সুব্রত দত্তের সঙ্গে। বাড়ি স্থানীয় পাল্লা এলাকায়। দীর্ঘ বহু বছর সুব্রত দত্তের সঙ্গে। বাড়ি স্থানীয় পাল্লা এলাকায়। দীর্ঘ বহু বছর ধরে এই হাটের সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগ। বলছিলেন, ‘‘২৫ বছর আগে থেকে এখানে হাট দু’বেলা শুরু হয়েছে। তার আগে হত এক বেলা করে।” কী পরিবর্তন দেখছেন এখন? সুব্রতবাবুর কথায়, ‘‘হাটের এলাকা কমে গিয়েছে। তবে দোকানের সংখ্যা এবং বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রের বৈচিত্র্য বেড়েছে। অতীতে মোমবাতির আলো জ্বলত। বড় দোকানিরা হ্যাজাক ব্যবহার করতেন। এখন অবশ্য সে সব অতীত। এখন হাটের ব্যবসায়ীরা নিজেরাই চাঁদা দিয়ে জেনারেটরের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা করেছেন।’’
স্থানীয় কল্যাণপুর, নতিডাঙা, বালিয়াডাঙা, আলোকালীপুর, শ্রীপল্লি, রামচন্দ্রপুর, পাল্লা, মেহেরপুর, কানসোনা-সহ প্রায় ৫০টি গ্রামের মানুষ এই হাটের উপরে নির্ভরশীল। বহু প্রাচীন এই হাটের পরিকাঠামো গত অভাব এখনও থেকে গিয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা জানালেন, বর্ষার সময় অল্প বৃষ্টি হলেই চত্বরে জল জমে যায়। কাদা জলে থই থই অবস্থা। ক্রেতা-বিক্রেতারা যাতায়াত করতে চরম অসুবিধার মধ্যে পড়েন। এখনও তৈরি হয়নি স্থায়ী শৌচাগার। রয়েছে পানীয় জলের অভাব। রবি ও বৃহস্পতি বার সকাল থেকে শুরু পাইকারি কেনাবেচা। দুপুরের পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে খুচরো বিক্রি। শাক-সব্জি-চাল-ডালের পাশাপাশি মাছ, মাংস, মুদি, মশলা কাঠের আসবাবপত্র, বাঁশের ঝুড়ি, লোহার চাষের যন্ত্রাংশ বিক্রি হয়। জামা-কাপড়ের রেডিমেড পোশাকের আলাদা বিভাগ রয়েছে। হাই সমিতির সম্পাদক সমীর দেবনাথ বলেন, ‘‘হাট মালিক হাটের কিছুটা অংশ বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন। কিছুটা অংশ বিক্রি হয়ে গিয়েছে। সে কারণে কিছু দোকানি রাস্তার উপর পসরা নিয়ে বসতে বাধ্য হচ্ছেন। ঘণ্টা খানেক বৃষ্টি হলেই জল জমে যায়।”
স্থানীয় বাসিন্দা তথা বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিত্ দাসকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। তিনি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। বিশ্বজিত্বাবু বলেন, ‘‘হাটের জমি বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। গোপালনগরের ঐতিহ্য এই হাট। এটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নিকাশি নালা, পানীয় জলের ব্যবস্থা সহ সমস্ত পরিকাঠামো তৈরি করে দেওয়া হবে।’’
ব্যবসায়ী নিতাই পাল এখানে পঁয়ত্রিশ বছর ধরে দোকান চালাচ্ছেন। তিনি জানালেন, স্থানীয় নহাটা হাটেও তার দোকান রয়েছে। তবে এখানে ক্রেতা সংখ্যা বেশি। হাইটিও জমজমাট। দোকানের জন্য হাট মালিককে খাজনা দিতে হয়। নিয়মিত হাটে জিনিসপত্র কিনতে আসেন বিকাশ সরকার। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘এক ছাতার তলায় সব্জি থেকে জামা-কাপড় আসবাবপত্র সবই পাই। দাম ও অন্য হাই বাজারের তুলনায় অনেক কম।’’ কল্যাণপুরের বাসিন্দা আনিসুর মোল্লা হাটে এসেছিলেন। তাঁর কথায়, চাষিরা খেত থেকে সরাসরি ফসল এখানে নিয়ে এসে বিক্রি করেন বলে টাটকা জিনিসটা পাই। রাস্তার উন্নতি হওয়াই যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে। পারুল দাস নিয়মিত হাটে আসেন টাটকা শাক-সব্জির তাগিদে। উচ্ছে, পটল, মুলো, বেতের বোনা ধামা কুলোই নয় এখানে বাবা-মায়ের সঙ্গে কচিকাচারা হাটে আসে আখের রস, আইসক্রিম, ফুচকা, ঘুগনি, আলুর চপ, বেগুনির লোভে। এক বৃদ্ধ হাটে কেনাকাটার পর নাতনির জন্য নিয়ম করে জিলিপি নিয়ে যান। বৃদ্ধরা হাতে এসে দীর্ঘ ক্ষণ সময় কাটান বন্ধুদের সঙ্গে। গল্প-গুজব করে তারপর বাড়ির পথ ধরেন। অতীতে ৫-১০ কিলোমিটার পথ হেঁটেই বাড়ি ফিরতে হত। এখন যানবাহনের অভাব নেই। গরু গাড়িতে যাতায়াত এখন আর দেখা যায় না। তার জায়গা নিয়েছে ভ্যান, অটো, বাস-ট্রেকার তো রয়েইছে। স্থানীয় গোপালনগর-১, গোপালনগর-২, আকাইপুর, বৈরামপুর, পাল্লা, গঙ্গানন্দপুর পঞ্চায়েতের চাষিদের ফসল বিক্রি বা এখানকার মানুষের সাপ্তাহিক কেনাকাটার জন্য গোপালনগরের হাটের ভূমিটা অনেকটাই। চাষিরা জানালেন, বনগাঁর সতীগঞ্জের হাটে বা বনগাঁয় বাজারে মালপত্র নিয়ে যেতে পরিবহণ খরচ বাঁচিয়ে লাভ খুব বেশি থাকে না। এখানে প্রচুর মানুষ কেনাকাটা করেন বলে চাহিদা থাকায় এখানে ফসল বিক্রি হয়ে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy