সুইচ টিপে চুল্লির উদ্বোধন করলেন ফিরহাদ হাকিম।—নিজস্ব চিত্র।
বনগাঁ শহরের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল স্থানীয় খয়রামারি শ্মশানে একটি বৈদ্যুতিক চুল্লি করা হোক। অবশেষে সেই দাবিপূরণ হল রবিবার। বনগাঁ পুরসভার উদ্যোগে নির্মীয়মাণ ওই বৈদ্যুতিক চুল্লির উদ্বোধন করলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। গাইঘাটা-ঠাকুরনগর-চাঁদপাড়া নামে একটি পুরসভা তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রী। পাশাপাশি, গত চার বছরের উন্নয়নের খতিয়ান দিয়ে একটি পুস্তিকাও প্রকাশ করা হয়েছে এ দিন।
ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন বনগাঁ রেড ক্রস সোসাইটির সম্পাদক শঙ্কর আঢ্য। তাছাড়াও ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি রহিমা মণ্ডল, বনগাঁ উত্তর ও দক্ষিণ বিধানসভার বিশ্বজিত্ দাস সুরজিত্ বিশ্বাস-সহ অন্যান্য কাউন্সিলরেরা।
পুরমন্ত্রী বলেন, ‘‘একটা জিনিস তৈরি করা সহজ। কিন্তু তাকে সঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।’’
১৯৫৪ সালে বনগাঁ পুরসভা তৈরি হলেও এতদিন পর্যন্ত শহরের একমাত্র খয়রামারি শ্মশানে কোনও বৈদ্যুতিন চুল্লি ছিল না। পুরসভা বা বিধানসভা-- যে কোনও নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রচারের অন্যতম বিষয়বস্তু ছিল বৈদ্যুতিন চুল্লি তৈরির আশ্বাস। বছরের পর বছর ধরে প্রতিশ্রুতি পেতে পেতে হাঁফিয়ে উঠছিলেন বাসিন্দারা। খয়রামারি শ্মশানের পরিকাঠামো ঢেলে সাজিয়ে বসানো হয় বৈদ্যুতিন চুল্লি। শ্মশানের নামকরণ করা হয় বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক প্রয়াত ভূপেন্দ্রনাথ শেঠের নামে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, সম্প্রতি হয়েছিল চুল্লি পুজো হয়েছিল। রবিবার থেকে সাধারণ মানুষের জন্য সেটা খুলে দেওয়া হল।
২০১০ সালের পুরভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। চেয়ারম্যান হন তৃণমূলের জ্যোত্স্না আঢ্য। ওই সময়ে বনগাঁর তৃণমূল বিধায়ক গোপাল শেঠ ও সাংসদ গোবিন্দচন্দ্র নস্করের বিধায়ক ও সাংসদ তহবিলের টাকায় শ্মশানে বৈদ্যুতিন চুল্লি তৈরির কাজ শুরু হয় ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। শিলান্যাস করেন তত্কালীন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সৌগত রায়। বিধায়ক ও সাংসদ তহবিল থেকে যথাক্রমে ৪০ লক্ষ ও ৩৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। পুর-দফতর দিয়েছে ৪৫ লক্ষ টাকা। বকি টাকা দেয় পুরসভার। জ্যোত্স্নাদেবীর অভিযোগ, তত্কালীন বাম সরকারের কাছে এ জন্য অর্থের সাহায্য চেয়েও তা পাওয়া যায়নি।
তবে বৈদ্যুতিন চুল্লি চালু হওয়ায় খুশি তাঁরা। জ্যোত্স্নাদেবী বলেন, “এলাকার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারা আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। ভাল লাগছে মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি মেটাতে পেরে। ভূপেন জ্যাঠাকে শ্রদ্ধা জানাতে পেরে আমরা গর্বিত। তিনি এই বিষয়ে প্রথমে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।” পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই বৈদ্যুতিন চুল্লি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা।
শুধু মাত্র বনগাঁ শহর নয়, গোটা মহকুমাতেই কোনও বৈদ্যুতিন চুল্লি এত দিন ছিল না। ফলে শবদেহ সত্কার করতে যেতে হত হালিশহর, নবদ্বীপ বা কলকাতায়। তাতে খরচ পড়ত প্রচুর। এ বার আর সেই সমস্যা রইল না। খয়রামারি শ্মশানটির পরিকাঠামোও বেহাল ছিল। বর্ষার সময় নদীর জল ঢুকে পড়ত শ্মশান চত্বরে। জল সরতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে যেত। বৃষ্টিতে কাঠও নিভে যেত। খোলা আকাশের নীচে শবদেহ পোড়ানোর ফলে দূষণ ছড়াত।
বর্তমান পুরবোর্ড নদীর ধারে পাঁচিল দিয়েছে। এখন শ্মশান চত্বরে আর নদীর জল ঢুকে পড়ে না। শ্মশান চত্বরে মাটি ফেলে উঁচু করা হয়েছে। আগে শবদেহ আসত দিনে গড়ে ৫-৭টি। এখন পরিকাঠমোর উন্নতির পর দিনে গড়ে ১০-১৪টি শবদেহ আসে। পুর-কর্তৃপক্ষের আশা, শুধু মহকুমা নয়, নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকেও এবার এখানে শবদেহ আসবে।
জ্যোত্স্নাদেবী বলেন, ‘‘বৈদ্যুতিন চুল্লিতে শবদেহ পোড়ানোর খরচ ১০০০-১২০০ টাকার মধ্যে থাকবে। যাতে গরিব মানুষের কোনও অসুবিধা না হয়, তাও দেখা হবে।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, “খোলা জায়গায় মৃতদেহ পোড়ানোর ফলে দুর্গন্ধে বাড়িতে টেকা যেত না। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘হাসপাতালের মর্গে থাকা দীর্ঘদিনের পচা গলা শবদেহ পোড়ানোর সময় সব থেকে বেশি দুর্গন্ধ বেরোত। পুরসভাকে ধন্যবাদ, তাঁরা আমাদের দাবি মেনে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসালেন।’’
শঙ্করবাবু বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগেও আমরা ভাবতেও পারতাম না এখানে একটি বৈদ্যুতিন চুল্লি হতে পারে!” দূষণ রোধের পাশাপাশি সৌন্দর্যায়নও বড় পাওনা।’’
বিশ্বজিত্ দাস বলেন, ‘‘শুধু বৈদ্যুতিন চুল্লিই নয়, সার্বিক ভাবে শহরের উন্নয়ন হচ্ছে পুরসভার মাধ্যমে। সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরির কাজ চলছে। ত্রিকোন পার্কে সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে পুরসভা চালু করেছে স্বাস্থ্যদীপ।’
উন্নয়ন যে কিছুটা হয়েছে, তা মেনে নিচ্ছেন সাধারণ মানুষও। এদিন বর্তমান পুরবোর্ডের ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতীদের সংবর্ধনাও দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy