সন্ধ্যার পরে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে মাওবাদী হানার আশঙ্কায় বাসে যাত্রীর সংখ্যা দিনে দিনে তলানিতে ঠেকেছে। ফলে ওই সমস্ত রুটে বাস চালাতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।
কোথাও চলছে পুলিশের জুলুম।
কোথাও রাস্তা খারাপ। যন্ত্রপাতি বিগড়ে লোকসান হচ্ছে বহু টাকার।
বাস মালিকদের এমনই নানা সমস্যার কথা উঠে এল রাজ্যের বাস মালিকদের নিয়ে এক আলোচনা সভায়। শুক্রবার ডায়মন্ড হারবারের রত্নশ্বরপুরের কাছে একটি বেসরকারি হোটেলে সভা ডাকা হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জয়েন্ট কমিটি অফ বাস অ্যাসোসিয়েশনে উদ্যোগে। রাজ্যের ১৯টি জেলার বাস মালিকেরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এসেছিলেন সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা বাস ওর্নাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অশোক গায়েন, উত্তরবঙ্গ বাস মালিক ইউনিয়নের সদস্য উপল দেবনাথ, বিধান রায় প্রমুখ।
অল বেঙ্গল বাস, মিনি বাস জয়েন্ট কমিটির সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের ১৯টি জেলায় প্রায় ৩৫ হাজার বাস-মিনিবাস চলাচল করে। বাস চালাতে গিয়ে যে সমস্ত সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে, তার সমাধানের জন্য রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের কাছে জানানো হবে। পাশাপাশি যাত্রী পরিষেবায় যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।”
এ দিনের সভায় আলোচনার বিষয় ছিল, সারা রাজ্যে বিভিন্ন রুটে বাস চালাতে গিয়ে কী কী সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে এবং তার সমাধানের পথ বের করা। বাস মালিকদের বক্তব্য, বেশ কিছু জাতীয় সড়ক ও পূর্ত দফতরের রাস্তা বেশ খারাপ। ফলে গাড়ি চলাচলের সমস্যা হচ্ছে। অথচ রাস্তার উন্নতির জন্য টোল ট্যাক্স নিচ্ছে সরকার। এমন কিছু কিছু রুট রয়েছে, সারা দিনে বাস চলাচল করতে গিয়ে বারে বারে টোল ট্যাক্স দিতে হয়। এ দিকে, বিমা বাবদ বাসের খরচ দিনে দিনে বাড়ানো হচ্ছে। জেলা থেকে যে সব বাস কলকাতায় যাতায়াত করে, সেখানে প্রতিনিয়ত পুলিশের হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। কারণে-অকারণে মামলা করা হচ্ছে বাস মালিকদের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন শহর ও শহরতলি এলাকায় বেআইনি অটো, মোটরভ্যান, ট্রেকার, ও অন্য ছোট যাত্রিবাহী গাড়ি চলাচল বেড়ে যাওয়ায় বাসে যাত্রীসংখ্যা কমছে। বাস ভাড়া বৃদ্ধির পরেই জ্বালানির দাম কমে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত বাস শ্রমিকদের সঙ্গে যাত্রীদের গোলমাল বাধছে। জঙ্গলমহলের বাস মালিকদের সমস্যা আবার অন্য রকম। পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়খণ্ড এলাকায় সন্ধ্যার পরে নিরাপত্তার অভাবে বাস চালানো যাচ্ছে না।
বাস মালিকদের এ দিনের আলোচনায় উঠে আসে আরও কিছু বিষয়। তাঁদের বক্তব্য, বাস চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী বেশ কিছু ইউনিয়নের নেতারা শ্রমিকদের টাকা চুরিতে মদত দিচ্ছেন। কারণ, ওই ইউনিয়নের নেতাদের বাস চলাচলের খরচ সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই। বাস মালিকদের আরও অভিযোগ, কোন দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হলে পুলিশ অনেক সময়ে সঠিক ভূমিকা নিচ্ছে না। স্থানীয় কোনও নেতা বা কোনও ক্লাবের উপরে পুলিশই মীমাংসার দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। ফলে সমস্যায় পড়ছেন মালিকেরা। এ ছাড়াও, কোনও দুর্ঘটনার মামলা আদালত পর্যন্ত গড়ালে ভুক্তভোগী মৃতের পরিবারের আর্থিক সাহায্য পেতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। যাতে দ্রুত ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হয়, সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy