বছর উনিশের বধূর শ্লীলতাহানির পরে গ্রাম্য সালিশি করে মিটমাট করা হয়। তারপরও নির্যাতিতার প্রতি কটূক্তি, হুমকি দিতে থাকে অভিযুক্তরা। বারবার প্রকাশ্যে অপমান সহ্য করতে না পেরে ওই বধূ গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন গত শুক্রবার, অভিযোগ তাঁর পরিবারের। বধূকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন তাঁর স্বামী। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই পরিবার অবশ্য পুলিশের কাছে দাবি করেছে, সামান্য ঘটনার জেরে তাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বধূর পরিবার।
সোনারপুরের একটি নার্সিংহোমে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসা চলছে সন্দেশখালির জেলিয়াখালির ওই বধূর। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও অবশ্য পুলিশের কাছে ১৯ ডিসেম্বরের ঘটনার জন্য কোনও লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। বধূর দেওর সোমবার জানান, “বৌদি মৃত্যুর মুখোমুখি, রক্তের জন্য ছোটাছুটি করছি। দাদার দু’হাত পুড়ে গিয়ে প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছেন। আমার বৃদ্ধ বাবাও শয্যাশায়ী। এই অবস্থায় এ ক’দিন থানায় যেতে পারিনি।” যথাশীঘ্র সম্ভব তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন, জানান ওই বধূর দেওর।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, জেলিয়াখালির দু’টি পরিবারের মধ্যে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন গণ্ডগোল চলছিল। বধূর উপর প্রথমবার হামলার অভিযোগ ওঠে গত ২৫ অক্টোবর, কালীপুজোর রাতে। সে দিন পরিবারের অন্যরা বেরিয়েছিলেন ঠাকুর দেখতে, তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে ছিলেন বধূ। অভিযোগ, সে সময়ে প্রতিবেশী পরিবারের কিছু লোক বাড়িতে চড়াও হয়ে নির্যাতন চালায়। পরদিন বধূর পরিবার শ্লীলতাহানির অভিযোগ করে, প্রতিবেশী পরিবারের তরফেও উল্টে ওই বধূর পরিবারের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করা হয়।
থানায় শ্লীলতাহানির অভিযোগ করলেও, সোমবার ওই বধূর স্বামী দাবি করেন, অত্যাচারের তীব্রতা ছিল অনেক বেশি। তিনি বলেন, “আমার স্ত্রীকে বেঁধে রেখে তাঁর উপরে নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি আমার তিন বছরের মেয়েকে ছুঁড়ে ফেলেছিল হামলাকারীরা। ওরা আমার স্ত্রীকে দিয়ে লিখিয়ে নেয়, পুলিশের কাছে অভিযোগ করা যাবে না। সপরিবার এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে।” তরুণীর স্বামীর দাবি, এই ঘটনার পর গ্রাম্য সালিশিতে বসে মাতব্বরেরা সব মিটিয়ে দিয়েছিল বলে তাঁরা আর বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে দরবার করেননি। সে দিন সালিশিতে উপস্থিত ছিলেন, গ্রামের এমন এক প্রবীণ ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “অভিযুক্ত পরিবারের লোকেরা সবার সামনে ক্ষমা চেয়ে নেয়। আমরা দুই পরিবারের মধ্যে একটা বোঝাপড়া করে নিতে বলি।”
কিন্তু বধূর স্বামী ও দেওরের বক্তব্য, এই ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত পরিবার নানা ভাবে কটূক্তি করত ওই তরুণীকে। মহিলার স্বামী এ দিন বলেন, “ওই পরিবার আমার স্ত্রীকে নানা কটূক্তি করত, ভয় দেখাত। তা ছাড়া, ওর উপরে অন্যায়ের কোনও বিচার না হওয়ায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন আমার স্ত্রী।” গত ১৮ ডিসেম্বর দুই পরিবারের মেয়েদের মধ্যে বচসা বাধে। পরদিন ভোরে অগ্নিদগ্ধ হন তরুণী।
সন্দেশখালি থানার ওসি সুরিন্দর সিংহ জানিয়েছেন, “দুই পক্ষের মধ্যে অনেক দিন ধরেই বিবাদ চলছিল। বধূর অগ্নিদগ্ধ হওয়ার বিষয়ে এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ হলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy