নিহত তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর। — ফাইল চিত্র।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করের উপর হামলার আশঙ্কার ‘খবর’ আগেই ছিল বারুইপুর জেলা পুলিশের কাছে ৷ এই বিষয়ে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পক্ষ থেকে জয়নগর থানাকে সতর্কও করা হয় ৷ মাসখানেক আগেই সতর্ক করা হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ৷
সইফুদ্দিন খুনের পরে তাই প্রশ্ন উঠেছে, ‘বার্তা’ পাওয়ার পরেও সতর্ক না হওয়াতেই কি তড়িঘড়ি জয়নগর থানার আইসি রাকেশ চট্টোপাধ্যায়কে বদলি করা হল? যদিও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে একে ‘লোকসভা নির্বাচনের আগে রুটিন বদলি’ বলেই বলা হচ্ছে ৷ বারুইপুর পুলিশ জেলার বেশ কয়েক জন আইসি এবং পুলিশ অফিসারের নির্বাচনের আগে বদলি হওয়ার কথা৷ প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার বদলি করা হয় জয়নগর থানার আইসি রাকেশকে। তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে বারুইপুর গোয়েন্দা পুলিশের আধিকারিক পার্থসারথি পালকে।
সোমবার সকালে বামনগাছি পঞ্চায়েতের বাঙালবুড়ির মোড়ে নমাজ পড়তে যাওয়ার সময় খুন হন সইফুদ্দিন। মসজিদের সিঁড়িতে সবে পা রেখেছিলেন তিনি, এমন সময়ে তাঁর ঘাড়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি চালিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। কিন্তু পালানোর সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় দু’জন ধরা পড়ে যান স্থানীয়দের হাতে। অভিযোগ, সাহাবুদ্দিন নামে তাঁদের এক জনকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। অন্য জন, শাহরুল শেখকে জখম অবস্থায় উদ্ধার করে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে গ্রেফতার করা হয় আনিসুর লস্কর এবং কামালউদ্দিন ঢালি নামে আরও দুই অভিযুক্তকে।
ভাড়াটে খুনি দিয়েই যে সইফুদ্দিনকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়, সে বিষয়ে নিশ্চিত পুলিশ ৷ জয়নগর কাণ্ডে ধৃত শাহরুল, আনিসুর ও কামাউদ্দিনকে শুক্রবার সন্ধেবেলা বারুইপুর থানা থেকে জয়নগর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷ তাঁদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, খুনের দেড় মাস আগে থেকে এই পরিকল্পনা করা হচ্ছিল ৷ আনিসুরই ছিলেন পরিকল্পনার মূল মাথা ৷ তবে অর্থ যোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে উঠে আসছে আরও দু’জনের নাম, তাঁদের মধ্যে একজন সইফুদ্দিনের পরিবারেই সদস্য ৷ যাঁর সাট্টার ঠেক ছিল বলে জানা গিয়েছে ৷ সেই সাট্টার ঠেক বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল সইফুদ্দিনের প্রভাবে ৷
পুলিশ সূত্রের খবর, এ ছাড়া সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন বামনগাছি অঞ্চলের একজন ব্যবসায়ী, যার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল সইফুদ্দিনের হুমকি এবং নানা ‘কর্মকাণ্ডে’ ৷ তবে তাঁরা দু’জনেই ঘটনার পর থেকে পলাতক ৷ তাঁদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ ৷ জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা গিয়েছে আনিসুরের সঙ্গে ‘বড় ভাইয়ের’ যোগাযোগ ছিল ৷ দু’জনেই সিপিএমের কর্মী ৷ বড়ভাই-ই গুলি খুনের জন্য দক্ষ শাহরুলকে আনিসুরের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন৷ গুলি করার পর কিছুটা বাইকে তার পর গ্রামবাসীরা ধাওয়া করলে রাস্তার পাশ দিয়ে ধানক্ষেত ধরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন শাহরুল ৷ তখনই ফোন করে সে আনিসুরকে জানায় যে টার্গেট কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে ৷ ঘটনায় তিন জন ধরা পড়লেও আরও ৭-৮ জন এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আছে বলে জানিয়েছেন বারুইপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি ৷ তাদের সন্ধানে নানান জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলেই পুলিশ সূত্রের খবর৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy