স্বজনপোষণের অভিযোগ শাসক দলের বিরুদ্ধে। প্রতীকী চিত্র।
স্বজনপোষণ, দুর্নীতি ও গোষ্ঠীকোন্দলের অভিযোগে জর্জরিত মগরাহাট ২ ব্লক তৃণমূল। বিধানসভায় বড় ব্যবধানে জয়ের পরেও এই সব অভিযোগে ব্লক এলাকায় তৃণমূল অনেকটাই বিড়ম্বনায় বলে মত রাজনৈতিক মহলের। শাসকদলের অবশ্য দাবি, সবই বিরোধীদের মিথ্যা অভিযোগ।
২০০৭-২০০৮ সাল নাগাদ তৃণমূল মগরাহাট ২ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতি ও কিছু পঞ্চায়েতের দখল নেয়। তারপর থেকে ধারে ধীরে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয় এই এলাকা। সেই সময় থেকে পর পর নানা ঘটনায় এই এলাকা শিরোনামে এসেছে। বাম জমানার শেষ দিকে ২০১১ সালে মগরাহাটের নৈনানপুর গ্রামে বিদ্যুৎ লাইনের হুকিং কাণ্ডে পুলিশের গুলিতে এক গ্রামবাসী মারা যান। গ্রামবাসীর ছোড়া পাথরে মত্যু হয় এক পুলিশকর্মীর। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ২০১২ সালে বিষমদ কাণ্ডে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় বিরোধীরা সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেও এলাকায় তৃণমূলের সংগঠনে তেমন প্রভাব পড়েনি।
তবে দিন যত গড়িয়েছে, ক্রমশ গোষ্ঠীকোন্দল আর দুর্নীতি-স্বজনপোষণের অভিযোগে ব্যাকফুটে গিয়েছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বেআইনি কাজকর্ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ নিয়েও ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে পঞ্চায়েতের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের কারচুপির অভিযোগও রয়েছে একাধিক পঞ্চায়েতে। কোথাও কোথাও বিরোধীদের ভোট দিতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে টানা তিনবারের বিধায়ক নমিতা সাহার বিরুদ্ধেও। তাঁর বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ এবং পুরনো নেতাদের সরিয়ে অযোগ্যদের সামনে নিয়ে আসার অভিযোগও রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় এলাকায় দলের অন্যতম নেতা খইরুল হককে সরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ-সভাপতির পদ সামলেছেন। তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলেরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ক’দিন আগে পুরনো দল কংগ্রেসে ফেরেন খইরুল। তাঁর কথায়, “দলের নিচুতলা থেকে উপরতলা পর্যন্ত দুর্নীতিতে জড়িত। এর প্রতিবাদ করে উচ্চ নেতৃত্বকে একাধিকবার জানিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমি ছাড়াও এই এলাকায় তৃণমূলের অনেক পুরনো কর্মী দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।”
তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএম। গত পঞ্চায়েত ও বিধানসভা ভোটে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। প্রায় ৫৫ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপির ভালই প্রভাব বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপির কর্মী-সমর্থকের সংখ্যা বাড়লেও নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। তা ছাড়া, বুথস্তরে সে ভাবে সভা-সমিতি হচ্ছে না। এলাকার বিজেপি নেতা চন্দনকুমার নস্কর অবশ্য বলেন, “নিয়মিত বুথভিত্তিক বৈঠক করা হচ্ছে। কর্মীদের মনোবল বেড়েছে। সিপিএম এবং তৃণমূলের অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।”
এ দিকে, যে সিপিএম গত পঞ্চায়েতে প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছিল, বেশ কিছু পঞ্চায়েতে প্রার্থীই খুঁজে পায়নি— এখন তাদের মাঠে-ময়দানে দেখা যাচ্ছে মিছিল-মিটিং করতে। মূলত নতুন প্রজন্মের কিছু যুবক নেতৃত্বে আসায় কিছুটা পাল্লা ভারী হচ্ছে সিপিএমের। সিপিএম নেতা চন্দন সাহা বলেন, “তৃণমূলের দুর্নীতির জেরে আমাদের অনেক পুরনো সৈনিক দলে ফিরছেন। তাঁরা বুঝতে পারছেন, তৃণমূল দলটা পুরো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।”
একই ভাবে কংগ্রেসও পায়ের তলার মাটি শক্ত করছে। এক সময়ে মিছিল-মিটিংয়ে হাতেগোনা কয়েক জনকে দেখা যেত। এখন কিছুটা হলেও বেড়েছে সমর্থন। মগরাহাটের কংগ্রেস নেতা জাফর আলি মোল্লা বলেন, “মানুষ আমাদের উপরে ভরসা রেখেছেন। আমরা নিয়মিত সভা-সমিতি করছি। মানুষকে বোঝাচ্ছি নানা দুর্নীতির কথা।”
স্বজনপোষণ, দুর্নীতির অভিযোগ মানতে চাননি বিধায়ক নমিতা সাহা। তিনি বলেন, “সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। দল কোনও ভাবেই স্বজনপোষণ, দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। আর দল ছেড়ে কারা গেল-এল, তাতে কিছু যায় আসে না। আবার কংগ্রেস, বিজেপি ছেড়ে আমাদের দলে যোগ দেবে। দলের নির্দেশ মেনে কিছু দিনের মধ্যে মিছিল-মিটিং শুরুকরা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy