দক্ষিণ দমদমের সুভাষনগর দেশবন্ধু স্কুলের বুথে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে বাম এজেন্টের। ছবি— স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
সকাল থেকেই বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট ও মারধরের একের পর এক অভিযোগ। বাদ যায়নি রক্তপাতও। আক্রান্ত হন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও। দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায় দমদম, উত্তর দমদম ও দক্ষিণ দমদমের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে। বিরোধীদের অভিযোগ, ওই তিন এলাকায় রবিবার নজিরবিহীন সন্ত্রাস হয়েছে। যদিও শাসকদলের মতে, এ সবই হেরে যাওয়ার আগে তাদের অজুহাত। এ দিন দমদমের তিন পুর এলাকার ৮৯টি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ হয়। উত্তর ও দক্ষিণ দমদমে প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং দমদমে ৬২.৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।
এ দিন সকালেই উত্তেজনা ছড়ায় উত্তর দমদমের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে। বুথ দখলের অভিযোগে নির্দল প্রার্থী তথা বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা প্রণব রায় ও তাঁর সমর্থকেরা বিক্ষোভ দেখান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশবাহিনী আসে। প্রণববাবুর সমর্থকদের অভিযোগ, বুথ দখল করে ছাপ্পা দিচ্ছিলেন তৃণমূল সমর্থকেরা। প্রতিবাদ করায় নির্দল প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকদের মারধর করে জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
দক্ষিণ দমদমের ৯ এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডেও তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত দুই নেতা-নেত্রী নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সেখানে অবশ্য গোলমালের অভিযোগ ওঠেনি। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শান্তিতেই ভোট দিয়েছেন বাসিন্দারা।”
এ দিন সকালে উত্তর দমদমে সাংবাদিক-নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে। সেখানকার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের আলিপুর মোড়ের কাছে একটি বুথের বাইরে বহিরাগতেরা জড়ো হচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলে সিপিএম। তাদের অভিযোগ, সিপিএম প্রার্থী শিবশঙ্কর ঘোষ ও দলীয় কর্মীরা প্রতিবাদ জানালে তাঁদের মারধর করা হয়। সেই সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েই আক্রান্ত হন এবিপি আনন্দের সাংবাদিক সুকান্ত মুখোপাধ্যায় ও চিত্রগ্রাহক শ্যামল জানা। তাঁদের বেলঘরিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন দমদমের সাংসদ সৌগত রায়। অন্য একটি ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী সুনীল চক্রবর্তীর অভিযোগ, “নেই-রাজ্যের ভোট হল। প্রার্থী-সহ একাধিক কর্মী আহত হয়েছেন।” যদিও তৃণমূল প্রার্থী বিধান বিশ্বাসের দাবি, “মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা।”
অন্য দিকে, সকাল থেকেই উত্তপ্ত ছিল দক্ষিণ দমদমের ছ’নম্বর ওয়ার্ড। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বহিরাগতদের জড়ো করা ও ছাপ্পা মারার অভিযোগ ওঠে। দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায়। দেশবন্ধু হাইস্কুলের বুথে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। সেখানে সিপিএম প্রার্থী তানিয়া ঘোষকে হেনস্থা ও মারধরের পাশাপাশি বুথের মধ্যে মেরে তাঁর এজেন্টের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তানিয়া বলেন, “সকাল থেকেই ভোট লুট চলছিল। তার প্রতিবাদ করায় পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে চড়াও হয়ে আমাকে মারধর করেছে। আমার চুলের মুঠিও চেপে ধরা হয়েছিল।” পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থীর স্বামী অভী দেবনাথের পাল্টা অভিযোগ, “পরাজয় নিশ্চিত জেনেই সিপিএম প্রার্থী ভোটারদের প্রভাবিত করতে এবং উত্তেজনা ছড়াতে চেষ্টা করেন।”
দক্ষিণ দমদমের ২, ৬, ১১, ২৭, ২৮, ৩৩ ও ৩৪ নম্বর-সহ একাধিক ওয়ার্ডে ছাপ্পা এবং বুথ দখলের অভিযোগ উঠেছে। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থীকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। যদিও সেই প্রার্থীর বিরুদ্ধেও মারধরের পাল্টা অভিযোগ তোলে তৃণমূল। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডেও প্রচুর ছাপ্পার অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগও অস্বীকার করে তৃণমূল।
সিপিএম নেতা পলাশ দাস বলেন, “এই তিন পুরসভার ভোটে এমন সন্ত্রাস আগে হয়নি।” বিজেপি নেতা অরিজিৎ বক্সীর কথায়, “দমদমে আসলে শান্তিপূর্ণ ও অবাধ রিগিং হয়েছে।” কংগ্রেস নেতা তাপস মজুমদারের অভিযোগ, “গণতন্ত্রের নামে প্রহসন দেখল দমদম।” যদিও যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কোথাও কোনও বিক্ষিপ্ত গন্ডগোল হয়ে থাকলে তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।” শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে বলে দাবি করেছেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy