মাতৃহারা: পারুলবালার (ইনসেটে) ছেলেমেয়েরা। নিজস্ব চিত্র
বড় সুখের হচ্ছে না শেষযাত্রা।
লকডাউন পরিস্থিতিতে শেষকৃত্যে আত্মীয়-পাড়া-পড়শিরা বেরোলেন না। শেষযাত্রায় সঙ্গী শুধু হাতে গোনা কয়েক এবং ডোম। ভ্যান রিকশায় চাপিয়ে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হল শতাধিক বছর পেরনো পারুলবালা মিত্রের দেহ। বৃহস্পতিবার রাতে হিঙ্গলগঞ্জের পথের দাবি গ্রামের ঘটনা।
বিকেলের দিকে বাড়িতেই বাধর্ক্যজনিত কারণে মারা যান পারুলবালা। পাড়া-পড়শি, আত্মীয় কেউই আসতে পারেননি। আধ কিলোমিটার দূরে শ্মশানে ভ্যান ঠেলে দেহ নিয়ে যান ছেলেমেয়ে এবং ডোম। তবে এগিয়ে এসেছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্যের ছেলে প্রসেজিৎ নাথ। তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতা সংগ্রামেও ওঁর ভূমিকা ছিল বলে শুনেছি। প্রয়াত হওয়ার খবর পেয়ে মর্মাহত হই। সাধ্যমতো সহযোগিতার চেষ্টা করেছি। তবে করোনা-সংক্রমণের ভয়ে বিশেষ কেউ শ্মশানে যেতে সাহস করেননি।’’ মিত্র পরিবারের পাশে ছিলেন সেলুন কর্মী প্রশান্ত বিশ্বাসও। তাঁর কথায়, ‘‘সন্ধ্যাবেলায় জানতে পারি, আমাদের এলাকার গর্ব পারুলবালার মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে তাঁর অসহায় দুই মেয়ে এবং এক ছেলে ছাড়া বিশেষ কেউ নেই। করোনার ভয়ে প্রতিবেশীদের কেউ এগিয়ে আসেননি। তাই মৃতের এক নাতনি-সহ তিন মহিলা মিলে আমরা ৫ জন কোনও রকমে দাহ কাজ সারি।’’
পারুলবালার স্বামী ভূপেন্দ্রনাথ এবং ছেলে দুলাল ছিলেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরিব মানুষদের চিকিৎসা করতেন। বর্তমানে বাড়িতে থাকেন মেয়ে মীরা ও স্মৃতিকণা। কলকাতা থেকে মাকে দেখতে এসে লকডাউনের কারণে আটকা পড়েছেন ছেলে দিলীপ। তাঁদের কথায়, ‘‘মা স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। বহু মানুষকে নানা ভাবে সাহায্য করেছেন। অথচ স্বাধীন দেশে সরকারি ভাবে বিশেষ কোনও সাহায্য বা স্বীকৃতি পাননি। শেষযাত্রাও হল এমন ভাবে।’’ মেয়েরা জানান, সরকারি প্রকল্পের ঘর কিংবা চাল পাননি। সামান্য কাজকর্ম করে কোনও মতে খেয়েপরে আছেন।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি সুদীপ মণ্ডলের কথায়, ‘‘পারুলবালার বয়স ১০৯ বছর হয়েছিল বলে জানি। উনি স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন বলেও শুনেছি। গান করে অর্থ সংগ্রহ করে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। এমন একজন মহিলার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। লকডাউনের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে লোক সমাগম হয়নি। কী আর করা যাবে!’’ তিনি জানান, পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে পরিবারটিকে সাধ্যমতো সাহায্য করা হবে। তাঁরা যাতে রাজ্য সরকারের সমব্যাথী প্রকল্পের সাহায্য পান, সে ব্যবস্থাও করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy