Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Sundarbans

জলস্তর বাড়ছে সুন্দরবনে

সেই জায়গায় পূর্ব উপকূলে, বিশেষ করে সুন্দরবন এলাকায় প্রতি বছর ৩-৭ মিলিমিটার পর্যন্ত জলস্তর বাড়ছে। এর ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়ে সমুদ্রের জল সহজেই স্থলভাগে ঢুকে পড়ছে।

বহু বার এই পরিস্থিতি তৈরি হয় সুন্দরবনে। গোসাবার পাখিরালয়ে। ফাইল চিত্র

বহু বার এই পরিস্থিতি তৈরি হয় সুন্দরবনে। গোসাবার পাখিরালয়ে। ফাইল চিত্র

প্রসেনজিৎ সাহা
সুন্দরবন  শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৩ ১০:০৫
Share: Save:

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বাড়ছে সমুদ্রের জলস্তর। এর মধ্যে সব থেকে বেশি জলস্তর বেড়েছে সুন্দরবন এলাকায়। ভারতে ২৭টি জায়গায় সমুদ্রের বা নদীর জোয়ার-ভাটার স্তর মাপা হয়। সেই তথ্য থেকে দেখা গিয়েছে, সব থেকে বেশি জোয়ারে জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে সুন্দরবন এলাকায়। পরিবেশবিদদের দাবি, সুন্দরবনের এই জলস্তর বৃদ্ধি যথেষ্ট উদ্বেগের।

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানান, ভারতের পশ্চিম উপকূলে কোচি, মুম্বই এলাকায় বছরে ১-২ মিলিমিটার করে জলস্তর বাড়ছে। সেই জায়গায় পূর্ব উপকূলে, বিশেষ করে সুন্দরবন এলাকায় প্রতি বছর ৩-৭ মিলিমিটার পর্যন্ত জলস্তর বাড়ছে। এর ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়ে সমুদ্রের জল সহজেই স্থলভাগে ঢুকে পড়ছে। দীর্ঘ দিন ধরে সুন্দরবন এলাকার জলবায়ু, মাটি নিয়ে কাজ করা কেন্দ্রীয় লবণাক্ত মৃত্তিকা গবেষণা সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী উত্তমকুমার মণ্ডল বলেন, “সুন্দরবনে রেকর্ড পরিমাণে জলস্তর বাড়ছে। ইংল্যান্ডের লিভারপুলে পার্মানেন্ট সার্ভিস ফর মিন সি লেভেল নামে একটি সংস্থা রয়েছে, যারা সমুদ্রের জলস্তরের তথ্য যাচাই করে। সেই তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে মুম্বই, কোচি, বিশাখাপত্তনমের থেকে অনেক বেশি জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকায়।”

জলস্তর বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে বৃষ্টিপাতও। ফলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালে বিগত কয়েক দশকের রেকর্ড ভেঙে প্রায় ৫০০ মিলিমিটার বেশি বৃষ্টি বেশি হয়েছে সুন্দরবন এলাকায়। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, জোয়ারের সময়ে প্রবল বৃষ্টি হলে সুন্দরবনের নদীগুলির পক্ষে সেই বিপুল জল ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তখনই বাঁধ ভাঙছে, কোথাও বাঁধ উপচে গ্রামে জল ঢুকছে। উত্তম আরও বলেন, “গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে আগামী ২০৭০ সালের মধ্যে সুন্দরবনের ১৩০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

তিনি জানান, এই সমস্যা থেকে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে বেশি করে ম্যানগ্রোভ রোপণ করতে হবে। শক্ত ও পোক্ত নদীবাঁধ তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি, গ্রামে নদীর জল ঢুকলে সেই জল দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও রাখতে হবে। তবে পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধির ফলে সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনভূমি এলাকাও জলমগ্ন হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বে ওই এলাকায় থাকা বন্যপ্রাণী। উত্তমের কথায়, “এই এলাকাগুলিতেও নতুন করে বনসৃজনের উদ্যোগ নিতে হবে।”

পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘বার বার সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বাঁচানোর কথা বলে আসছি আমরা। একমাত্র ম্যানগ্রোভই পারে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে। তাই ম্যানগ্রোভ ধ্বংস না করে আরও বেশি বেশি করে ম্যানগ্রোভ বসাতে হবে। না হলে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা সত্যি হবে।’’ ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক প্রতীক সিংহ বলেন, ‘‘সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে লাগাতার সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে ম্যানগ্রোভ সৃজন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আরও উদ্যোগ করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sundarbans Water Level
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy