Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ছেলেদের হাত থেকে ব্যাটন নিয়ে মহিলারা কাটালেন বারো বছর

পাথরপ্রতিমা ব্লকে অচিন্ত্যনগর পঞ্চায়েতের বিষ্ণুপুর গ্রামের মহিলারা বারো বছর ধরে গ্রামের একমাত্র সর্বজনীন দুর্গাপুজোটি পরিচালনা করে আসছেন।

প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

দিলীপ নস্কর 
পাথরপ্রতিমা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯ ০২:২৯
Share: Save:

ছেলেদের বিবাদ এক ছাতার তলায় এনে দিয়েছিল মেয়েদের। রাজনৈতিক কারণে বছর বারো আগে গ্রামের পুরুষদের মধ্যে বিবাদ তুঙ্গে উঠেছিল। অনিশ্চিত হয়ে পড়ে গ্রামের একমাত্র দুর্গাপুজোটি। তখনই এগিয়ে আসেন মেয়েরা। ছেলেদের হাত থেকে পুজো পরিচালনার ব্যাটন তুলে নেন নিজেদের হাতে। সেই শুরু। তারপর একযুগ কেটে গেল এ ভাবেই।

পাথরপ্রতিমা ব্লকে অচিন্ত্যনগর পঞ্চায়েতের বিষ্ণুপুর গ্রামের মহিলারা বারো বছর ধরে গ্রামের একমাত্র সর্বজনীন দুর্গাপুজোটি পরিচালনা করে আসছেন। প্রতি বছর পুজোর সময়ে সংসারের কাজ সামলে মহিলাদের বেরোতে হয় চাঁদা তোলার কাজে। সেই সঙ্গে ঠাকুর বায়না করা, ডেকরেটরকে বরাত দেওয়া— হাজার একটা ঝক্কি সামলে নেন দশভূজারা।

বছর বারো আগে পুজো বন্ধ হওয়ার মুখে মহিলারা একটি সভা ডেকে সিদ্ধান্ত করেন, যে ভাবেই হোক সর্বজনীন দুর্গোৎসব বন্ধ করা যাবে না। প্রথম দিকে বাড়ির পুরুষদের আপত্তি ছিল। কিন্তু এক সময়ে সেই মেঘ কাটে। মহিলারা হাতে তুলে নেন পুজোর ভার।মহিলা-পরিচালিত ওই পুজো কমিটির সদস্য সংখ্যা এখন চল্লিশ। চাঁদা তোলা হয় ওই এলাকার লক্ষ্মীপুর, কুমারপুর, লক্ষ্মীজনার্দনপুর, কামদেবপুর, পাথরপ্রতিমা বাজার ও গদামথুরায়। এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। অনেকেই নগদ টাকা চাঁদা দিতে পারেন না। বদলে চাল-ডাল, ফল-আনাজ দেন।

বিষ্ণুপুর গ্রামটি পাখিনালা, আঠারোগাছি, মৃদঙ্গভাঙা, শিবুয়া— এই চারটি নদী দিয়ে ঘেরা দ্বীপের মতো। বছর পঁচিশ আগে এ গ্রামে দুর্গাপুজো শুরু। গ্রামের জনসংখ্যা নেহাত কম নয়। এই গ্রাম থেকে প্রায় এক ঘণ্টার হাঁটাপথে সব থেকে কাছের পুজোটি হয় লক্ষ্মীপুর বাজারে। সে সময়ে গ্রামের রাস্তাঘাট খুবই খারাপ ছিল। অল্প বৃষ্টিতেই আধহাঁটু কাদা জমত। ওই কাদা ঠেলে সকলের পক্ষে দূরের পূজামণ্ডপে যাওয়া সম্ভব হত না। ফলে গ্রামে নিজেরা পুজো করার তাগিদ ছিলই। পুজোর পাশাপাশি ক’দিন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও থাকে এখানে। পুজো কমিটির সম্পাদক জ্যোৎস্না মাইতি, সভাপতি সন্ধ্যা ধাড়ারা জানান, ছেলেমেয়েরা দূরের পুজো দেখতে যেতে পারে না। নদীনালা পার হয়ে পুজো দেখতে যাওয়া বড়দের পক্ষেও সব সময়ে সম্ভব হয় না। তাই গ্রামের পুজোটা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ছেলেরা কি পুজো থেকে পুরোপুরি বাদ?

একমুখ হেসে মহিলারা জানালেন, পুজো কমিটিতে কোনও পুরুষ নেই, এ কথা ঠিক। কিন্তু দু’পক্ষের সহায়তাতেই পুজো চলে। রাতে প্রতিমা পাহারা দেওয়া বা বিসর্জনের সময়ে ছেলেদের সাহায্য নিতেই হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Durga Puja 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy